রহস্যে ভরা বিশ্বের প্রাচীনতম রেস্তোরাঁ
প্রকাশিত : ১৮:৫২, ৩ জুলাই ২০১৮
মাদ্রিদের বিখ্যাত প্লাসা মাইয়র স্কোয়্যার প্রায় ৪০০ বছর পুরানো৷ বুলফাইট থেকে শুরু করে ইনকুইজিশন আমলে বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষী এই চত্বর৷ ডয়চে ভেলের সাংবাদিক মেগিন লেই সেখানে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি মাদ্রিদের কেন্দ্রে প্লাসা মাইয়র চত্বরে দাঁড়িয়ে রয়েছি৷ এখানে কত কী যে চলছে! চারিদিকে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে ও সুভেনিরের দোকান৷ অনেকেই জানেন না, যে ধনুকের মতোপথের পেছনে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন রেস্তোরাঁ রয়েছে৷ সঙ্গে এলেই দেখতে পাবেন৷``
প্লাসা মাইয়র-কে ঘিরে পুরানো যুগের অনেক চিহ্ন রয়েছে৷ বেশ কয়েকটি করিডোর ও পাথর বসানো পথ কয়েক`শো বছর আগে তৈরি৷ কোনায় কোনায় গোপন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে৷ তার মধ্যে একটি বিশেষভাবে নজর কাড়ার মতো৷ মেগিন জানালেন, ‘‘এই হলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন রেস্তোরাঁ৷ নাম ‘সোব্রিনো দে বোতিন`৷ স্প্যানিশ ভাষায় এর অর্থ ‘বোতিন-এর ভাইপো`৷ বোতিন পরিবার এই রেস্তোরাঁর আসল মালিক ছিল৷ প্রথমে সরাইখানা ছিল৷ এক ফরাসি দম্পতি সেটি চালু করে৷ ভিতরে গিয়ে দেখা যাক৷``
১৯৩০-এর দশকে গনসালেস পরিবার এই রেস্তারাঁর মালিক হয়৷ তৃতীয় প্রজন্মের আন্তোনিও গনসালেস এখন রেস্তোরাঁর কর্ণধার৷ পারিবারিক ঐতিহ্যই সাফল্যের চাবিকাঠি৷ রেস্তোরাঁর সাজসজ্জার মধ্যে মৌলিক স্টাইলের পাশাপাশি মালিকের ব্যক্তিগত রুচির ছাপও রয়েছে৷
১৯৮৬ সালে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস নির্দিষ্ট কারণেই এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন রেস্তোরাঁর স্বীকৃতি দেয়৷ আন্তোনিও গনসালেস বলেন, ‘‘শর্ত ছিল, একই নামে, একই জাগয়ায়, শুরু থেকে কোনো বিরতি ছাড়াই চালু থাকতে হবে৷ আমরা সেটা হাসিল করতে পেরেছি৷``
প্রতিদিন দুপুর ১টার সময় রেস্তোরাঁ খোলে৷ আন্তোনিও মনে করিয়ে দিলেন, যে রান্নাঘরের নীচে একটি খাবার ঘর এমনকি রেস্তোরাঁর থেকেও প্রাচীন৷ সেই ১৫৮০ সালেও তার অস্তিত্ব ছিল৷ সেখান থেকে একটি ঐতিহাসিক গুহাপথে ঢোকা যায়৷ ঘরটিতে আর্দ্রতা বেশি বলে শুধু ওয়াইনের বোতল রাখা আছে৷ আন্তোনিও মনে করেন, ‘‘সম্ভবত নবম শতাব্দীতে সেই আরব আমল থেকেই প্রতিরক্ষার স্বার্থে এই জায়গাটি কাজে লাগানো হয়েছে৷ আরব নির্মাণশিল্পের ঐতিহ্য অনুযায়ী, মাদ্রিদের পুরানো অংশে সব বাড়ির মধ্যে যোগাযোগ রাখা হতো৷``
উপরে উঠে মধ্যাহ্নভোজের পালা৷ ঐতিহ্যবাহী শুকরের রোস্ট অবশ্যই মেনুতে রয়েছে৷ দীর্ঘদিনের ওয়েটার খাবিয়ের সানচেস তা পরিবেশন করেন৷ ৪০ বছর ধরে কাজ করে তিনিও রেস্তোরাঁর অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন৷ তিনি বলেন, ৫ জন পর্যন্ত এই পদ ভাগ করে খেতে পারেন৷ মেগিন লেই মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘মার্কিন লেখক অ্যার্নেস্ট হেমিংওয়ে এই রেস্তোরাঁর নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন৷ তিনি এতটাই গুণমুগ্ধ ছিলেন, যে ‘দ্য সান অলসো রাইজেস` ও ‘ডেথ ইন দ্য আফটারনুন` বইয়ে তিনি এর উল্লেখ করেছেন৷ আন্তোনিও এখানে হেমিংওয়ে-র সময় সম্পর্কে কী জানেন?``
আন্তোনিও স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘‘তিনি আমাদের খুবই পরিচিত ছিলেন৷ তিনি বোতিন রেস্তোরাঁয় খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন৷ একবার তিনি নিজেই পায়েইয়া রান্না করার চেষ্টা করেছিলেন৷ তবে তার স্বাদ খুব ভালো হয়নি৷ আমার পিতামহ তাঁকে বলেছিলেন, অ্যার্নেস্টো তুমি লিখে যাও আর আমাকে পায়েইয়া রান্না করতে দাও৷``
ডয়চে ভেলের সাংবাদিক মেগিন লেই এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘আমাকে হেমিংওয়ে-র বইয়ের অংশ পড়ে শোনাতেই হচ্ছে, কারণ তিনি সেখানে ঠিক এই পদেরই উল্লেখ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, আমরা বোতিন রেস্তোরাঁয় উপর তলায় মধ্যাহ্নভোজ করলাম৷ এটি বিশ্বের সেরা রেস্তোরাঁগুলির অন্যতম৷ আমরা শুকরের রোস্ট খেলাম ও রিওখা ওয়াইন পান করলাম৷ এই প্রসঙ্গেই গেলাস তুলে ‘সালুদ` বলে বোতিন রেস্তোরাঁর আগামী কয়েক`শ বছরের উদ্দেশ্যে পান করা যাক৷`` সূত্র: ডয়চে ভেলে
এসি
আরও পড়ুন