ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদির পরাজয় কি অবধারিত?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:০৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ইয়েমেন ইস্যুতে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। তেহরান, ইস্তাম্বুল, দোহার পর এবার ইসলামাবাদও ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এদিকে চিরমিত্র যুক্তরাষ্ট্রও ইয়েমেনের বেসামরিক নাগরিকদের উপর মার্কিন জোটের ড্রোন হামলার বিরোধীতা শুরু করেছে। এমন পরিস্থিত ইয়েমেন ইস্যুতে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো ক্রমান্বয়ে সৌদি বিদ্বেষী হয়ে উঠায় দেশটি কোণঠাসা হয়ে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাযারি ইয়েমেনের মজলুম জনগণের বিরুদ্ধে সৌদি অপরাধযজ্ঞের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব নারী ও শিশুসহ ইয়েমেনের নিরপরাধ মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বহুবার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। সম্প্রতি ইয়েমেনের একটি বাসে সৌদি আরবের বিমান হামলায় বহু শিশু নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের এ মন্ত্রী ইয়েমেনে আগ্রাসন বন্ধের জন্য রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানান।

পাকিস্তানের কোনো পদস্থ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ইয়েমেনে সৌদি অপরাধযজ্ঞের নিন্দা জানানো ও একে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান হিসেবে আখ্যায়িত করার ঘটনা এটাই প্রথম। এ থেকে বোঝা যায়, ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের নতুন প্রশাসন ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখছে। একই সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা জোরদার করারও চেষ্টা করছে পাক সরকার।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেদেশের নতুন সরকার সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধে আশার সঞ্চার হয়েছে। মালয়েশিয়ার পর পাকিস্তান সরকারও যদি ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে সত্যিকারের মুসলিম দেশ মনে করে থাকে তাহলে মুসলমানদের চাওয়া পাওয়া ও অনুভূতির বিষয়টিকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে।"

এদিকে ইরান মনে করছে, ইয়েমেন ইস্যুকে পুঁজি করে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। আর তাই দেশটিও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে আসছে। ইয়েমেনকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও সৌদি আরবের বিপদজনক কর্মকাণ্ড নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। তারা এখন ইয়েমেনে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর অভিযোগ তুলে ইরানের প্রতিরক্ষা ও প্রতিরক্ষা শক্তিকে টার্গেট করেছে, যা এই অঞ্চলকে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাই ইরানও বিশ্বজনমত গঠনে পাকিস্তান, কাতার, ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম দেশগুলোকে টার্গেট করে এগুচ্ছে।

এদিকে তেহরান সম্মেলনে সিরিয়ার ইদলিব ইস্যুতে বৈঠক হলেও তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ইয়েমেনের উপর সৌদি জোটের বিমান হামলার তীব্র নিন্দা করেন। শুধু তাই নয়, সৌদির অন্যতম মিত্র তুরস্কও ইরানের ন্যয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থ দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সানা ইস্যুতে তেহরান-ইস্তাম্বুল যখন একই সুরে কথা বলছেন, তখন সৌদির দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও তাদের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন আনছে। এরই মধ্যে বেসামরিক নাগরিক হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবকে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটি। গত ২৭ আগস্ট ওয়াশিংটনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রিয়াদ যদি বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কোনো তৎপরতা দেখাতে ব্যর্থ হয়, তবে ইয়েমেনে অভিযানে তারা আমেরিকার যে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা পাচ্ছে, তা কমিয়ে ফেলা হবে।

এদিকে কেবল মুসলিম মিত্র-ই নয়, ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে ক্রমান্বয়ে ইউরোপের দেশগুলোরও সম্পর্ক তলানিতে ঠেকছে। এরইমধ্যে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি বাতিল করেছে জার্মানি ও স্পেন। দেশটির কাছে সামরিক সহায়তা বন্ধে ইউরোপের অন্য দেশগুলোও বদ্ধ পরিকর।

জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেমর সৌদি আরবের সঙ্গে ৪০০ অত্যাধুনিক বোমা বিক্রির চুক্তি বাতিল করেছে স্পেন। ইয়েমেনের স্কুলবাসে সৌদি বিমান হামলায় বহু শিশু নিহত হওয়ার জের ধরে রিয়াদের কাছে বোমা বিক্রির পরিকল্পনা বাতিল করল স্পেন। ৯২ লাখ ডলার মূল্যে এসব বোমা কিনতে চেয়েছিল সৌদি সরকার। বোমা কেনার অর্থ এরই মধ্যে পরিশোধ করেছিল সৌদি সরকার।

এর আগে, ইয়েমেনে বর্বর সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত রাখার প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি। জার্মানির এ সিদ্ধান্ত সৌদি সরকার এবং অস্ত্র সরবরাহকারী পশ্চিমা অন্য দেশগুলোর ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি জার্মানি এমন সিদ্ধান্ত নেয়।

বিবিসি, পার্স টুডে, আল-আরাবিয়া, ডন, আলজাজিরা অবলম্বনে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন অনলাইন প্রতিবেদক মুহাম্মদ জুয়েল

এমজে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি