বিবিসির বিশ্লেষণ
যে কারণে মোদির দাওয়াত ফিরিয়ে দিলেন ট্রাম্প
প্রকাশিত : ১০:১৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৮
আগামী বছর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনার্ড ট্রাম্পকে প্রধান অতিথি হিসেবে আসার যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, হোয়াইট হাউস তা ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের অফিস এ নিয়ে মুখ না-খুললেও দিল্লিতে সরকারি সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে ট্রাম্প যে আগামী ২৬ জানুয়ারির ওই অনুষ্ঠানে আসতে পারছেন না, তা তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত দিল্লিকে রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।
ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানোর খবর আগেভাগে মিডিয়াকে জানানোর কী দরকার ছিল এখন সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। অনেকে আবার ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সঙ্গেও এই সিদ্ধান্তের সম্পর্ক টানছেন।
সাড়ে তিন বছর আগে বারাক ওবামা যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তখন স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের সময়সূচি কিছুটা পাল্টেই তিনি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন।
প্রতি বছর কোনও বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানকে বিশেষ সম্মান দেখাতেই ভারত তাদের এই আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। তবে এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সেই দাওয়াত ফিরিয়ে দেবেন তা কিন্তু দিল্লির কল্পনার বাইরে ছিল।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিবাল বিবিসিকে বলছিলেন, ‘আসলে অনেক ভাল হত এই আমন্ত্রণ জানানোর কথা ঘোষণাই না-করা হলে। তাহলে জবাবটা ‘না’ হলেও তা নিয়ে কোনও হইচই হত না।’
‘এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত আগে অনানুষ্ঠিকভাবে জেনে নেওয়া হয়, সেই বিদেশি অতিথি আসতে পারবেন কি-না, তারপরই আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠানো হয়।’
‘কিন্তু এখানে খবরটা আগেভাগেই ফাঁস হয়েছে, এবং বিষয়টা অবশ্যই অন্যভাবে সামলানো উচিত ছিল।’
দিল্লির কূটনৈতিক সংবাদদাতা মাহা সিদ্দিকিও জানাচ্ছেন, ২৬ জানুয়ারি ভারতে আসতে না-পারার কারণ হিসেবে হোয়াইট হাউস প্রেসিডেন্টের ব্যস্ত সময়সূচিকেই তুলে ধরেছে। কারণ তার মাত্র দু’দিন পরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দেওয়ার কথা।
কিন্তু গত দুবছরে বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যেভাবে বারবার ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনে দেখা গেছে, তাতে দিল্লিরও ধারণা ছিল ভারতের জন্য নিশ্চয় ট্রাম্প কোনও না কোনওভাবে সময় বের করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও লোকসভার এমপি মমতাজ সঙ্ঘমিতা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তার কথায়, ‘এত বড় মাপের কোনও রাজনীতিবিদের সেই সময় কোনও ব্যস্ততা বা অন্য কোনও কাজ পড়ে যেতেই পারে।’
‘তবে আমি যেটা বলব, বাইরে যে ঘনিষ্ঠতা দেখা যায় সেটাই কিন্তু সব নয়!’
‘আসলে সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই বোধহয় একটা কথা সত্যি- যেমনটা আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বলি- যে তারা যেমন শত্রু, তেমনি মিত্রও! একই কথা বড় বড় দেশগুলোর ক্ষেত্রেও খাটে।’
‘আর তা ছাড়া যতই নিবিড় কোলাকুলি হোক, আপনি কি সত্যিই বিশ্বাস করেন ওই মাপের নেতারা অত ঘনিষ্ঠ হতে পারেন? না কি হওয়া সম্ভব?’, প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
আসলে মোদি-ট্রাম্প আলিঙ্গনের বাইরেও যে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে অনেক সূক্ষ ভাঁজ আছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল এ মাসের গোড়াতেই, যখন মার্কিন পণ্যের ওপর চড়া হারে শুল্ক বসানোর জন্য ট্রাম্প প্রকাশ্যেই ভারতকে আক্রমণ করেন।
হার্লে ডেভিডসন বাইক থেকে শুরু করে আরও অনেক মার্কিন পণ্যর ওপর ভারতে যে একশো শতাংশ হারে শুল্ক বসাচ্ছে, সেই নালিশও তিনি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে।
এদিকে ইরানের ওপর কঠোরতর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চালু হতে আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। কিন্তু ভারত জানিয়ে রেখেছে তার পরও ইরান থেকে তেল কেনা তারা বন্ধ করতে পারবে না।
ভারতের সাবেক শীর্ষ কূটনীতিক কানওয়াল সিবাল মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর বাতিলের পেছনে এটাও অন্যতম কারণ হতে পারে।
তিনি বলছেন, ‘আমেরিকা যদি সত্যিই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে এই ধরনের হাই-প্রোফাইল সফরের জন্য যে রাজনৈতিক পরিবেশটা দরকার- তা বিষিয়ে যেতে বাধ্য।’
‘হয়তো সে কারণেই হোয়াইট হাউস মনে করেছে এই ধরনের একটা কূটনৈতিক অনিশ্চয়তার আবহে এটা প্রেসিডেন্টের ভারত সফরে যাওয়ার ঠিক আদর্শ পরিস্থিতি নয়!’, বলছিলেন কানওয়াল সিবাল।
নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসেই অতিথি করে এনেছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে। নির্বাচনে যাওয়ার আগে শেষ প্রজাতন্ত্র দিবসেও তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দিল্লিতে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন এটা পরিষ্কার যে সে পরিকল্পনা এখন আর দিনের আলো দেখতে পারছে না!
সূত্র: বিবিসি
একে//
আরও পড়ুন