ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিশুদের সঙ্গে যৌনতায় আগ্রহীদের ফাঁদে ফেলেন যে নারী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:০৮, ১১ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৫:০৮, ১১ জুলাই ২০১৮

ছবি: প্রতীকী

ছবি: প্রতীকী

প্রতি সন্ধ্যায় চেলসি হান্টার (কাল্পনিক নাম) তার সন্তানদের স্কুল থেকে বাসায় এনে রাতের খাবার খাওয়ানোর পর ঘুম পাড়িয়ে তার আরেক জীবন শুরু করেন। পরিচয় গোপন করে স্কুলের বালিকা সেজে বয়স্ক পুরুষদের সঙ্গে ইন্টারনেটে চ্যাট করেন তিনি।

অনলাইনে শিশুদের ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে যৌন ব্যবসা করছেন, অন্ধকার জগতের সে গল্প তিনি বিবিসিকে বলেন।

যৌনকর্মের উদ্দেশ্যে ১৪ বছর বয়সী একটি বালিকার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল আব্দের রফ কুতেইনেহ`র। ৭৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি দু`সপ্তাহ আগে অনলাইনে বন্ধুত্ব করেন ওই বালিকার সঙ্গে। এ সময়ের মধ্যে শতাধিক অশালীন মেসেজ পাঠান ওই বালিকাকে।

একটি রেল স্টেশনে বালিকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু তার বদলে সেখানে ৩৫ বছর বয়সী চেলসি হান্টারকে পান তিনি। হান্টারের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ ছিল যেসবের ভিত্তিতে উইন্ডসরের কুইতেনেহ`কে প্রেফতার করে পুলিশ।

কেন্টের বাসিন্দা চেলসি হান্টার প্রায় এক বছর ধরে দ্বৈত জীবনযাপন করছেন। সন্তানদের লালন পালন আর ঘরের কাজে পার হয় তার দিন। রাতে তার পরিচয়, ১৪ বছর বয়সী ক্লো।

হান্টার ও তার স্বামী ‘শ্যাডো হান্টার’ নামের একটি সংঘের সদস্য। এই সংঘের সদস্যরা অনলাইনে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করতে চাওয়া পুরুষদের সঙ্গে কমবয়সী মেয়ে সেজে কথা বলে এবং তাদের সঙ্গে দেখা করতে বিভিন্ন জায়গায় যায়।

সংগ্রহ করা প্রমাণ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অনেকক্ষেত্রে পুলিশ হাতেনাতেও ধরতে সক্ষম হয় খদ্দেরকে।

যৌন কাজে শিশু ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে চলা তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে এই ধরনের সংঘের কার্যক্রম সাধারণত পুলিশ সমর্থন করে না।

শ্যাডো হান্টারের সংগ্রহ করা তথ্য প্রমাণে মূলত অভিযুক্ত ব্যক্তির অনলাইন চ্যাট হিস্ট্রি বা ভিডিও লগ হয়ে থাকে।

চেলসি হান্টার বলেন, ‘অনলাইনে আপনি যতক্ষণ না পর্যন্ত ছদ্মবেশ নিচ্ছেন ততক্ষণ আপনি জানতেও পারবেন না কত ধরণের যৌন শিকারী এখানে ওৎ পেতে রয়েছে।’

২০`এর কোঠা থেকে ৭০`এর কোঠায় হয়ে থাকে খদ্দেরদের বয়স। চেলসি হান্টার বলেন, ‘যারা পুলিশের কাছে ধরা পড়েন তাদের পরিবারের জন্য খুবই লজ্জাজনক এক পরিস্থিতি তৈরি হয়। কারণ শুরুতেই পুলিশ তাদের বাসা থেকে ওই ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন, কম্পিউটারের মত সব যোগাযোগের যন্ত্র জব্দ করে, যা ব্যক্তির পরিবারকেও অসম্মানজনক অবস্থায় ফেলে।’

আগস্ট থেকে শ্যাডো হান্টারে যাোগ দেওয়ার পর ৫০ জনেরও বেশি পুরুষের সঙ্গে, যারা শিশুদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করতে চায়, অনলাইনে চ্যাট করেছেন ওই নারী। তিনি জানান, তার সংগ্রহ করা প্রমাণ যেন আদালতে গ্রহণযোগ্য হয় সে জন্য বেশকিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় তাকে।

‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমারা কাউকে অনুরোধ পাঠাই না; তারা আমাদের সঙ্গে বন্ধু হতে চায়।’

‘সামাজিক মাধ্যমে বন্ধু হওয়ার পরও আমরা শুরুতে তাদের কোনো মেসেজ পাঠাই না। প্রথমেই আমরা তাদেরকে আমাদের (ছদ্ম)বয়স জানাই এবং তাদের কাছে জানতে চাই তারা এতে খুশি কি-না।’

‘নিয়ম অনুযায়ী আমরা স্বাভাবিকভাবেই চ্যাট করি তাদের সঙ্গে। তারাই আলোচনা যৌন সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকে এবং অধিকাংশ সময় দেখা করতে চায়। এটা তাদের সিদ্ধান্ত, আমরা কখনো উস্কানি দেই না।’

বিবিসিকে সেসব চ্যাটের বেশকিছু স্ক্রিনশট দেখান চেলসি হান্টার, যার অধিকাংশই প্রকাশের যোগ্য নয়। বিভিন্ন সময় শ্যাডো হান্টারের কাজের এই প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো।

তবে শ্যাডো হান্টার মনে করে, যারা এভাবে শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে চায়, তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের সাহায্য প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটি পুলিশের কাজ, কিন্তু তাদেরও বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এমনকি তারাও আমাদের কাছে স্বীকার করেছে যে আমরা যে পদ্ধতিতে কাজ করি সেটি তাদের পক্ষে পরিচালনা করা সম্ভব নয়।’

‘এসব লোকেরা একটি শিশুকে যে ধরণের মেসেজ পাঠায় সেটি তার শৈশব ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতে এই ধরণের মানুষের বিরুদ্ধে পুলিশের যথেষ্ট কার্যক্রম নেই। আমরা যে সব মাধ্যম ব্যবহার করি তারা তা ব্যবহার করে না ‘

‘এই অপরাধের বিরুদ্ধে আমি যদি কোনো ভূমিকা রাখতে পারি তাহলে আমি তাই করবো, সেটি পুলিশের ভালো লাগুক আর না লাগুক।’

সূত্র: বিবিসি

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি