ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সন্তান জন্মদানে বাড়ছে শঙ্কা

প্রকাশিত : ১৭:০১, ২০ মে ২০১৯

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় এক চিন্তার বিষয় হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এ জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীকে ঠেলে দিচ্ছে চরম ক্রান্তি লগ্নে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উন্নত বিশ্বের নারী ও পুরুষদের মধ্যে সন্তান জন্মদানের বিষয়ে অনীহা ও আতঙ্ক তৈরি করছে। এ অবস্থায় অনেকেই সন্তান জন্ম না দেওয়াকে জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয় সম্পর্কে মানুষকে সচেতেনতার কর্মসূচি হিসেবে মনে করছেন। জার্মান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘ডয়চে ভেলে’ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরে।

জার্মানির এ স্কুল শিক্ষিকা ফেরেনা ব্রুনশভাইগার তিনি সন্তান জন্মদানকে চরস এক আকাঙ্খার মাধ্যমে দেখছেন। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তার এই আকাঙ্খা আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়টিকে সামনে রেখে যে সব নারী ও তরুণ-তরুণী সন্তান না নেওয়ার আন্দোলেন শুরু করেছেন, এখন তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের এই বাসিন্দা৷ তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘ সময় গভীরভাবে চিন্তা করেছি৷ ঘটনাচক্রে জলবায়ু পরিবর্তনই  আমার কাছে (সন্তান না নেওয়ার) প্রধান কারণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে৷ অবশ্য আমি অনেক সংগ্রাম করেছি এটা নিয়ে৷ কারণ, আমরা শিশুদের ভালোবাসি৷ আমার স্বামীও একজন স্কুল-শিক্ষক৷ বোধ করি, আমরা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি৷`

বিশ্বের তরুণ সমাজের ছেলে মেয়েদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এমনভাবে প্রভাব ফেলছে যে, তারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তণ করছে। জলবায়ু পরিবর্তণের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড় থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে বলে তরুণরা বেশ চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।

গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে না পারলে ২০৫০ সালের মধ্যে কোটি কোটি মানুষ বিপদে পড়তে যাচ্ছেন না বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে বিমানে কম চড়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, ‘কম সন্তান নেওয়া, উদ্ভিদ জাতীয় খাবার খেয়ে উন্নত বিশ্বের মানুষ ব্যক্তিগতভাবে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে পারেন।’

পৃথিবীর জনসংখ্যা বেড়েই চলছে যেটা একটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বলে মনে করেন জার্মানির স্কুল-শিক্ষিকা ব্রুনশভাইগার। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের ৭৬০ কোটি থেকে ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০০ কোটি হতে চলেছে।’ এটা কার্বন নিঃসরণ ও সম্পদের সমস্যা বাড়ানোর বড় কারণ হবে বলে জানান তিনি।

মিউজিশিয়ান ও অ্যাক্টিভিস্ট ব্লাইথ পেপিনো সন্তান নেওয়ার জন্য বেশ ইচ্ছে পোষণ করলেও ২ বছর আগে তিনি একটি গবেষণা প্রতিবেদনে চোখ বুলিয়ে পাল্টে ফেলেন সিদ্ধান্ত। গবেষণা পত্রটি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয় তুলে ধরে জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদের সম্মুখীন হবে।

যে সব নারী সন্তান জন্ম না দিতে পন করেছেন তাদেরকে নিয়ে ‘বার্থস্ট্রাইক’ নামে বিশ্বব্যাপী একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপ চালু করেছেন পেপিনো৷ ‘জীববৈচিত্র্যে সংকটের ভয়াবহতা এবং সরকারি উদ্যোগের অভাবের` ফলে নারীরা এরকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে তার ভাষ্য৷

পেপিনো রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছি না৷ এটা যখন ভাবি, তখন আমি বুঝতে পারি সন্তান নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷` যদিও এটাকে মায়েদের জন্য এক ধরনের অবিচার বলে মানছেন তিনি৷ কারণ, সন্তান না নেওয়া ‘বড় ধরনের একাকীত্বেরই` ব্যাপার৷ পেপিনো বলেন, ‘বার্থস্ট্রাইক` প্রচারাভিযানের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সহজে ‘দৃষ্টিগ্রাহ্য` বার্তাই দিতে চাচ্ছেন তারা, যা তাদের আন্দোলনে আবেগের সংযোগও তৈরি করছে৷

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উদ্বেগ জন্মহারে কতটা প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উপাত্ত পাওয়া যায়নি৷ তবে ২০১৭ সালের এক হিসেব থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি নারীর গড় সন্তানের সংখ্যা ১ দশমিক ৮-এ নেমে এসেছে, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন৷ অন্য উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে জন্মহার স্থিতিশীল থাকতে কিংবা কমতে দেখা গেছে৷

জনসংখ্যার ওঠানামার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা কষ্টকর হলেও জলবায়ু পরিবর্তন যে এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে তা স্পষ্ট৷ কারণ, একটা বড় অংশের মানুষ এর ফলে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে ভীতি কিংবা অনীহার কথা বলছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার লোকের মধ্যে চালানো এক জরিপে দেখা যায়, ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি নারী সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিচ্ছেন৷ আরেক গবেষণায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্বেগ থাকলেও ৩৩ শতাংশ বলছেন, এরপরও তাঁরা সন্তান নেবেন এবং পরিবার চালু রাখবেন৷

নারীদের এমন উদ্বেগ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জনসংখ্যার সম্পর্ক নিয়ে পুরোনো বিতর্ককে নতুন করে সামনে আনছে৷ কেউ কেউ দুটোকে সম্পর্কিত করার চেষ্টা করলেও অনেকে আবার থোড়াই কেয়ার করছেন৷ কম-সন্তান জন্মদানকে উন্নত বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে একটি সফল উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল ২০১৭ সালের এক গবেষণায়৷ ওই গবেষণায় দেখানো হয়, একটি সন্তান কম জন্ম দিলে, ভবিষ্যতে তিনি এবং তার পরবর্তী প্রজন্মের হাত থেকে বিশ্ব প্রতিবছর ৫৮ টন কার্বন ডাই অক্সাইড রক্ষা পাবে৷

তবে বিষয়টি ভীতিকর বিষয় বলে মনে করেন টেকসই উন্নয়নবিষয়ক পরামর্শক ক্যারেন হার্ডি৷ তিনি বলেন, ‘অনেকে বলতে চান, জনসংখ্যা আর জলবায়ু পরিবর্তনকে` মেলানোর কিছু নেই৷ কিন্তু আমার মনে হয়, এমনটা বলা বালির মধ্যে মাথা লুকানোর মতো৷ আমি দেখেছি, তরুণরা এমন কুসংস্কার ভাঙতে চাইছেন৷` তবে তিনি আরও বলেন, ‘জনসংখ্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক বোঝা খুব সহজ নয়৷ কারণ, কার্বন নিঃসরণের হিসাব বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়৷’

আফ্রিকার দেশ নাইজার পৃথিবীর শীর্ষ জন্মহারের দেশ। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এখানে গড়ে প্রতি নারী সাতজন সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন। তবে বিশ্বব্যাংকের এক হিসেবে দেখা যায়, এই নাজারই কার্বণ নিঃসরণে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। সেখানে প্রত্যেকে প্রতি বছর গড়ে মাত্র দশমিক ১ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণ করে থাকেন৷ এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিজন গড়ে কার্বন নিঃসরণ করে থাকেন ১৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন৷

 তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে।

 

এমএস/ এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি