টিকে থাকতে সন্তান বিক্রি করছেন আফগান নারী
প্রকাশিত : ২৩:৩২, ২২ নভেম্বর ২০১৮
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহরে অপ্রত্যাশিত তীব্র খরার কারণে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের জন্য বাবা-মায়েরা সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সন্তান বিক্রি করা কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। সিএনএর এর প্রতিবেদন উঠে এসেছে দেশটির দারিদ্র্যতার কথা। তারা একটি আশ্রয় শিবিরে গিয়ে এমন তথ্য তুলে ধরেন।
জাতিসংঘের মতে, ২০১৮ সালে তীব্র খরার কারণে আফগানিস্তানে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন অন্তত দুই লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাট থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৮৪ হাজার এবং বাদঘিছ এলাকার এক লাখ ৮২ হাজার। এই বছর দেশটিতে চলমান সহিংসতাতেও এত মানুষ ঘরবাড়িহারা হননি বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। টানা চার বছর ধরে অনাবৃষ্টির কারণে এই অঞ্চলগুলোর কৃষিখাত চরম সংকটে পড়েছে। ২০১৭ সালে আফিমের উৎপাদন রেকর্ড মাত্রায় হলেও এই বছরে তা কমে গেছে এক-তৃতীয়াংশ।
হেরাট শহরের বাইরে একটি শরণার্থী শিবিরে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের একজন মামারিন, যিনি যুদ্ধে স্বামী হারিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে হারিয়েছেন ঘর। এখন পরিবারের অন্য সন্তানদের খাবারের জন্য হারিয়েছেন মেয়েকেও। ছয় বছরের মেয়ে আকিলাকে তিনি নাজমুদ্দিন নামের এক ব্যক্তির কাছে তিন হাজার ডলারে বিক্রি করে দিয়েছেন।
মামারিন সিএনএনকে বলেন, খরার কারণে আমি তিন সন্তান নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। এখানে এসেছিলাম সহযোগিতা পাওয়ার আশায়। কিন্তু কিছুই পেলাম না। সন্তানসহ না খেয়ে মৃত্যু এড়াতে আকিলাকে এক ব্যক্তির কাছে তিন হাজার ডলারের বিনিময়ে দিয়ে দেই। কিন্তু আমি পেয়েছি মাত্র ৭০ ডলার। আমার কোনও টাকা নেই, খাবার নেই, স্বামীও নেই।
বিক্রির বিষয়টি মেয়ে আকিলা জানে কিনা জানতে চাইলে মামারিন জানান, আমি যে তাকে বিক্রি করেছি তা সে জানে না। কীভাবে জানবে? সে তো এখনও শিশু। কিন্তু আমার আর কোনও উপায় ছিল না। হেসে হোক বা কেঁদে হোক, তাকে যেতেই হবে। বাধ্য না হলে কি কেউ তার নাড়ির টুকরোকে বিক্রি করে?
নাজমুদ্দিন অবশ্য আকিলাকে কিনে নেওয়া বিষয়টিকে দয়া হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, তার পরিবারের খাওয়ার মতো কিছু নেই। তারা ক্ষুধার্ত। আমি নিজেও গরিব জানি, কিন্তু ধীরে ধীরে হয়তো দুই বা তিন বছরে আমি টাকাটা দিতে পারবো।
সিএনএন জানায়, শিশু বিক্রির এই ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। খরার প্রকোপে থাকা পুরো পশ্চিম আফগানিস্তানে এমনটাই ঘটছে।
এরকম অনেক ঘটনা ঘটছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।
এসএইচ/
আরও পড়ুন