ইমরানের বিরুদ্ধে রেহামের যত অভিযোগ
প্রকাশিত : ১২:০৯, ৩০ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১২:২১, ৩০ জুলাই ২০১৮
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পথে তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই)। দলটির নেতা সাবেক ক্রিকেট কিংবদন্তী ইমরান খান দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এটি অনেকটাই নিশ্চিত। ১৪ আগস্ট দেশটির প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই হবে প্রধানমন্ত্রীর শপথ।
ইমরান খান যখন মসনদে পা রাখায় ব্যস্ত তখন তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই যাচ্ছেন তার স্বাবেক স্ত্রী রেহাম খান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক প্লেবয়কে ধুয়ে দিচ্ছেন রেহাম। সর্বশেষ ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেহাম বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পাকিস্তানের সেনবাহিনীর জুতো পালিশের লোক ছিল সেটি তারা পেয়ে গেছেন, সেই ব্যাক্তিটি আর কেউ নয় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া ইমরান খান।
তিনি বলেন, তিন তিনটে বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ ইমরান খানকে হিরো বানিয়েছে।
রেহাম খান এও বলেছেন, তিনি আগে থেকেই জানতেন ইমরান প্রধানমন্ত্রী হবেন। কারণ দু’বছর আগেই সেই পরিকল্পনা হয় সেনাবাহিনীর তরফে।
রেহামের ভাষ্য খেলা আর দেশ চালানো এক জিনিস নয়, সেটি সাবেক প্লেবয় দায়িত্ব নেওয়ার পরই টের পাবেন। তিনি পাকিস্তানের নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, খাইবার পাখতুনখাওয়া, লাহোর ও পাঞ্জাবে এমন সব প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে, যারা জীবনে কখনো হারেননি। সেখানে ইমরানের দলের অপরিচিত প্রার্থীদের জয় হয়েছে।
৯২’র বিশ্বকাপ জয়ী পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ইমরান খান ১৯৯৫ সালে বিয়ে করেন ব্রিটিশ ধনকুবের জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমিমাকে। সেই সংসারে দুই সন্তান আসে। ২০০৪ সালে দু’জনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ইমরান। বিয়ে করেন সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক রেহাম খানকে। ১০ মাসের মাথায় তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বুশরা মানেকা নামে একজন আধ্যাত্মিক নেত্রীকে বিয়ে করেন ইমরান খান। মাস দু-একের মধ্যে সে বিয়েরও ইতি ঘটে।
রেহামের যত অভিযোগ
ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী রেহাম খানের আত্মজীবনীতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। বইটির কিছু অংশ ফাঁস হওয়ার পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যদিও এর ঢেউ নির্বাচনে খুব একটা লাগেনি।
পাকিস্তানের নির্বাচনের আগে তাঁর বই প্রকাশ ইমরানের ভাবমূর্তিতে কোনো দাগ লাগাতে পারেনি। সেই প্রশ্নের জবাবে রেহাম খানের ভাষ্য, উপমহাদেশে এ ধরনের যৌন কেচ্ছা কোনো পুরুষের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে পারে না। অথচ কোনো মেয়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটলে ফল হয় ভিন্ন।
রেহামের অভিযোগ, ইমরান খান একজন ভণ্ড এবং মিথ্যাবাদী। এছাড়া তিনি রোজা রাখেন না এবং নামাজও পড়ে না বলে অভিযোগ তার।
রেহাম দাবি করেন, পাঁচজন বিবাহিত নারীর সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে ইমরান খানের ঔরসজাত পাঁচ সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয়ও আছে। ওই নারীরা তাদের বিয়ে টিকিয়ে রাখতে কখনো তা প্রকাশ করেননি।
নারী রাজনৈতিক কর্মীর সঙ্গে কেলেঙ্কারি-
গত বছরের মাঝামাঝিতে ইমরানের দল পিটিআইয়ের এক নেত্রী ও জাতীয় পরিষদের সদস্য আয়েশা গুলালাই অভিযোগে করেন, ইমরান তাকে ‘অশোভন’ খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠায়। এ অভিযোগ এনে সে নারী পিটিআই ছাড়েন। এ নিয়ে পাকিস্তানের মিডিয়ায় নানা রসাত্মক খবরও প্রকাশিত হয়।
তবে ইমরান সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) আয়েশাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
ইমরানের প্লেবয় জীবন
যুক্তরাজ্যে থাকার সময় ইমরান ক্রিকেটেও তার প্রতিভা প্রকাশ করেন। ইংল্যান্ডের সাসেক্স টিমে তিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। পাশাপাশি আনন্দ-ফুর্তিতে গা ভাসিয়ে দেন। নারীদের নিকট অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন।
তারুণ্য থেকেই ইমরানের গ্ল্যামার প্রকাশিত হয়। হ্যান্ডসাম পুরুষ বলতে যা বোঝায়, তিনি যেন তাই ছিলেন। আর তারুণ্যেই তিনি পাকিস্তান ছেড়ে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। লন্ডনের সমাজে লেডিকিলার হিসেবেই খ্যাত ছিলেন ইমরান। লন্ডনের বিভিন্ন ক্লাবে ইমরান যাতায়াত করতেন। ধবধবে সাদা বান্ধবীদের পাল্টে নিতেন প্রায়ই। ড্যান্স ফ্লোরে ইমরানের পদচারণা ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এক সময় ট্র্যাম্প নামে একটি নাইট ক্লাবই যেন তার বাড়িঘর হয়ে ওঠে।
তেমনই এক বিনোদন ক্লাবে ইমরান খান ১৯৮৬ সালে পরিচিত হন ধনী বাবার কন্যা সিতা হোয়াইটের সঙ্গে। তার বাবা ছিলেন গর্ডন। তিনি পরবর্তীতে লর্ড উপাধি পান। এরপর কিছুদিন তার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল ইমরানের। তার সঙ্গে ইমরান খানের এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। টায়রিয়ান নামে সে কন্যার পিতৃত্ব অস্বীকার করেছিলেন ইমরান। পরে অবশ্য ১৯৯৭ সালে আদালতের এক আদেশে ইমরান খানকেই পিতৃত্বের দায়িত্ব নিতে হয়।
প্রায় এক দশক পর ইমরান খানের সঙ্গে পরিচয় হয় জেমিমা গোল্ডস্মিথের। তিনি আরেক ধনকুবেরের কন্যা। ১৯৮৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান নারীসঙ্গকে অত্যন্ত ভালোবাসেন বলে জানান। তবে এজন্য যুক্তরাজ্যই উপযুক্ত বলে তিনি স্বীকার করেন।
১৯৯২ সালে এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য বিষয়টিকে অস্বীকার করেন ইমরান। তিনি নিজের প্লেবয় ইমেজকেও অস্বীকার করে বলেন, আমি নারী কোনো অসচ্চরিত্র ব্যক্তি নই। আমি একা পুরুষ হওয়ায় মানুষ নানা কথা বলে।
১৯৯৫ সালে ইমরান বিয়ে করেন ব্রিটিশ ধনকুবের জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমিমাকে। ২০০৪ সালে দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ইমরান। বিয়ে করেন টেলিভিশন উপস্থাপক রেহাম খানকে। ১০ মাসের মাথায় তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বুশরা মানেকা নামে একজন আধ্যাত্মিক নেত্রীকে বিয়ে করেন ইমরান খান। মাস দু-একের মধ্যে সে বিয়েরও ইতি ঘটে।
লন্ডনে যারা ইমরান খানকে দেখেছেন, তাদের পক্ষে ইমরানের পরবর্তী জীবনকে বিশ্বাস করা কঠিন বলেই জানিয়েছে ডেইলি মেইল। অনেকটা যেন বিপরীত চরিত্রেই রূপান্তর ঘটে ইমরানের!
ক্রিকেট থেকে রাজনীতির মঞ্চে
ইমরানের পাকিস্তানের জীবনও কম বর্ণাঢ্য নয়। পাকিস্তানের অন্য সব রাজনীতিবিদ থেকে ইমরান খান ভিন্ন। তিনি রাজনীতিতে নামার আগে ক্রিকেটার হিসেবে একজন ‘জাতীয় বীর’ হয়ে ওঠেন। এরপর ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেন ইমরান।
তিনি পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক ছিলেন। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। তার অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয় করে।
ক্রিকেটের মূলধনকে রাজনীতির মূলধনে রূপান্তর প্রায় অসম্ভব একটি কাজ ছিল। ইমরান খানকে এজন্য দীর্ঘ দুই দশক অন্ধকারের মাঝে কাটাতে হয়েছে। আশার আলো দেখার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময়।
ক্রিকেটার হিসেবে সাফল্যের মাঝেও তিনি এক পর্যায়ে সব ছেড়ে লন্ডনে স্থায়ী হন। অক্সফোর্ডে পড়াশেনা করেন। এরপর পাকিস্তানের খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ১৯৯২-সালের বিশ্বকাপের আগে পাক বোর্ড এবং সবার অনুরোধে ফিরে এসে দলের দায়িত্ব নিয়ে পাকিস্তানকে জিতিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপ।
/ এআর /
আরও পড়ুন