শেষ মুহূর্তে বাতিল হল মমতার চীন সফর
প্রকাশিত : ১৪:৫৬, ২৩ জুন ২০১৮
শেষ মুহূর্তে বাতিল হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চীন সফর। শুক্রবার রাতেই তার বেইজিং যাওয়ার কথা ছিল। এ দিন বিকালে নবান্নে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও মুখ্যসচিব মলয় দে মুখ্যমন্ত্রীর একটি বিবৃতি পড়ে শোনান। তাতে বলা হয়েছে, ‘গত মার্চে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আমাকে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে চিন যাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি তা গ্রহণ করেছিলাম। শেষ পর্যায়ে এসে বেইজিংয়ে রাজনৈতিক বৈঠকগুলো যথাযথ স্তরে হওয়ার ব্যাপারে চিন সরকারের তরফে কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে সফরের কোনও মানেই হয় না।’
অমিত মিত্র বলেন, ‘আমাদেরও একটা মান-মর্যাদা আছে। সেটাই সর্বাগ্রে মাথায় রাখা হয়েছে।’ এ দিন রাতে চীনের কলকাতাস্থিত উপদূতাবাসের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি চূড়ান্ত করতে চীন আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। যে সময় এই সফর বাতিলের কথা ঘোষিত হয়েছে, তখনও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোর ব্যাপারে চীনের চেষ্টায় কমতি ছিল না। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছিল।’
চিনের এই বিবৃতি দেখে বিস্মিত নবান্নের একাংশ। তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী বিমানে ওঠার কয়েক ঘণ্টা আগেও বৈঠকসূচি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে ‘চেষ্টা’ করা অর্থহীন। কারণ এই ধরনের সফরের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনেক আগেই ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। অর্থমন্ত্রী জানান, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে বিষয়টি জানাতে ফোন করা হয়েছিল। তিনি মঙ্গোলিয়ায় রয়েছেন। বিদেশসচিবের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিদেশমন্ত্রীর প্রস্তাবে ২ এপ্রিল সম্মতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো জুনের শেষে ৯ দিনের সফরসূচি তৈরি হয়েছিল। কলকাতার চিনের উপরাষ্ট্রদূত মা ঝানউ এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, ‘দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব ও কুনমিংয়ের মেয়র বেইজিংয়ে গিয়ে মু্খ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন।’
নবান্নের বিবৃতিতে অবশ্য বলা হয়েছে, ‘বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে চীনের তরফে রাজনৈতিক বৈঠকগুলো যথাযথ স্তরে হবে, এমন কথা নিশ্চিতভাবে বলা হয়নি। বেইজিংয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শুক্রবার বেলা ১২টার মধ্যে চীনের কাছ থেকে এ নিয়ে নিশ্চয়তা চান। তা পাওয়া যায়নি। ফলে সফর বাতিল করা ছাড়া উপায় ছিল না।’
মুখ্যমন্ত্রীর লাগেজ আগেই পৌঁছে গিয়েছে বেইজিংয়ে। নিরাপত্তা অফিসার এবং প্রতিনিধি দলের কয়েকজনও প্রস্তুতি দেখতে চীনে চলে গিয়েছেন। তারপরও কেনও বাতিল হল সফর?
সরকারি সূত্রের খবর, ভারতীয় দূতাবাসের তরফে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হতে পারে। শেষ পর্যন্ত দূতাবাস সেই বৈঠক করাতে পারেনি। রাজ্যের বিবৃতিতে বেইজিংয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের ভূমিকার প্রশংসা করা হলেও নবান্নের কর্তাদের একাংশের মতে, দূতাবাসের ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করানো সম্ভব না হলে তা আগেই নবান্নকে জানানো উচিত ছিল।
অন্যদিকে, বিদেশ মন্ত্রকের যুক্তি, এই ধরনের সফরে কার সঙ্গে বৈঠক হবে, তা সংশ্লিষ্ট দেশই ঠিক করে। অতিথি দেশ বড়জোর অনুরোধ জানাতে পারে। রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, কোনও মুখ্যমন্ত্রীর সফরে বিদেশ মন্ত্রকের সমন্বয়ের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি যখন চীনে গিয়েছিলেন, তখন এস জয়শঙ্কর ভারতের রাষ্ট্রদূত। চীনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে মোদির বৈঠক করাতে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।
বেইজিংয়ের আমন্ত্রণের আগেই কুনমিংয়ে কৃষি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য রাজ্যের কাছে আমন্ত্রণ এসেছিল। দিল্লি সেই অনুমতি দেয়নি বলে নবান্নের দাবি। তবে চীনের ভূমিকাতেও খুশি নয় নবান্ন।
সূত্র: আনন্দবাজার
একে//
আরও পড়ুন