ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

মাতাল চালকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতীক এই নারী

প্রকাশিত : ০৯:০৩, ১ মে ২০১৯ | আপডেট: ১০:০৭, ১ মে ২০১৯

বাবা আমাদেওর সাথে মিজ সাবুরিদো

বাবা আমাদেওর সাথে মিজ সাবুরিদো

একটি দুর্ঘটনা জ্যাকুলিন সাবুরিদোর জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছিল। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে আন্দোলনের একজন প্রতীক হয়ে ওঠেন। গত ২০ এপ্রিল ৪০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

১৯৯৯ সালে অস্টিনে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে প্রচারাভিযানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন সাবুরিদো।

আজ থেকে বিশ বছর আগের কথা। ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় সাবুরিদোর জীবন যখন বদলে যায় তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল সে এবং বাস করতো বাবার সাথে কারাকাসে।

ইংরেজিতে পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। দুর্ঘটনার এক মাসেরও কম সময় আগে সে পৌঁছায়।

বন্ধুর গাড়িতে করে একটি পার্টি থেকে ফিরছিলেন সাবুরিদো। এমন সময় বিশাল এক পিক-আপ তাদের যানটিতে মুখোমুখি আঘাত হানে।

রেজিনাল্ড স্টেফি নামে ১৮ বছর বয়সী এক চালক মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল। সাবুরিদোর সাথে গাড়িতে যাচ্ছিল যে চারজন তাদের দুজনই তৎক্ষণাৎ প্রাণ হারায় এবং দুইজন গাড়িটি থেকে পালাতে সক্ষম হয়।

কিন্তু এই ভেনিজুয়েলার নাগরিক গাড়ির ভেতর আটকা পড়ে। এরপর একটা সময় গাড়িটিতে আগুন ধরে গেলে তার শরীরের ৬০ শতাংশের বেশি পুড়ে যায়।

স্টেফি মদ্যপ হয়ে গাড়ি চালানো এবং মানব হত্যার দায়ে দুটো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন। সাত বছর জেলে কাটানোর পর ২০০৮ সালে সে মুক্তি পায়।

সাবুরিদোকে আরও কঠিন সাজা ভোগ করতে হয়। নিজের হাতের আঙ্গুল, চুল কান, নাক এবং তার চোখের আলো-সবাই হারাতে হয়।।

এই গাড়ি দুর্ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার এই নাগরিককে একশোর বেশিবার অস্ত্রোপচারের টেবিলে শুতে হয়। তার চিকিৎসা ব্যয় কয়েক মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর তার সুস্থতার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একটা কাজ সে করতো আর তা হলো মদ্যপ-অবস্থায় গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য প্রচার।

তিনি যে ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে গেছেন সে সম্পর্কে কথা বলতে চাইতেন এবং সবসময় মানুষকে অ্যালকোহলের প্রভাব থাকা অবস্থায় গাড়ি না চালানোর বিষয়ে সতর্ক করতেন।

২০০২ সালে তিনি ৩০ সেকেন্ডের একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপন করেন যা আমেরিকা এবং দেশের বাইরে তাকে পরিচিত করে তোলে।

জ্যাকির সেই বার্তার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আসে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে তার কাছ চিঠি আসতে থাকে তার পরিশ্রম ও সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে।

সাবুরিদো প্রচার অভিযান এবং কনফারেন্সেও যোগ দেন এবং স্টেফির সাথে একসাথেও ক্যাম্পেইনে অংশ নেন । তার সাথে ২০০১ সালে প্রথম দেখা হয় এবং প্রকাশ্যে তাকে ক্ষমা করে দেন সাবুরিদো।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দেন এবং আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান অপরাহ উইনফ্রের টক শোতে দুইবার অতিথি হয়ে আসেন তিনি।

২০এপ্রিল মৃত্যুর সময়কাল পর্যন্ত গুয়াতেমালাতে বসবাস করছিলেন সাবুরিদো। তার একজন তার এক চাচাতো ভাই খোসে সাবুরিদো টেক্সান নিউজপেপার অস্টিন আমেরিকানকে বলেছেন, সাবুরিদোর ক্যান্সার হয়েছিল।

তিনি আরও জানান মায়ের পাশে তাকে ভেনিজুয়েলাতে সমাহিত করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন তিনি । তার মাও ২০০৬ সালে ক্যান্সারে মারা যায়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি