সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিক্রিয়া
প্রকাশিত : ১৪:০৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৪:০৯, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮
সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আমেরিকার আকস্মিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জুড়ে আজ প্রধান খবরে স্থান পেয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তকে মোটা দাগে স্বাগতই জানানো হয়েছে।
তবে অনেক সংবাদমাধ্যমই মার্কিন সেনেটর লিণ্ডসে গ্র্যায়াম এই সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করে যে মন্তব্য করেছেন তা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে, যেখানে তিনি বলছেন আমেরিকার এই পদক্ষেপ ওই অঞ্চলে রাশিয়া ও ইরানের অবস্থান আরও শক্ত করবে।
বিপর্যয়কারী সিদ্ধান্ত
অবশ্য ইরানের সম্প্রচার মাধ্যমগুলো এই খবর মোটামুটি নিরপেক্ষভাবে প্রচার করেছে। আর রক্ষণশীল সংবাদপত্রগুলো এই পদক্ষেপকে আমেরিকান সরকারের পরাজয় হিসাবে তুলে ধরে উল্লাস প্রকাশ করেছে।
হেমায়াত সংবাদমাধ্যম এই সিদ্ধান্তকে বর্ণনা করেছে ‘পর্যয়কারী প্রত্যাহার’ বলে। আর খোরাসান গ্র্যায়ামকে উদ্ধৃত করে লিখেছে ‘এই সময়ে আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ইরান ও বাশার আল-আসাদের জন্য একটা বড় বিজয়।’
কট্টরপন্থী দৈনিক জাভান যেটি প্রভাবশালী ইসলামিক রেভলিউশন গার্ড কোরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত, তারা বলছে সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে সেটি মেনে নেওয়া ছাড়া আমেরিকার সামনে এখন আর কোন বিকল্প নেই।
এরদোয়ানের ভূমিকা
তুরস্কে খবরের শিরোনাম হয়েছে এই সংবাদ। বেশ অনেকগুলো সংবাদমাধ্যম বলছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েপ এরদোয়ান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এক টেলিফোন কথোপকথনের সময় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
উত্তর সিরিয়ায় তুরস্ক আক্রমণ চালিয়ে সিরিয়ান কুর্দিশ পিপলস্ প্রোটেকশান ইউনিট বা ওয়াইপিজির যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ের যে পরিকল্পনা নিচ্ছিল সেই পটভূমিতে এই সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াইপিজি সেখানে আমেরিকান বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠির বিরুদ্ধে লড়ছিল।
তুরস্ক মনে করে ওয়াইপিজি নিষিদ্ধ-ঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়াকার্স পার্টিরই (পিকেকে) একটা অংশ এবং ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের তারা "সন্ত্রাসী" বলে মনে করে।
সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যমগুলো এই পদক্ষেপকে ওই অঞ্চলে এরদোয়ানের প্রভাবের ফসল বলে তুলে ধরছে। এধরনের একটি সংবাদপত্র আকসাম বলছে ফোরাত নদীর পূর্বাঞ্চলে সিরিয়ার যে এলাকায় তুরস্ক আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সেই অঞ্চল নিয়ে তুরস্কের "সুদৃঢ় অবস্থান"-এর কারণেই আমেরিকা পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে।
গুনস ও তুর্কিয়ে নামে অন্য পত্রিকাগুলো লিখেছে এই সিদ্ধান্তে ওয়াইপিজি "স্তম্ভিত"। কুর্দি টিভি বলছে আমেরিকান সৈন্য এখনও দেশটিতে রয়েছে। তবে সিরিয়ায় কুর্দি সংবাদমাধ্যমগুলো এই সিদ্ধান্তে অবশ্যই বিস্মিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আমেরিকান সৈন্য ইতিমধ্যেই প্রত্যাহার শুরু করেছে এমন খবরের মধ্যেই রুড টিভি চ্যানেল জোর দিয়ে বলেছে সিরিয়া ডেমোক্রাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোর কাছে আমেরিকান সৈন্যরা এখনও অবস্থান করছে। এসডিএফ ওয়াইপিজির নেতৃত্বাধীন আরব, সিরিয়ান এবং কুর্দি মিলিশিয়াদের জোট।
আরও একটি চ্যানেল উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় একজন কুর্দি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে যিনি বলছেন, ‘এখানে মার্কিন সেনা অধিনায়কসহ কেউই হোয়াইট হাউসের এই সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে কিছুই জানে না।’
এই কর্মকর্তা আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার ‘সিরিয়া এবং গোটা এলাকার ওপর প্রভাব ফেলবে।’
এই ঘোষণার খবর গুরুত্ব পেয়েছে সিরিয়ান সংবাদমাধ্যমেও। সিরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা সানা এই খবর দিয়েছে দীর্ঘ পরিসরে। রাশিয়া এই সিদ্ধান্তকে যে স্বাগত জানিয়েছে সেটাকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং রুশ সরকারের মন্তব্য উদ্ধৃত করে তারা লিখেছে, ‘ওয়াশিংটন বুঝতে পারছে সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ চলছে তার বিরোধিতা আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থী হচ্ছে।’
‘তুরস্ক, ইরান, রাশিয়া ও আসাদের বিজয়’
আরব দুনিয়া জুড়ে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের এই খবর পত্রপত্রিকাগুলোতে উল্লেখযোগ্য স্থান পেয়েছে। অনেক ভাষ্যকারই এই সিদ্ধান্তকে ব্যাখ্যা করেছে "বিস্ময়কর" এবং "স্তম্ভিত হবার মত" বলে।
লণ্ডন ভিত্তিক দৈনিক আল-আরব এটাকে বলেছে "তুরস্ক, ইরান, রাশিয়া এবং আসাদের বিজয়।" আল-কুদস্ আল-আরাবি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের ফলে সৃষ্ট শূণ্যস্থান পূরণ করার চেষ্টা করবে রাশিয়া, তুরস্ক এবং ইরানের মত গুরুত্বপূর্ণ বর্হিশক্তিগুলো।’
আরব দুনিয়ায় সৌদি অর্থায়নে পরিচালিত আল-আরাবিয়া এবং কাতারি আল-জাজিরার মত গুরুত্বপূর্ণ টিভি দুটি চ্যানেলই গ্র্যায়ামের মন্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
তথ্যসূত্র:বিবিসি
এমএইচ/
আরও পড়ুন