ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ভেনিজুয়েলা সংকট

সেনাবাহিনী মাদুরোকে সমর্থন দিচ্ছে কেন?

প্রকাশিত : ১০:১৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা এখন রাজনৈতিকভাবে অস্থির সময় পার করছে। দেশটির এই রাজনৈতিক সংকটে বেশ খোলাখুলি নাক গলাচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলো।

বিশ্বের ২০টির বেশি দেশ ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা জুয়ান গুয়াইদোকে দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর জন্য আরো খারাপ খবর হচ্ছে আমেরিকায় নিযুক্ত ভেনিজুয়েলার একজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মাদুরোর পক্ষ ত্যাগ করেছেন এবং অন্য সামরিক কর্মকর্তাদেরও একই কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মাদুরোর ক্ষমতা যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, তাহলে তাকে সরিয়ে দেবার জন্য সেনাবাহিনী চূড়ান্ত ধাক্কা দিচ্ছে না কেন?

মাদুরোর পূর্বসূরি হুগো চাভেজ যখন ক্ষমতায় আসেন তখন বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তার সরিয়ে দেন।

চাভেজ নিজেও একসময় সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে তিনি নিজেই সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন।

এর বিনিময়ে তিনি সেনা অফিসারদের নানা পদ-পদবীর মাধ্যমে পুরস্কৃত করেন। চাভেজ ক্ষমতা গ্রহণের আগে সেনাবাহিনী ব্যারাকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীকে ব্যারাক থেকে বাইরে নিয়ে আসেন। মন্ত্রী পরিষদে তাদের স্থান দেওয়া হয়। এছাড়া ব্যাংক এবং নানা আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণও দেওয়া হয় সেনা সদস্যদের হাতে।

হুগো চাভেজের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তারই অনুসারী নিকোলাস মাদুরো। মাদুরো একসময় বাস চালক ছিলেন। সেনাবাহিনীর সাথে তার কোন সম্পর্ক ছিলনা।

কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদুরো তার পূর্বসূরি হুগো চাভেজের দেখিয়ে পথ অনুসরণ করেন। সেনা সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা তিনি আগের মতোই বহাল রাখেন। সেনাবাহিনীও সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে। সেনা কর্মকর্তারা মন্ত্রী এবং অন্যান্য প্রভাবশালী পদে থাকেন।

ভেনিজুয়েলার গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো সেনা কর্মকর্তাদের হাতে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য বিতরণ সেবা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস কোম্পানি। শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে সেনা কর্মকর্তারা যাতে দুর্নীতি করতে পারে সে সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

মাদুরোকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার বিনিময়ে সেনা কর্মকর্তারা যদি লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা পান, তাহলে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ভয়ও রয়েছে।

সেনাবাহিনীর একটি অংশ, বিশেষ করে সিনিয়র কর্মকর্তারা, প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চান। কারণ, এর বিনিময়ে তারা অর্থ-বিত্তের মালিক হচ্ছে। একই সাথে তারা মাদুরো সরকারের সাথে আপোষ করছে।

এমটাই মনে করেন ব্রাসেলস-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ফিল গানসন।

গানসন বলেন, ‘কর্মকর্তা যদি দুর্নীতিবাজ হয় এবং একই সাথে গোয়েন্দারা যদি সেসব দুর্নীতির রেকর্ড ফাইল-বন্দি করে রাখে, তখন কর্মকর্তাদের জন্য মত পাল্টানো বেশ কঠিন হয়ে যায়।’

অপরাধ দমনের নামে ভেনিজুয়েলার নিরাপত্তা বাহিনীগুলো শতশত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জাতিসংঘ অভিযোগ করেছে। সেনাবাহিনীর অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত।

গানসন বলেন, তাদের আশংকা হচ্ছে, সরকারের পতন হলে বাকি জীবন তাদের কারাগারে কাটাতে হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বেশ সফলতার সাথে তার সরকারের টিকে থাকার সাথে সেনা কর্মকর্তাদের স্বার্থকে জড়িত করেছেন।

সেনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সুযোগ দেবার মাধ্যমে সেটি হয়েছে বলে মনে করেন ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নিরাপত্তা বিষয়ে বিশ্লেষক ব্রায়ান ফনসেকা।

গত জানুয়ারি সরকার বিরোধীরা সামরিক ব্যারাকে গিয়ে সৈন্যদের হাতে লিফলেট বিলি করেছেন। সেখানে লেখা ছিল বিরোধী নেতা জুয়ান গুইদো ক্ষমতায় আসলে তাদের ক্ষমা করা হবে।

ফনসেকা বলেন, সরকার বিরোধীদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মধ্যম এবং জুনিয়র কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

কিন্তু সেনাকর্মকর্তারা সেসব লিফলেটকে গুরুত্ব না দিয়ে সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেখানোর চেষ্টা করেছে যে তারা প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সাথেই আছে।

এদিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনীতে নিচের দিকে অনেক কর্মকর্তা এবং সদস্যরা বিরোধী নেতাকে সমর্থনের উপায় খুঁজছেন।

বিরোধীদের সাথে অনেক সেনা সদস্যের যোগাযোগ আছে বলে তিন উল্লেখ করেন। বিশ্লেষক ফনসেকা মনে করেন, ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি হয়তো কিছু সেনা সদস্যদের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারে।

কিন্তু অন্যরা বিষয়টিতে আশ্বস্ত হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। মাদুরো ক্ষমতা থেকে সরে গেলে সেনাবাহিনী অনেক কিছু হারাবে।

সাধারণ ক্ষমার কথা বলা হলেও সেটি আদৌ কার্যকরী হবে কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বিরোধীরা ক্ষমতায় আসলে নিপীড়ন, দুর্নীতি এবং মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত সেনাকর্মকর্তারা রেহাই পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি