ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ডয়েচে ভেলের বিশ্লেষণ

রাহুলের মসনদে বসার চেষ্টা, শেষরক্ষা হবে কি?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:০৯, ২৭ আগস্ট ২০১৮

প্রবাসী ভারতীয়রা ভারতের আসন্ন সংসদীয় নির্বাচনে এবার ভোট দিতে পারবেন, তাও আবার বিদেশে বসে৷ তাই ভোটের রাজনীতিতে নিজ দলকে আরো শক্ত করতে সম্প্রতি চারদিনের জার্মানি ও ব্রিটেন সফর শেষ করলেন রাহুল গান্ধী৷   

রাহুল গান্ধী জার্মানিতে আসছেন খবর পেয়ে সিদ্ধান্ত নেই ডয়চে ভেলের জন্য একটা সাক্ষাৎকার নেবো৷ রাহুলের হামবুর্গের ব্রুসিরাস সামার স্কুলে আর বার্লিনে ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেসের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল৷ সেইমতো ওভারসিজ কংগ্রেসের মুখপাত্র হরদীপ সিং এবং রাভিনদর সিং-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম৷

কথা ছিল, বার্লিনে আসার পর, অর্থাৎ ২৩ আগস্ট সকালে, ডয়চে ভেলেকে একটি একান্ত সাক্ষাৎকার দেবেন রাহুল৷ ইন্টারভিউটা হবে সোনিয়া তনয় যেখানে উঠবেন, অর্থাৎ আডলন হোটেলেই৷ সঙ্গে সঙ্গে হোটেলের গ্রন্থাগার ‘বুক` করা হলো৷

বই-পত্রের মাঝেই ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতির সাক্ষাৎকার নেবো আমি৷ দু`জন ক্যামেরাপারসন, হিন্দি ও উর্দু বিভাগ থেকে ওঙ্কার আর আদনান, সঙ্গে আমি - সবাই তৈরি৷ কিন্তু বিমান ছাড়ার মাত্র তিন ঘণ্টা আগে খবর পেলাম - শুধু ডয়চে ভেলে নয়, কোনো টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গেই নাকি কথা বলবেন না রাহুল৷ তাহলে?

রাজীবের ছেলে, ইন্দিরা গান্ধীর নাতি এত কাছ থেকে চলে যাবেন, একবার দেখবও না? তাও আবার হয় নাকি? অগত্যা ক্যামেরাপারসন, ওঙ্কার-আদনানকে ছাড়াই রওনা দিলাম রাজধানীর পথে৷

সে যাই হোক, ইন্টারভিউ পাবো না বলে মেজাজটা ভালো ছিল না৷ কিন্তু ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবরের কথা মনে পড়ে গেল, হঠাৎই...৷

সেদিন কলকাতা শহরে প্রায় রায়ট লাগে লাগে অবস্থা৷ ইন্দিরা গান্ধী নিহত - এ খবর চাউর হওয়ার পর পরই আমাদের স্কুল ছুটি হয়ে যায়৷ কোনোরকমে বাড়ি ফিরে দেখি, মা অঝোরে কাঁদছে৷ কিন্তু কেন? বাংলাদেশে আমার নানা বাড়ির লোকেরা বরাবরই কংগ্রেসকে সমর্থন করতেন আর বাবার দিকের সবাই ছিলেন বামপন্থি আদর্শে উদ্বুদ্ধ৷ তাই শ্বশুড়বাড়িতে একরকম একাই হয়ে গিয়েছিলেন মা৷ তাই বলে এত কান্না? ইন্দিরা গান্ধী তো আমাদের কেউ হন না!

তখন বুঝিনি৷ এ ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে মায়ের প্যারালাইসিস হয়ে যায়, তারপর কয়েক বছর পর মৃত্যু৷ তাই কারণটা জিজ্ঞাসাও করা হয়নি কখনও৷ তবে এখন মনে হয় মা হয়ত কোনো এক অশনিসংকেত পেয়েছিলেন তখনই৷ ইন্দিরার পর রাজীবের মৃত্যু, কংগ্রেসের মধ্যে ভাঙন, বাবরি মসজিদকে ঘিরে উত্তেজনা, গোধরা, বিজেপির ক্ষমতায় আসা, উন্নয়ন থেকে দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের দূরে রাখা - সবটাই তো আমাদের সামনে ঘটেছে৷

দিল্লির এক সংস্থা এডিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির এক হাজার কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে৷ অবশ্য এর জন্য ৭১০ কোটি টাকা দলের খরচ হয়েছে৷ ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে বিজেপির আয় ৮১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে৷

অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠের তোপের মুখে এককালীন ক্ষমতাধর কংগ্রেসরা বিশেষ কিছু করতে পারেনি৷ দীর্ঘদিন যাবৎ রাহুলের সমালোচনাও তো কম ছিল না - রাজনীতিতে অপরিপক্ক, ‘পাপ্পু` কত না নাম ছিল তার৷ মোদীর ‘ক্যারিসমা`-র সামনে বার বারই প্রশ্ন উঠছিল রাহুলের গ্রহণযোগ্যতাকে ঘিরে৷ তার ওপর রাজনৈতিক ক্ষমতা যে সরকারের হাতে থাকে, তার বিরোধিতা করাই ছিল রাহুলদের মূল কাজ৷

সত্যিই তো, ভারতে একের পর এক নারী ধর্ষণ, ধর্মের নামে বাড়তে থাকা গণপিটুনি, প্রবল বেকারত্ব, জিএসটির ফলে ক্ষুদ্র ও মধ্যম শ্রেণির ব্যবসায়ীদের দুরবস্থা, বিমুদ্রাকরণ, দুর্নীতি - এত কিছুর পরও দেশে এখনও বিজেপির রমরমা৷  নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করতে করতে নিয়ে গেছেন সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷

 আজও তাদের হাতে ভারতের প্রায় ১৯টি রাজ্য৷ তাই আগামী নির্বাচনে জিততে না পারলে সংঘ পরিবারের `হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান`-এর স্বপ্নপূরণ হতে আর দেরি নেই৷ তাই জোটসঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস, থুড়ি ‘শাহজাদা` নিজে এসে দেশের হাল না ধরতে পারলে বিপদ আসছে বৈকি! তার এই জার্মানি সফরও যে মসনদে যাওয়ার লক্ষ্যেই৷

কিন্তু শুধু বর্তমান সরকারের বিরোধীতা করলেই যে নির্বাচনে জেতা যায় না - সেটা বোধ হয় হালে বুঝতে পেরেছিলেন রাহুল৷ তাই দেশের হতাশাগ্রস্ত যুবক, কৃষক, সাধারণ মানুষকে শান্তি, অহিংসা ও ভ্রাতৃত্বের পথে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন তিনি জার্মানিতে৷

অবশ্য বার্লিনে আসার আগেই হামবুর্গের ব্রুসিরাস সামার স্কুলে দেওয়া রাহুলের বক্তব্যকে কটাক্ষ করে বিজেপি৷ হবে না? রাহুল যে বলেছিলেন, বেকারত্বের কারণে অল্প বয়সি ভারতীয়রা জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এ যোগ দিচ্ছে৷ বলেছিলেন ভারতে নারীদের একটা বড় অংশ অরক্ষিত, এ কথাও৷

তার বক্তব্যের সমালোচনা যা-ই হোক না কেন, রহুলকে সরাসরি একটা প্রশ্ন করার লোভ সামলাতে পারলাম না৷ ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেসের অধিবেশনে একেবারে প্রথম সারিতে বসার সুযোগও পেয়ে গেলাম৷ এমনকি দর্শকের আসন থেকে প্রথম প্রশ্নটাও করলাম আমি৷

বললাম, ‘‘তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা, নারীর ক্ষমতায়ন, সাধারণের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন, হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন রোধ করা - জোটসঙ্গীর সাহায্য না পেলে এ সব কীভাবে করবেন আপনি? শুধু বিজেপি আর আরএসএস-এর বিরোধীতা করে তো হবে না, তাই না?``

রাহুল বললেন, ‘‘কংগ্রেস শুধু মুসলমানদের নয়, হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-খ্রিষ্টান সকলের জন্য৷ আমার বিশ্বাস, ভারতের সমস্ত নাগরিকদের মধ্যে কংগ্রেসের মতাদর্শ, কংগ্রেসের বীজ লুকিয়ে আছে৷ আমাদের কাজ হবে, তাদের কাছে টেনে আনা৷``

চীনের সঙ্গে ভারতের তুলনা করে তিনি বললেন, ‘‘প্রতি ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ হাজার তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে চীন৷ অথচ ভারতে ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪৫০ জন তরুণকে চাকরির সন্ধান দিতে সক্ষম হচ্ছে সরকার৷ তারা একদিকে লম্বা লম্বা ভাষণ দিচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ সম্প্রদায় তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে আর আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন আমাদের চাষি ভাইয়েরা৷``

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

 

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি