ছিনতাইকারী বানরের হাতে লাখ টাকা!
প্রকাশিত : ২২:২৩, ৩১ মে ২০১৮
ভারতের হিন্দু তীর্থস্থানগুলোতে হাজার হাজার বানর তীর্থযাত্রীদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আগ্রার ব্যবসায়ী বিজয় বানসাল মেয়েকে নিয়ে সবে ব্যাংকে ঢুকতে যাচ্ছিলেন। মেয়ের হাতে ছিল একটা পলিথিন ব্যাগ। ব্যাগে ছিল প্রায় দু`লক্ষ টাকা।
সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতেই তার মেয়ের হাত থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দিল চোর। কয়েক সেকেন্ডের বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে বাবা ও মেয়ে তাড়া করলেন চোরকে।
চেঁচামেচিতে ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছেন ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মীরাও। কিন্তু চোর ততক্ষণে টাকার ব্যাগ নিয়ে ওপরের তলায় পৌঁছে গেছে।
তাকে তাড়া করা হচ্ছে বুঝে সে ব্যাগটি ছিঁড়ে ফেলে অনেকগুলো নোট ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিল।
বানসাল একতলায় নেমে এসে সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে গুনে দেখলেন প্রায় ৬০,০০০ টাকা। অর্থাৎ ১,৪০,০০০ টাকা নিয়ে হাওয়া হয়েছে সেই চোর বানর।
পুলিশও খবর পেয়ে হাজির হল। কিন্তু তারা কোন আইনে এই লুটের ঘটনার মামলা দায়ের করবে, তা বুঝে উঠতে পারে নি।
কারণ, ঐ ছিনতাইকারী তো আর মানুষ নয়। সে একটি বানর।
বিজয় বানসাল বলছেন, "গোটা ঘটনা এত দ্রুত ঘটে গেল, যে কিছুই করতে পারলাম না। সারাজীবনের সঞ্চয় ছিল ওই টাকাটা। এখন তো আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম।"
দু`দিন আগে এরকম বানরের আক্রমণ ও লুটের ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ শুধু ঘটনাটি লিখে রেখেছেন। কারণ এই বানরের বিরুদ্ধে কোন ধারায় মামলা করা হবে, তা বুঝে উঠতে পারছে না তারা।
বানসাল সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছেও আর্জি জানিয়েছেন যদি কিছু ব্যবস্থা করা যায়। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বানরের উৎপাত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
বিশেষ করে বারানসি বা মথুরা-বৃন্দাবনের মতো হিন্দু তীর্থক্ষেত্রগুলিতে হাজার হাজার বানর সেখানকার তীর্থযাত্রী ও নাগরিকদের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলেছে।
২০১৪ সালে মথুরায় গিয়েছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। সেখানকার বানরদের আবার বিশেষ নজর মানুষের চশমার ওপরে। প্রথমে নিরাপত্তার বাহিনী ভেবেছিল মুখার্জীকে চশমা না পড়তে অনুরোধ করা হবে।
পরে অবশ্য রাষ্ট্রপতির ওপরে বানরের সম্ভাব্য হামলা আটকাতে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রশিক্ষিত হনুমান বাহিনী।
উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে মেরঠ অঞ্চলের প্রায় ২৫০০ ভোটযন্ত্র রাখা হয়েছিল এক পরিত্যক্ত কাপড় মিলের স্ট্রং-রুমে।
ঐ পরিত্যক্ত কাপড়-মিলে কয়েকশো বানরের বসবাস। তারা ভোট যন্ত্রগুলো নষ্ট করে দিতে পারে, এই আশঙ্কায় প্রশিক্ষিত হনুমানদের বিশেষভাবে পাহারা দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছিল।
বারানসি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী এলাকা। সেখানকার সব গ্রামকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় ফাইবার অপটিক কেবল দাঁত দিয়ে কেটে দিচ্ছিল বানরের দল।
মথুরা-বৃন্দাবনে বানরের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে গণ-হারে তাদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মথুরার এমপি ও বলিউডের সাবেক গ্ল্যামার-কুইন হেমা মালিনী।
তবে সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের বাইরে ওড়িশা রাজ্যে বানর একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়েছে। একটি বানর বাড়িতে ঢুকে এক শিশুকে `ছিনতাই` করে নিয়ে যায়। পরে ঐ শিশুটির মৃতদেহ পাওয়া যায় একটি কুয়ার ভেতরে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএইচ/এসি
আরও পড়ুন