ব্রেক্সিট নিয়ে আর কী বিকল্প হাতে আছে ব্রিটেনের?
প্রকাশিত : ১২:০৫, ৩০ মার্চ ২০১৯
তৃতীয় বারের মতো ব্রেক্সিট বা ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-র চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার পর দেশটির পার্লামেন্টে কার্যত এক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রস্তাবের ওপর কয়েক দফা ভোটের মাধ্যমেই কি ব্রিটেনের ইইউ ছাড়ার এই সংকটের সমাধান হবে?
যদিও এরই মধ্যে ইঙ্গিতসূচক ভোটের এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি ঐক্যমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সেটাও ব্যর্থ হয়েছে। তাই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ার পথ কি বন্ধ হয়ে গেল? না। তাহলে সামনে আর কী পথ খোলা থাকছে?
আগামী সোমবার আরেক দফা ইঙ্গিতসূচক ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর প্রক্রিয়াও আগের বারের মতই হবে।
এমপিরা স্পিকারের কাছে নিজেদের প্রস্তাব জমা দিতে পারবেন। এরপর স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন কোন প্রস্তাবের ওপর ভোট হবে আর কোনটিতে নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পাওয়া মোট তিনটি প্রস্তাবই তোলা হবে।
তবে হ্যাঁ, যুতসই মনে হলে স্পিকার আরও বেশি প্রস্তাব পার্লামেন্টে তুলতে পারবেন। ভোট প্রক্রিয়া হবে প্রতিটি প্রস্তাবের ওপর এমপিরা হ্যাঁ অথবা না ভোট দিতে পারবেন।
চলুন দেখে নেয়া যাক, ইঙ্গিতসূচক ভোটের প্রথম রাউন্ড ঠিক কেমন হয়েছিল?
সমর্থনসূচক গণভোট
প্রস্তাবক: ডেইম মার্গারেট বেকেট, লেবার পার্টি
ফলাফল: পক্ষে ২৬৮, বিপক্ষে ২৯৫
সমর্থনসূচক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির জনগণকে যে কোনও প্রস্তাবে রাজি হতে হত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ব্যালটের ওপর কি প্রশ্ন লেখা থাকবে, সেটা এমপিরা নির্ধারণ করবেন।
চুক্তি ও কাস্টমস ইউনিয়ন
প্রস্তাবক: কেন ক্লার্ক, কনজারভেটিভ পার্টি
ফলাফল: পক্ষে ২৬৪, বিপক্ষে ২৭২
এ প্রস্তাব পাস হলে, ব্রেক্সিট চুক্তির জন্য মেকে সমর্থন দিতে হত এমপিদের, কিন্তু সে ক্ষেত্রে শর্ত ছিল যুক্তরাজ্য ইইউ এর সঙ্গে একটা কাস্টমস ইউনিয়নে থাকবে।
কাস্টমস ইউনিয়ন হচ্ছে, এক ধরণের বাণিজ্য চুক্তি যাতে দুই বা তার বেশি দেশকে যুক্তরাজ্যে নিজেদের পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও কর বা শুল্ক দিতে হবে না। মে এই প্রস্তাব আগে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
লেবার দলের বিকল্প পরিকল্পনা
প্রস্তাবক: জেরেমি করবিন
ফলাফল: পক্ষে ২৩৭, বিপক্ষে ৩০৭
কাস্টমস ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ছিল লেবার দলের অবস্থান, সঙ্গে তারা চাচ্ছিল ইইউ এর একক বাজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সংযোগ যাতে থাকে। কিন্তু ইইউ এর আইন তা সমর্থন করে না, অর্থাৎ অ-ইইউ কোনও রাষ্ট্র ইইউ এর কোনও নীতি বিষয়ে কথা বলা বা ভেটো দেওয়ার অধিকার রাখে না।
সর্বজনীন বাজার
প্রস্তাবক: নিক বোলস, কনজারভেটিভ পার্টি
ফলাফল: পক্ষে ১৮৮, বিপক্ষে ২৮৩
এ প্রস্তাবে যুক্তরাজ্য নরওয়ে, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড এবং লিচেনস্টেইনের সঙ্গে মিলে ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থার অংশ হবে। এর ফলে ইউরোপের সর্বজনীন বাজারের অংশ থাকতে ব্রিটেনের সমস্যা হতো না।
ব্রেক্সিট নিয়ে এখন যুক্তরাজ্যের যে মরিয়া অবস্থা তাতে পথ খুঁজে পেতে এমনই আরও বেশ কয়েকটি প্রস্তাব ছিল।
কিন্তু গতকাল শুক্রবার রাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউজ অব কমন্সে টেরিজা মে’র আনা চুক্তিটির পক্ষে ২৮৬ এবং বিপক্ষে ৩৪৪ ভোট পড়ে।
ব্রেক্সিটের জন্য এটিই ছিল একমাত্র চুক্তি যাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে ব্রিটেনের মতৈক্য হয়েছিল।
কিন্তু এ চুক্তিটি পার্লামেন্টে এতটাই সমালোচিত হয় যে পর পর তিনবার ভোটে দিয়েও এটি পাস করাতে পারলেন না দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।
সূত্র: বিবিসি
একে//
আরও পড়ুন