আসাম রাজ্যে বিষাক্ত মদ পান
এতো প্রাণহানির রহস্য কি?
প্রকাশিত : ১০:৩৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১০:৫৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে বিষাক্ত মদ পান করে গত কয়েকদিনে অন্তত ৯৯ জন লোকের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরও অন্তত শ’দুয়েক নারী-পুরুষ।
প্রথম মৃত্যুর খবরটি পাওয়া যায় বৃহস্পতিবার। যারা মারা গেছেন তারা সবাই গোলাঘাট আর জোরহাট জেলার চা বাগানের শ্রমিক। মৃতদের মধ্যে নারীও রয়েছেন।
যে বাড়িতে ওই মদ তৈরি হচ্ছিল - তা পুলিশ চিহ্নিত করেছে এবং দেড় লিটার বিষাক্ত মদও উদ্ধার করেছে। এখান থেকে প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে বিক্রি হতো বিষাক্ত মদ।
১৮০ মিলিলিটারের প্যাকেট বিক্রি হতো এক ডলারেরও কম দামে। লাইসেন্স করা মদের তুলনায় এদাম অর্ধেকেরও কম।
এখনও ডাক্তাররা বের করতে পারেন নি যে ঠিক কি উপাদান ওই মদে ব্যবহৃত হয়েছিল - যা পান করার পর সেবনকারীদের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে যেতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সস্তা মদ প্রস্তুতকারকরা প্রায়ই এতে মিথানল ব্যবহার করে -যা মিথাইল এ্যালকোহল এবং এটা মোটরগাড়ির এ্যান্টি-ফ্রিজ সহ বিভিন্ন যন্ত্রে ব্যবহার হয়।
এটা অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ, কিন্তু কখনো কখনো চোরাই মদ প্রস্তুতকারকরা নেশাবর্ধক হিসেবে এটা মিশিয়ে মদ তৈরি করে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বেশি পরিমাণে মিথানল পান করলে, অন্ধত্ব, লিভারের ক্ষতি এবং মৃত্যু হতে পারে।
রাহুল বরদোলোই নামে একজন ডাক্তার বলেছেন, বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত লোকেরা প্রচন্ড বমি করছিল, তারা বলছিল যে তাদের বুকে তীব্র ব্যথা হচ্ছে এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে তৈরী মদ খাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন বহু নারী - পুরুষ।
গুয়াহাটি থেকে একজন বিশেষজ্ঞ এখন ওই মদের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করার জন্য গোলাঘাট-জোরহাটের পথে রয়েছেন।
একজন চা শ্রমিক গোলাঘাট হাসপাতাল থেকে বিবিসিকে বলেন, তিনি আধা লিটার মদ কিনেছিলেন, এবং খাবার আগে তা পান করেন তিনি। প্রথম সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল তবে কিছুক্ষণ পর থেকে মাথাব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে।
আসামে স্থানীয়ভাবে তৈরী মদ তৈরী এবং বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু চা-বাগান এলাকাগুলিতে নিয়মিতই এধরণের সস্তা মদ পাওয়া যায়।
কিছুদিন আগেই ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বিষাক্ত মদ খেয়ে প্রায় একশো জন মারা যায়। তা ছাড়া ২০১১ সালেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিষাক্ত মদ পান করে ১৭০ জনের মৃত্যু হয়।
ভারত হচ্ছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মদের বাজার । এখানে অনেক দেশী-বিদেশী কোম্পানির মদ বিক্রি হয়, কিন্তু এই বাজারের ৪৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকই দখল করে আছে বেআইনি-ভাবে ঘরে তৈরি সস্তা মদের ব্যবসা।
অনেকে বলেন, ভারতে বৈধ মদ উৎপাদন ও বিক্রির ওপর সরকারি শুল্ক ও কর এখন এত বেড়ে গেছে যে তা অবৈধ সস্তা মদ উৎপাদকদের উৎসাহিত করছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এমএইচ/
আরও পড়ুন