বিবিসির বিশ্লেষণ
যে কারণে ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ তহবিল বন্ধ করলেন ট্রাম্প
প্রকাশিত : ২৩:১৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ০৯:৫৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয়ে পড়ে। তাদের দেখাশোনা করার জন্য সে সময় প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনাইটেড নেশন্স রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাস্টাইন ইন দ্য নিয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ) নামের এ সংস্থাটি। বর্তমানে গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, সিরিয়া এবং লেবাননে যে প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছে, তাদের জন্য স্থাস্থ্য, শিক্ষা এবং আরও নানা ধরনের সামাজিক সেবামূলক কাজে সহায়তা দেয় তারা।
বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রধান জোগানদাতা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র একাই ইউএনআরডব্লিউএকে প্রায় ৩৭ কোটি ডলার সাহায্য দিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন গত বছর এই সাহায্য প্রায় তিরিশ শতাংশ কমিয়ে দেয়। আর এবার যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দিল। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ত্রাণ সংস্থায় মারাত্মক ‘গলদ’ আছে। একই কথা ইসরায়েল বহুদিন ধরেই বলে আসছে। এখন প্রশ্ন হলো, কথিত এই `গলদ` আসলে কোন জায়গায়?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এত সাহায্য করে, কিন্তু বদলে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে কোনো ‘সম্মান’ বা প্রতিদান পায় না। এ বছরের গোড়ার দিকে তিনি হুঁশিয়ার করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে মীমাংসায় রাজি না হলে, তিনি ফিলিস্তিনিদের সাহায্য বন্ধ করে দেবেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, সমস্যা আসলে আরও গভীরে। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলে ফেলে আসা বাস্তুভিটায় ফেরত যাওয়ার অধিকারকে সমর্থন করে। আর এ নিয়ে সংস্থাটির ওপর ইসরায়েল বরাবরই ক্ষুব্ধ। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অনেকবারই এই সংস্থায় অনুদান কমিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এমন প্রস্তাবও করেছেন, ইউএনআরডব্লিউএর ভূমিকা জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হাতে তুলে দেওয়া হোক। তার মতে, ইউএনআরডব্লিউএ ফিলিস্তিনি সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে এখন গলা মিলিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ সপ্তাহের গোড়ায় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হেলি বলেন, ইউএনআরডব্লিউএ সব সময় ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে বলে। তিনি খোলাখুলি বলেন, ‘এই সংস্থাটির সংস্কার প্রয়োজন। অসংখ্য শরণার্থী ক্রমাগত সাহায্য নিয়ে চলেছে, কিন্তু এই ফিলিস্তিনিরাই আবার দিন-রাত যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছে।’
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এক মারাত্মক আঘাত। কট্টরপন্থি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস বলেছে, এটি ফিলিস্তিনি সংকটকে আরও গুরুতর করে তুললো। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গুতেরেস এই ত্রাণ সংস্থার তহবিলের ঘাটতি পূরণে অন্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, তারা তাদের অনুদান বাড়িয়ে দেবেন। এদিকে তাদের মারাত্মক ‘গলদে’ ভরা একটি সংস্থা বলে যে সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্র করেছে,তাকে তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে ইউএনআরডব্লিউএ।
সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস গানেস বলেন, ইউএনআরডব্লিউএর স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং জরুরি সাহায্যের কর্মসূচিকে শোধরানোর অতীত গলদপূর্ণ বলে যে বর্ণনা করা হয়েছে আমরা তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এসব কর্মসূচি মধ্যপ্রাচ্যে মানব উন্নয়ন অন্যতম সফল কর্মসূচি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ জন্য এই সংস্থার প্রশংসা করেছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।
এসএইচ/
আরও পড়ুন