বিয়ের কার্ডে টয়লেটের ছবি
প্রকাশিত : ১৯:০৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
ভারতের গ্রামে ‘লোটা-পার্টি’র ভরসায় দিন কাটে যে নারীদের, তাদের ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’ মুভি নতুন দিশা দেখিয়েছিল৷ বাস্তবে মুর্শিদাবাদের সামসাল বেগম বিয়ের কার্ডে শৌচাগারের ছবি ছাপিয়ে মহিলাদের আত্মসম্মানবোধের বার্তা দিলেন৷
অক্ষয় কুমার-ভূমি পেডনেকর অভিনীত ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’ সিনেমাটিতে সদ্যবিবাহিতা শিক্ষিতা জয়া দলবেঁধে পাড়ার মেয়ে-বউদের সঙ্গে (লোটা-পার্টি) খোলা স্থানে প্রাতঃকৃত্য সারার লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে শ্বশুরবাড়িই ছেড়ে দিয়েছিলেন৷ দীর্ঘদিন ধরে চাপিয়ে রাখা জগদ্দল ভাবনাটা কেবল সিনেমাতেই নয়, উপড়েছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকেও৷ মুর্শিদাবাদের বড়ঞা পঞ্চায়েত সমিতি কার্যালয়ে ঢোকার মুখেই পলাশ ঘোষের নির্মল চায়ের দোকান৷ ফেস্টুনে বড় বড় করে লেখা, ‘‘খোলা স্থানে মলত্যাগ করলে এই দোকানে চা পাওয়া যাবে না৷’’ চায়ের দোকান নির্মল করার উদ্দেশ্য কি জানতে চাওয়ায় তিনি বলছিলেন, ‘‘বিডিও, জয়েন্ট বিডিও পঞ্চায়েতকে নির্মল বানানোর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করছেন৷ আমি তাই এভাবে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এতে অনেকে রাগারাগি করেছেন, অনেকে আবার নিজের ভুল বুঝতে পেরে শৌচালয়ও তৈরি করেছেন৷’’ বড়ঞাতেই ‘নির্মল সেলুন’-এ ছড়া লেখা ফেস্টুন ঝুলিয়েছেন এককড়ি দাস, ‘‘চুল দাড়ি কাটবো বারবার, যদি থাকে বাড়িতে শৌচাগার৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘চুলদাড়ি কাটা যেমন সৌন্দর্যের ব্যাপার, তেমনি শৌচাগার থাকলেও পরিবেশ সুন্দর হবে, মেয়েদেরও ইজ্জত বাড়বে৷’’
এই বড়ঞার একঘরিয়া গ্রামেই ৩০শে আগস্ট নির্মল বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো৷ এই বিয়ে ইতিমধ্যে সারা গ্রামে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পাত্রী উচ্চমাধ্যমিক পাস সামসাল বেগম নিতান্ত দারিদ্র্যের কারণেই কলেজে যেতে পারেননি৷ কিন্তু তিনি সচেতন নাগরিক হিসেবে বিয়ের কার্ডে শৌচাগারের ছবি ছেপেছেন, সে জন্যই তার বিয়েতে প্রশাসনিক স্তরের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে তার বিয়ে আক্ষরিক অর্থে ‘নির্মল শুভ বিবাহ’ হয়ে উঠেছে৷
প্রিয়াঙ্কা ভারতীর কথা সারা দেশ জানে৷ শ্বশুরবাড়িতে শৌচাগার না থাকায় তিনি সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন৷ সামসাল প্রিয়াঙ্কার এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেন৷ কারণ, শৌচাগারের ব্যাপারে সামসাল খুব একবগ্গা৷ প্রায় দু বছর ধরে গ্রামের নজরদারি টিমে মল্লিকা দাস, লায়লা বেগম, স্মৃতি দে, সালমা বেগম, রাজিয়া খাতুনের মতো সামসালও প্রতিদিন ভোরবেলা সবাইকে সচেতন করতে বেরিয়ে পড়েন৷ কখনো ককনো বাঁশিও থাকে সঙ্গে৷ কাউকে ঝোঁপেঝাড়ে, আড়ালে-আবডালে খোলা স্থানে মলত্যাগ করতে দেখলে সামসালের দল সাবধান করেন৷ ‘গান্ধীগিরি’র মতো করে কখনো মলত্যাগের অপকারিতা বোঝান, বা কখনো শুধু নীরবে দেখে যান৷ তাই আশেপাশের অনেকের অভ্যেসই অনেকটা পাল্টেছে৷ এ জন্য প্রশাসনের তরফে সামসালকে ট্রেনিংও দেওয়া হয়েছে৷
সামসাল বলেন, ‘‘ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না৷’’ সামসালের নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, গ্রামের শৌচাগারসম্পন্ন দ্বিতল পাকাবাড়ির মানুষেরাও খোলা স্থানে মলত্যাগ করতে পছন্দ করতেন৷ তাঁদের বোঝাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে৷ অনেকে সামসালের বাড়িতে প্রতিবাদও জানাতে এসেছে এই নজরদারির৷ নজরদারি টিমের হীরা গাঙ্গুলি, পূর্নিমা দাস বা টোটান সূত্রধর গ্রামবাসীর হাতে এ জন্য প্রহৃতও হয়েছে৷ সামসাল বলেন, ‘‘তা-ও আমরা থামিনি৷ আশেপাশের সবাইকে জানিয়েছি শৌচাগারের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ৷’’ তাই শৌচাগার সামসালের কাছে ‘ইজ্জতঘর’৷
তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে।
এসএইচ/
আরও পড়ুন