অফিসে ফাঁকি দেওয়া কর্মীদের নিয়ে গবেষণা
প্রকাশিত : ১২:১৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১২:১৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮
অফিসিয়াল মিটিংগুলোয় সামনের সারিতে বসে কর্তা ব্যক্তিদের কথায় সমর্থন জুগিয়ে বা প্রশংসা করে তাদের চোখে পড়েন এমন কর্মী প্রায় অফিসেই দেখা যায়। আদতে অফিসের কাজে তাদের বিশেষ কোনো মনোযোগ নেই। এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে `আত্ম-প্রচারকারী` বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা।
গবেষণাটি বলছে, প্রকৃতার্থে কাজের কাজ কিছু না করেও কেবল যোগাযোগ ও কৌশল কাজে লাগিয়ে আত্ম-প্রচারকারী ব্যক্তিরা অফিসে বড় কর্তাদের চোখে ভালো কর্মী হিসেবে বিবেচিত হন।
শুধু তাই নয়, অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, যারা প্রকৃতই নিবিষ্ট চিত্তে কাজ করে যান তেমন কর্মীদের চেয়ে কিছুক্ষেত্রে আত্ম-প্রচারকারীরা এগিয়ে থাকেন।
কিন্তু যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক এই গবেষণা বলছে, এসব ব্যক্তিরা দিন শেষে `টিম-ওয়ার্ক` বা `দলগত কাজে` আদতে কোনো উপকারেই আসে না।
তাই এই আত্ম-প্রচারকারী ব্যক্তিদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে মূলত, `কাজের চেয়ে আওয়াজ বেশি` দেওয়া ব্যক্তি হিসেবে।
`প্রোডাক্টিভিটি স্টাডি` বা কর্মোৎপাদন সক্ষমতা বিষয়ক এই গবেষণার আওতায় ছিল যুক্তরাজ্যের ২৮টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
এই গবেষণা থেকে একদল কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদেরকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যে, তারা `হাইলি এনগেজ্ড` বা তারা নিজের কাজে `অতি গভীরভাবে সম্পৃক্ত`।
কিন্তু নিবিড়ভাবে মনোযোগ দিলে বোঝা যায়, এসব ব্যক্তি আসলে `সেল্ফ-প্রমোটার` বা `আত্ম-প্রচারকারী` মাত্র।
হাল্ট ইন্টারনেশনাল বিজনেস স্কুলের এই গবেষণায় টিম-ওয়ার্ক বা দলগত কাজে কর্মীদের সম্পৃক্ততার বিভিন্ন স্তর নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছিলো।
এতে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন ধরণের কর্মক্ষেত্রের কর্মীদের নমুনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য, সরকার ও পরিবহন থেকে শুরু করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
গবেষণাটি বলছে, প্রতি ৫টি টিমের একটিতে এই ধরণের `প্রহেলিকা` বা ধাঁধা পাওয়া গেছে। যেখানে দেখা গেছে কর্মীরা খুবই সম্পৃক্ত কিন্তু প্রকৃতার্থে তাদের উৎপাদশীলতা কম।
এ ধরনের টিমগুলোর দিকে গবেষকেরা নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করে দেখেছেন, এসব টিমের সদস্যরা আসলে যত বুলি দেন তত কাজ করেন না।বা উল্টো করে বলা যায়, তারা যত না কাজ করে তার চেয়ে বেশি দেয় আওয়াজ।
অর্থাৎ এই ধরণের ব্যক্তিরা মিটিংগুলোতে ঘড়ি ধরে উপস্থিত হয়, অফিসের কর্তাব্যক্তিদের সাথে আলাপে জড়িত হয় এবং তাদের কথা ও যুক্তিতে সায় দেয়।
এসব করার মাধ্যমেই তারা কর্তাব্যক্তিদের চোখে পড়ে এবং কর্ম ক্ষেত্রে ভালো কাজের সুনাম পায় এবং এমনকি পদোন্নতিও পেয়ে যান।
এ ধরণের ব্যক্তিদেরকে এই গবেষণায় `সুডো-এনগেজ্ড` বা কাজে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হবার ভানধারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
`আত্ম-প্রচারকারী` ও অনেক কাজে ডুবে থাকার ভেকধারী ব্যক্তিদেরকে এই গবেষণার জ্যেষ্ঠ গবেষক এমি আর্মস্ট্রং `স্বার্থপর` বলে বর্ণনা করেছেন।
এমি আর্মস্ট্রং-এর মতে এ ধরণের ব্যক্তিরা দলগত কাজকে অবমূল্যায়ন করে এবং দিনশেষে তারা আসলে কাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
তবে, কাজে ব্যস্ততা দেখানোর ছদ্মবরণ নেয়া এই কর্মীরাও অনেক সময়ই দেখা যায় অফিসে বেশ প্রশংসা, সুনাম ও পদোন্নতি পেয়ে যায়।
এই ধরনের কর্মীরা অফিসে পুরস্কৃত হবার বিষয়টিকে এমি আর্মস্ট্রং `অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক` বলে উল্লেখ করেছেন।
আর্মস্ট্রং ব্যাখ্যা করছিলেন, আত্ম-প্রচারকারী কর্মীরা নিজের সুবিধার্তে অফিসের কর্তা ব্যক্তির সামনে অনেক কিছুই করে।
কিন্তু দিন শেষে এরা তাদের সহকর্মীদেরকে খুব কম বিশ্বাস করে এবং কাজের ক্ষেত্রেও কম সহযোগীতা করতে দেখা যায়।
এ ধরণের ব্যক্তিদের কারণে কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে এবং অন্যরা দলগত কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে বলেও মনে করেন এমি আর্মস্ট্রং।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এমএইচ/
আরও পড়ুন