লন্ডনে রমজান: সরব মুসলিম কমিউনিটি
প্রকাশিত : ২০:৫৫, ১৯ মে ২০১৯
উৎসব মুখর পরিবেশে মাহে রমজান পালন করছে যুক্তরাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে মুসলিমরা দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা রোজা পালন করলেও সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশে ঘাটতি রাখছেন না তারা।
রমজান মাসকে ঘিরে মসজিদগুলো আরও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। বহুজাতিক মানুষের বসবাস এই যুক্তরাজ্যে। মুসলিম সম্প্রদায় সবার সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে পালন করছে সিয়াম সাধনার এই মাস।
ব্রিটেনে বসবাস করে প্রায় ৮ লাখ বাঙালি। যাদের বেশিরভাগের বসবাস ইস্ট লন্ডনে। ফলে রমজান মাসকে ঘিরে এই এলাকা উৎসবে মেতে ওঠে। ইস্ট লন্ডন মসজিদ ইউরোপ তথা লন্ডনের বড় মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে রমজান মাস জুড়ে চলে নানা ইসলামিক অনুষ্ঠান। গরিব ও দুস্থ মানুষদের জন্য এখান থেকে ফিতরা, জাকাতের অর্থ সংগ্রহ করা হয়। তারাবির নামাজের সময় দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে, সাইকেলে চড়ে, গাড়িতে করে এবং বাসে চড়ে হাজার হাজার মানুষ তারাবির নামাজ পড়তে আসেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ানসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তারাবির নামাজ শেষ বাড়ি ফেরা দেখলে মনে হবে সবাই যেন উৎসব থেকে ফিরছেন।
পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশের বহু মুসলমানের বসবাস এই ব্রিটেনে। ইউরোপের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয় ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনকে। এ শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ। মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ, যা গোটা জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ।
পাশ্চাত্যের যেসব দেশে ইসলামের বিস্তার বা জাগরণ চোখে পড়ার মতো সে সব দেশের মধ্যে ব্রিটেন অন্যতম। শুধু টাওয়ার হ্যামলেটসে মসজিদের সংখ্যা হচ্ছে ৫০-এরও বেশি। প্রতিটি গলিতে একটি করে মসজিদ। টাওয়ার হ্যামলেটসের বাইরে বেশি মুসলমান বাস করেন নিউহাম ও রেডব্রিজ বারাতে। যুক্তরাজ্যে মসজিদের সংখ্যা দেড় সহস্রাধীকের ও বেশি। লন্ডনে এ সংখ্যা ৪ শতাধিক। বিখ্যাত মসজিদগুলোর মধ্যে হচ্ছে, আরবদের তৈরি রিজেন্ট পার্ক মসজিদ এবং হ্যকনি বারাতে তুর্কিদের তৈরি সোলায়মানিয়া মসজিদ। এছাড়া বার্মিংহাম, মানচেস্টার, লুটন, কার্ডিফ এবং এডিনবরায় বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলমানের বসবাস। তারা নিজ নিজ অবস্থানে পবিত্র রমজান মাসকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে। প্রতি বছর রমজান মাসের শুরুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য রমজানের বাণী দিয়ে থাকে। এবারও প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বাণী দিয়েছেন।
লন্ডনে ইফতারের বাজার বেশ জমে উঠেছে। বিশেষ করে ইস্ট লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল, ইস্টহাম, গ্রিন স্ট্রিট এবং ইলফোর্ড এলাকার বিপুল সংখ্যক বাঙালি রেস্টুরেন্ট ইফতারীর পসরা সাজিয়ে বসে। প্রায় প্রতিদিন সব রেস্টেুরেস্টে থাকে ইফতার পার্টি। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ইফতার পার্টির আয়োজন করে। এই আয়োজনকে ঘিরে জমে উঠে ইফতার বাজার। পার্টি ছাড়াও রেস্টুরেন্টগুলোতে ইফতারের সময় স্থান সংকুলান হয় না।
লন্ডনে রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিভিন্ন মসজিদের জন্য তহবিল সংগ্রহ। প্রায় সবগুলো বাংলা টিভি চ্যানেলে বিকাল থেকে শেষ রাত পর্যন্ত ‘চ্যারিটি আপীল’ আয়োজন করা হয়। যার মাধ্যমে অন এয়ারে দর্শকরা অর্থ দেওয়ার ওয়াদা করে থাকে এবং তাদের ব্যাংক ডিটেইলস দিয়ে থাকে টাকা সংগ্রহের জন্য। এ তহবিল সংগ্রহকে কেন্দ্র করে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে গড়ে উঠেছে বিপুল সংখ্যক চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। আবার এসব চ্যারিটি সংগঠন সংগৃহীত অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করছে কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানান বিতর্ক। অনেক চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান অর্থ নিজেরাই আত্মসাত করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সব মিলিয়ে রমজান মাস এলেই বহুজাতিক মানুষের দেশ ব্রিটেনে মুসলিম সম্প্রদায় রমজান মাস পালন করে থাকে যথাযোগ্য মর্যাদায়।
এমএস/ এসএইচ/
আরও পড়ুন