ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

‘প্রতিদিন আমাকে বাধ্য করা হতো’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০৯, ৩০ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৯:৩৭, ৩০ জুলাই ২০১৯

‘প্রতিদিন চার থেকে ছয়জন পুরুষের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করা হতো’ বলে অভিযোগ তুলেছেন লিলি (ছদ্মনাম) নামে মানব পাচারের শিকার হওয়া এক নারী। মানব পাচারের শিকার হয়ে কিংবা অভিবাসনের পর নানা নির্যাতনের মুখে পড়ে প্রতিদিনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসছে বাংলাদেশের অনেক নারী। যৌন নিপীড়নের সেই বিভীষিকার কথা বিবিসিকে জানিয়েছেন তিনি।

এই নারী বলেন, ‘আমরা ১৫ জন মেয়ে ছিলাম, একবেলা খাবার দিতো, ক্ষুধা-পেটে মদ আর কী কী সব জোর করে খাওয়াতো আমাদের! আমি সহ্য করতে পারতাম না, খালি বমি করতাম। রাতে ঘুমাইতে দিতো না, অনেক বেটা-ছেলে আসত ঘরে। ওদের কথা না শুনলে খুব মারধর করত।’ 

ভালো কাজের লোভ দেখিয়ে জর্ডানের একটি পতিতালয়ে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের এই মেয়েকে যখন মাদক খাইয়ে প্রতিদিন চার থেকে ছয়জন পুরুষের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করা হতো, তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছরের কিছু বেশি।

প্রতিদিন ধর্ষণ আর নানা নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন লিলি ছদ্মনামের ওই নারী। একদিন সেই পতিতালয়ে পুলিশের অভিযান হলে সেখান থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। দুই মাস জেল খাটার পর, আরও কয়েক হাত ঘুরে অবশেষে বাংলাদেশে ফেরেন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই তরুণী। তবে দেশের পরিবার কিংবা সমাজ তাকে আর গ্রহণ করতে চায় না।

লিলি বলেন, ‘বাবা আমার বাচ্চা নষ্ট করতে চাইছে। কিন্তু ডাক্তার বলছে, ছয় মাস হয়ে গেছে, হবে না এখন।’ 

নিজের সমস্যার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে লিলি বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজন, পাড়ার লোক বলে আমি বেশ্যা, জেল খেটে আসছি, আমার সন্তানের বাপের পরিচয় নাই, তাই বাচ্চাটা বিক্রি করে দিতে চায় আমার বাবা।’

এদিকে অবিবাহিত মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দেশে ফেরার পর থেকেই আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে লিলি'র পরিবার।

এ নিয়ে লিলির মা বিবিসিকে বলেন, ‘সমাজ আমাগো চাপ দিছে থাকতে দিবে না, তারা মুখ দেখাইতে পারে না’। সমাজের চাপ ছাড়াও মেয়ে এবং তাঁর সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে এখন আরও বেশি চিন্তিত তিনি।

অনেকেই তাকে শিশুটিকে বিক্রি করার পরামর্শ দিলেও মেয়েকে বিয়ে দিতে চান তিনি। তবে তার শঙ্কা, কোনো 'ভালো ছেলে' কি বাচ্চাসহ লিলিকে বিয়ে করতে চাইবে?

বাংলাদেশে লিলির মতো বিদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে ফিরে আসা নারীদের জীবনযাপন করাটা বেশ কঠিন হয়ে যায়, যখন পরিবার ও সমাজ তাদের সহজে মেনে নিতে পারে না। 

আসলে এ সমাজটাই এমন! লিলিদের দিয়ে উপার্জন করাতে চায়, কিন্তু তাদেরকে যেমন নিরাপত্তা দিতে পারে না। তেমনি আবার কোন সমস্যা হলেও তা মেনে নিতে চায় না। এটাই কি ন্যায় বিচার?

এনএস/এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি