‘ঠান্ডাযুদ্ধ শেষ, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার নতুন দিনের সূচনা’
প্রকাশিত : ১২:০৮, ১৭ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১২:১৫, ১৭ জুলাই ২০১৮
যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়েনের (রাশিয়া) মধ্যে চলা দীর্ঘ ঠান্ডাযুদ্ধের অবসান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুধু তাই নয়, দুই দেশের মধ্যে শত্রুতা বয়ে আনতে পারে এমন কোনো ইস্যু বিদ্যমান নেই বলেও জানান তিনি। আর এর জের ধরেই বিশ্বের ক্ষমতাধর দুই নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন, ওয়াশিংটন ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও উষ্ণ হবে।
গত সোমবার হেলসিংকিতে দুই নেতা বৈঠকে মিলিত হন। তাদের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ, সামরিক বাহিনী ও ক্ষেপনাস্ত্রের বিষয়টি উঠে আসে। এসয় পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে মতবিরোধের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। স্নায়ুযুদ্ধ ছিল অতীতের একটি বিষয়। বিশ্বের বর্তমান অবস্থা আকস্মিকভাবে পরিবর্তন হয়েছে। এর আগে ট্রাম্প তার পূর্বসূরিদের একহাত নিয়েছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ তার পূর্বসূরিরা, বোকার মতো রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন।
এদিকে দুই নেতার বৈঠকের পরই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রশংসা করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনা সরাসরি, সুস্পষ্ঠ, গভীর ও কার্যকরী ছিল। একটি কার্যকরী আলোচনা কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার জন্যই নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্যই মঙ্গলজনক।’
সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, দুই রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস,আন্তর্জাতিক অপরাধ, অর্থনীতি ও জলবায়ু মোকাবেলায় দুই রাষ্ট্রই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সাইবার নিরাপত্তা ও কাউন্টার টেরোরিসম মোকাবেলায় বর্তমানে দুই রাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করছে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দুই রাষ্ট্রের বিশ্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে।
এদিকে সিরিয়া ইস্যুতে দুই রাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করতে পারে জানিয়ে পুতিন বলেন, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনয়নের ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। ট্রাম্পও তখন সে কথায় সায় দেন। এসময় ট্রাম্প বলেণ, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র হাজার হাজার মানুষের জীভন বাঁচাতে পারে। এদিকে ইসরায়েল ও সিরিয়া সীমান্তের শান্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারেও দুই নেতা একমত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলা ভিন্ন বিশ্বাস আর মতাদর্শের সংঘর্ষকেই স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধ শব্দটি আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কুটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হতো। এই দুটি দেশ কখনো একে অপরের সাথে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, কিন্তু এই দীর্ঘ সময় তারা নিজ নিজ রাষ্ট্রের আদর্শ স্থাপনের জন্য পরোক্ষভাবে লড়াই করে গেছেন।
মার্কিন-সোভিয়েত স্নায়ু যুদ্ধের সময় বিশ্ব স্পষ্টত বিরোধিতা পূর্ণ দুটি ব্লক এ বিভক্ত ছিল এবং দুটো ব্লকের আন্তর্জাতিক সম্পর্কও সংঘর্ষমূলক। তবে ১৯৯০ এর দশকের ইস্টার্ন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কমুনিসম এর পতন, বার্লিন ওয়াল ধস, আর সবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর আপাতত বিশ্বে আর স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। তবে সিরিয়া ইস্যুতে আবারও স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দেয় দেশদুটি, যদিও দেশ দুটির নেতারা বলছেন স্নায়ুযুদ্ধ আপাদত শেষ। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আগের যেকোন সম্পর্কের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।
সূত্র: আলজাজিরা
এমজে/
আরও পড়ুন