জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ
প্রকাশিত : ১৩:৩৪, ৩ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৩:৩৬, ৩ মে ২০১৯
ইসলাম ধর্ম বিষয়ক বক্তা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছেন ভারতের কৌঁসুলিরা। বর্তমানে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা নায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২.৮ কোটি ডলার (২.১ কোটি পাউন্ড) মূল্যের অবৈধ সম্পদের মালিক।
নায়েক অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এছাড়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা উদ্রেককারী’ বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং সন্ত্রসবাদকে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগও এনেছে।
৫৩ বছর বয়সী নায়েক তার টেলিভিশন চ্যানেল ‘পিস টিভি’র মাধ্যমে কট্টরপন্থী ইসলামী মতবাদ প্রচার করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতে পিস টিভির সমম্প্রচার নিষিদ্ধ হলেও বিশ্বব্যাপী এই চ্যানেলের ২০ কোটি দর্শক রয়েছে।
দুবাই ভিত্তিক এই চ্যানেলের মালিকানা ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থার - যেই সংস্থাটির প্রধান জাকির নায়েক নিজেই।
২০১৬ সালের পয়লা জুলাই ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালানো বন্দুকধারীদের একজন ‘পিস টিভি’র মাধ্যমে হামলায় উৎসাহিত হয়েছিল - এমন অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশেও পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়।
বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের একটি আদালতে নায়েকের বিরুদ্ধে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ এনে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দাবি করে যে তিনি অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে লক্ষাধিক ডলার অর্থ আয় করেছেন।
সংস্থাটি দাবি করে, নায়েক ‘বিতর্কিত এবং সন্দেহজনক উৎস’ থেকে পাওয়া অর্থ ব্যবহার করে ভারতে ভূমির মালিক হয়েছেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য অর্থায়ন করেছেন, যেসব অনুষ্ঠানে তিনি নিজে ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ দিয়েছেন।
নায়েক অবশ্য দাবি করেছেন তিনি বৈধ পন্থাতেই অর্থ আয় করেছেন। ধর্মের প্রতি জাকির নায়েকের মৌলিক ধারণা সবসময়ই বিতর্কিত ছিল। মুম্বাইয়ের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা ডংগ্রিতে ১৯৬৫ সালে এক ডাক্তার পরিবারে তার জন্ম ।
ডংগ্রি একসময় কুখ্যাত ছিল চোরাকারবারী, অপরাধী জগত এবং গুন্ডাদের আখড়ার জন্য এবং এই এলাকা তার দুর্নাম কখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এলাকাটি দাউদ ইব্রাহিমসহ কুখ্যাত অপরাধীদেরও আবাসস্থল।
তার পিতা ছিলেন চিকিৎসক, তার বড় ভাইও চিকিৎসক। সেন্ট মেরিস হাইস্কুলে লেখাপড়া শেষ করে তিনি মুম্বাইয়ের টোপিওয়ালা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়েন।
১৯৯১ সালে ডাক্তারি ছেড়ে দিয়ে ডংগ্রিতেই তিনি গড়ে তোলেন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, আটক হওয়া অনেক আল-কায়েদা অনুসারী তাদের জবানবন্দীতে বলেছে যে তারা জাকির নায়েকের দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
২০১০ সালে ‘অগ্রহণযোগ্য ব্যবহার’ এবং বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানের জন্য যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয় নায়েকের।
তবে তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম দাবি করেছিল যে হামলাকারীদের একজন জাকির নায়েকের বক্তব্য থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। ঐ মাসেই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ‘পিস টিভি’র সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে।
২০১৬ সালের নভেম্বরে ভারতের কাউন্টার টেররিজম এজেন্সি ধর্মকে পূঁজি করে ঘৃণা ছড়ানো এবং অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য নায়েকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনে। এরপর ২০১৭ মালে নায়েক মালয়েশিয়ায় চলে যান।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এমএইচ/
আরও পড়ুন