আরেকটি ‘ইরাক আক্রমণ’ হতে না দেওয়ায় কাল হলো টিলারসনের
প্রকাশিত : ১১:০১, ২ আগস্ট ২০১৮
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন রেক্স টিলারসন। দক্ষতা-যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মিশেলে অসাধারণ হয়ে ওঠা সাবেক কূটনীতিক টিলারসন বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে নিয়েছিলেন বেশকিছু পদক্ষেপও। তবে দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্তি শেষ না হতেই তাকে সরিয়ে ইহুদি অনুগত মাইক পম্পেইকে ক্ষমতায় বসান ট্রাম্প।
টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়া ঘটনায় সে সময় রিপাবলিকানসহ দেশটির গণমাধ্যম ও বিরোধীদল প্রশ্ন তোলেন। তবে তাদের এমন প্রশ্নের কারণ হিসেবে ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয়ে টিলারসনের মতবিরোধকেই দায়ী করা হয়। তবে এবার এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। সৌদি আরব ও আরব আমিরাত মিলে কাতারে যৌথ হামলার যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা থামিয়ে দিয়েছিলেন টিলারসন। এর পরই টিলারসনের উপর ক্ষুব্ধ হন মার্কিন প্রশাসন। বিশেষ করে দেশটির অস্ত্র ব্যবসায়ীদের রোষানলেও নাকি পড়তে হয়েছে মার্কিন এই কূটনীতিককে।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা সংবাদের ওয়েবসাইট ইন্টারচেপ্ট জানায়, গত বছরের জুনে কাতারে হামলার পদক্ষেপ নেয় সৌদি আরব ও আরব আমিরাত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সৌদির সেনারা আরব আমিরাতের সহায়তায় কাতারে প্রবেশ করে রাজধানী অবরোধের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। তবে সৌদির গুয়ার্তেমি সিদ্ধান্ত আটকে দেন টিলারসন। তার প্রচেষ্টার ফলেই বন্ধ হয় সৌদি আগ্রাসন।
এদিকে সৌদি আরব কাতারের আমির শেখ তামিক বিন হামাড আল থানিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছিল বলেও জানিয়েছে ইন্টারচেপ্ট। এদিকে কাতার সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যার নাম আল উদেইদ। সেখানে ১০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে। কাতার আক্রমণকালে ওই সেনাদেরও সহায়তা চেয়েছিল সৌদি।
সৌদি আরব কাতার আক্রমণ করলেও পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রকেই যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে সেটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন রেক্স টিলারসন। আর ইরাক যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি যে খুব ভয়ানক ছিল সেটিতো কূটনীতিক হিসেবে তার নখদর্পণে থাকার কথা। এর পরই রেক্স টিলারসন সৌদি যুবরাজ প্রিন্স সালমানের সঙ্গে আলোচনা করেন। পাশাপাশি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জ্যামস ম্যাটিসকে ওই হামলার ভয়াবহ ক্ষতির কথা তুলে ধরেন। টিলারসনের চাপের কারণেই শেষ পর্যন্ত কাতার আক্রমণ থেকে পিছু হঠে সৌদি আরব। টিলারসনের চাপ উপেক্ষা করে কাতারে হামলা চালানো হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক তলানিতে ঠেকতে পারে এমন আশঙ্কায় আগ্রাসনের দিকে পা বাড়ায়নি প্রিন্স সালমান।
টিলারসনের এমন পদক্ষেপে খুশি হতে পারেনি প্রিন্স সালমান ও আরব আমিরাতের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন জায়েদ। জায়েদের হোয়াইট হাউজে শক্ত লবিং আছে, এমন কথা হরহামেশাই শুনা যায় মধ্যপ্রাচ্যে। আর তার লবিংয়ের কারণেই যে টিলারসনকে সরিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জায়েদ দীর্ঘ দু যুগেরও বেশি সময় ধরে কাতারের আমিরের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে আসছে।
এরই অংশ হিসেবে ১৯৯৬ সালে কাতারে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায় কিছু উচ্ছৃঙ্খল সদস্য। আর এর পেছনে যে জায়েদের হাত আছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত কাতারের রাজপরিবারটি। তাই কাতারকে শায়েস্তা করতে টিলারসনকে সরানোর জোর চেষ্টা করেছে জায়েদ। অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, টিলারসনকে সরানোর সপ্তাহখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন প্রিন্স সালমান। টিলারসনকে সরাতে তিনিও জোর প্রচেষ্টা চালান। এই লক্ষ্যে ট্রাম্পসহ তার প্রশাসনের বেশ কয়েকজন লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পর আর গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়নি টিলারসন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে তার যে তিক্ততা চলছিল তা মোটামুটি নিশ্চিত। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাতারে অবরোধ করার পরই, তার বিরোধীতা করেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস পোষণের অভিযোগ তুলে, যেটা পছন্দ হয়নি টিলারসনের।
এমজে/
আরও পড়ুন