পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেল রাশিয়া, কিন্তু কেন?
প্রকাশিত : ০৮:৪০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১৫:০৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
রাশিয়ার নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র
যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়াও নিজেদেরকে পরমাণু অস্ত্র রোধের এক চুক্তি থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। শীতল যুদ্ধের সময় করা এই চুক্তিটির নাম মধ্য-পাল্লার পরমাণু শক্তি চুক্তি যা সংক্ষেপে আইএনএফ নামে পরিচিত।
এই চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া এখন নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সাময়িকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এই চুক্তিটি সই হয়েছিল ১৯৮৭ সালে।
এই চুক্তিতে দুটো দেশের সব ধরনের পরমাণু অস্ত্রসহ স্বল্প ও মধ্য-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘আমাদের মার্কিন অংশীদাররা ঘোষণা করেছে যে তারা এই চুক্তি বাতিল করছে। এখন আমরাও সেটা বাতিল করছি।’
তিনি বলেছেন, এবিষয়ে তাদের সব প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনার জন্যে দরজা খোলা রয়েছে।
শনিবার পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট নেটোর মহাসচিব জেনারেল ইয়েন্স স্টল্টেনবার্গ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইউরোপের সবগুলো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে সম্মতি প্রকাশ করছে, কারণ রাশিয়া গত কয়েক বছর ধরেই এই চুক্তি ভঙ্গ করে আসছে। ইউরোপে তারা নতুন নতুন পরমাণু শক্তিধর ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে।’
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে রাশিয়াকে যে ছ`মাসের সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেটা তারা কাজে লাগাতে পারে।
চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ রাশিয়া সবসময়ই প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তিতে যে পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে যে রাশিয়া সেগুলোর তৈরি করছে। তার মধ্যে রয়েছে ৫০০ কিলোমিটার থেকে ৫,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।
কোন কোন মার্কিন কর্মকর্তা এও বলেছেন যে রাশিয়া 9M729 ক্ষেপণাস্ত্রও মোতায়েন করেছে, নেটোর কাছে যা SSC-8 নামে পরিচিত।
এসব তথ্য প্রমাণ ওয়াশিংটনের মিত্র দেশগুলোর কাছে তুলে ধরলে তারাও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে সমর্থন করেছে।
গত ডিসেম্বর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়াকে ৬০ দিনের সময় দিয়েছিল চুক্তির শর্ত মেনে চলার জন্যে। তারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল যে অন্যথায় ওয়াশিংটনও এই চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য থাকবে না।
আই এন এফ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া বরং বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপে ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধী ব্যবস্থা স্থাপন করেছে যা এই চুক্তির লঙ্ঘন।
শনিবার প্রেসিডেন্ট পুতিন তার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেছেন। তাদেরকে বলেছেন, তারা এখন নতুন অস্ত্র তৈরিকে কাজ শুরু করবেন।
এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা যায় এরকম কালিবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, নতুন হাইপারসনিক অস্ত্র। এসব হাইপারসনিক অস্ত্র শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ বেশি গতিতে ছুটে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
তবে পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ব্যয়বহুল অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে না এবং যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র মোতায়েন করার আগে তারাও কোথাও স্বল্প ও মধ্য-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে না।
এধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতার ব্যাপারে ইউরোপীয় দেশগুলো সবসময়ই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
নেটোর মহাসচিব বলেন, ‘এসব নতুন ক্ষেপণাস্ত্র এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বহন করা যায়। এগুলো শনাক্ত করা কঠিন। এগুলো পরমাণু শক্তিধর। ইউরোপের যেকোনো শহরেও আঘাত হানতে সক্ষম।’
আইএনএফ চুক্তিতে কি ছিল?
#যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৮৭ সালে।
#অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের এই চুক্তিতে সব ধরনের পরমাণু অস্ত্র এবং স্বল্প ও মধ্য-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
#রাশিয়ার এসএস-টোয়েন্টি ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রও ক্রুজ মিসাইল স্থাপন করেছিল। এই ঘটনা ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভের জন্ম দেয়।
#১৯৯১ সালের মধ্যে প্রায় ২,৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়।
#দুটো দেশকেই একে অপরের স্থাপনা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়।
#রুশ প্রেসিডেন্ট ২০০৭ সালে ঘোষণা করেন যে এই চুক্তি রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা করছে না।
#এর আগে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী এক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এমএইচ/
আরও পড়ুন