পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসিয়া বিবি খালাস
প্রকাশিত : ১৯:০৯, ৩১ অক্টোবর ২০১৮
ব্লাসফেমি আইনে আট বছর আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া খ্রিষ্টান নারী আসিয়া বিবিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট৷ ঐতিহাসিক এ রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে কট্টোপন্থিরা৷ দেশজুড়ে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা৷
ইসলামাবাদের সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার আসিয়ার আপিলের রায় পড়ে শোনান৷ সেখানে বলা হয়, ‘আপিল গৃহীত হয়েছে৷ নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের রায় পরিবর্তন করে তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়া হচ্ছে৷ তাঁর দণ্ড প্রত্যাহার করা হলো৷’
প্রতিবেশীরা আসিয়ার বিরুদ্ধে নবী মোহাম্মদকে (সাঃ) অপমানের অভিযোগ এনেছিলেন৷ ওই অভিযোগে ২০১০ সাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷
নিরাপত্তার কারণে আসিয়া বিবিকে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তিনি দেশ ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে৷ শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন আসিয়া৷ গত আট বছর ধরে কারাভোগ করছেন তিনি৷ আসিয়ার মামলাটি নিয়ে পাকিস্তান বিভক্তি তৈরি হয়েছিল৷ দেশটিতে ব্লাসফেমি আইনের পক্ষে শক্ত জনসমর্থন রয়েছে৷
রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
রায় ঘোষণার আগে, কট্টরপন্থি মৌলভী খাদিম হুসেইন রিজভি রাস্তায় নেমে লাখো মানুষকে বিক্ষোভে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ প্রতিটি বড় শহরে লোকজনকে জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, যাঁরা মহানবীকে (সা.) ভালোবাসেন তাঁদের উচিত আসিয়া বিবির মুক্তির বিরোধিতা করা৷
রায় ঘোষণার পরপরই শত শত মুসলমানরা ইসলামাবাদ, করাচি,রাওয়ালপিণ্ডির প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে৷ তবে পুলিশ বিক্ষোভ দমনে সক্ষম হয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত কোথাও বড় কোন সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি৷
ব্লাসফেমি আইনের ব্যবহার
২০০৯ সালের জুন মাসে লাহোরের কাছে শেখুপুরা এলাকায় ফল পাড়তে গিয়ে অন্য নারীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চার সন্তানের জননী আসিয়া বিবি মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটুক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে৷
খ্রিষ্টানধর্মাবলম্বী আসিয়া একটি কাপ ব্যবহার করে একটি বালতি থেকে পানি খাওয়ার পর, ওই নারীরা পানি অপবিত্র হয়ে গেছে এবং এটি আর ব্যবহার করা যাবে না বললে কথাকাটাকাটি শুরু হয়৷ আসিয়া বিবি মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেছেন বলে অভিযোগ করেন ঐ নারীরা৷ পরে আসিয়াকে তার বাড়িতে মারধরও করা হয়৷ তদন্তের পর পুলিশ আসিয়াকে গ্রেপ্তার করে৷ আসিয়া পরে জানান, প্রতিবেশীদের সঙ্গে ‘উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়` হলেও তিনি কখনোই ধর্ম অবমাননা করেননি৷
সমালোচকদের মতে, পাকিস্তানের এ ব্লাসফেমি আইনটি প্রায়ই ব্যক্তিগত রেষারেষির প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, দণ্ড দেওয়া হয় দুর্বল সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে৷
আসিয়া বিবির ‘মৃত্যুদণ্ডের` রায়ের বিরোধিতা করেছিলেন পাঞ্জাবের সাবেক গভর্নর সালমান তাসির৷ আসিয়াকে ক্ষমা ও ব্লাসফেমি আইন তুলে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া এ রাজনীতিবিদকে ২০১১ সালে তার দেহরক্ষী মুমতাজ কাদির প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছিলেন৷ ওই ঘটনায় কাদরির মৃত্যুদণ্ডের রায় হলেও পাকিস্তানের অনেকের কাছে এ দেহরক্ষী বীরের মর্যাদা পেয়ে আসছে৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয়, একে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করেছেন৷
আপিলের শুনানিতে অ্যাটর্নি বলেছিলেন, ‘যে দু`জন নারী আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁরা ঝগড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে আসিয়া বিবির ক্ষোভ প্ররোচিতমূলক ছিল না বলেও জানিয়েছিলেন তাঁরা৷` রায়ের পর আসিয়া বিবির স্বামী আশিক মাসিহ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘আমি এবং আমার সন্তানেরা ভীষণ খুশি৷ আমরা ঈশ্বরের কাছে এবং যে বিচারক এই ন্যায় বিচার দিয়েছেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ৷ আমরা জানতাম সে নির্দোষ৷’
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার উপ-পরিচালক ওমর ওয়ারাইচ এই রায়কে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেছেন, ‘গত আট বছর ধরে নির্দোষ একজন মানুষ সাজা ভোগ করলেন৷ এই রায় এটাই নির্দেশ দেয় যে দেশটির সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্লাসফেমি আইনের প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে৷’ সূত্র: ডয়েচে ভেলে
এসি
আরও পড়ুন