ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

যে কারণে মেগান মার্কেলকে ঘৃণা করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৫, ১ আগস্ট ২০১৯

ব্রিটিশ রাজবধু মেগান মার্কেল একজন মার্কিন অভিনেত্রী, মডেল এবং মানবাধিকার কর্মী। দুই বছর আগেও ব্রিটিশ প্রেসের কাছে পছন্দের পাত্রী ছিলেন তিনি। তারা মেগানের ব্যাপারে বেশ উত্তেজিত ছিল। তাদের দাবি ছিল, মেগানের মতো কাউকে রাজ পরিবারে তারা দেখেনি। কিন্তু সেই মেগান কীভাবে হিরোইন থেকে ভিলেন হয়ে গেলেন প্রেসের কাছে?

চলতি বছরের ৬ জুলাই প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের ছেলে আর্চি হ্যারিসনের ব্যাপটিস হয় উইন্ডসর ক্যাসেলের কাছে একটা চার্চে। দীর্ঘ দিনের প্রথার বিপরীতে এই অনুষ্ঠান হয় রুদ্ধদ্বারে। এর ফলে মেগানের বিপক্ষে নতুন করে সমালোচনার ঢেউ উঠে।

এই সপ্তাহে ম্যাগাজিনগুলো তার উপর খুশি নয়। কারণ তিনি ভোগ ম্যাগাজিনের অতিথি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।

এমন দাবি করা হয়েছে, রানী এটাকে ‘নির্বোধ সিদ্ধান্ত’ মনে করতে পারেন। দ্যা সান পত্রিকা ক্ষিপ্ত হয়ে লিখেছে ‘ট্রেইলব্লেজারস’ এর একটি তালিকায় রানীকে না রাখার জন্য। অন্যদিকে, দ্যা ডেইলি মেইল সতর্ক করে বলছে রাজনীতি থেকে দুরে থাকার জন্য।

চলতি বছরের বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালীন প্রকাশনাগুলো ডাচেস অব সাসেক্স ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড প্রেসে নিজেকে একজন ভিলেন হিসেবেই খুঁজে পেলেন।

দুই বছর আগেও প্রেস থেকে তার সঙ্গে মহান সহানুভূতি নিয়ে সাক্ষাত করত। কিন্তু এখন মেগান নিজেকে প্রতিটা মুহূর্তে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলে মনে করছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে একটি তিনি রাজপরিবারে খাপ খাওয়াতে পারছেন না।

২০১৭ সালের বসন্ত সংখ্যায় ব্রিটিশ প্রেসের কাছে মেগান ছিলেন প্রিয় পাত্রী। প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে তার প্রথম বারের প্রকাশ্যে ছবি আসলে দ্যা সানের মত পত্রিকা সেটির কাব্যিক বর্ণনা দিয়েছিল। পড়ুয়া বড় ভাই উইলিয়ামের বিপরীত হ্যারির সম্পর্কে সব সময় ড্রাগ এবং ওয়াইল্ড পার্টি করার খবর আসত ম্যাগাজিনে।

কিন্তু সেসব কিছু ব্রিটিশ প্রেস মাফ করে ভুলে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। তারা মেগানকে পছন্দ করত। সমাজের সব পরিবর্তনের ব্যাপারে তার একটা নিজস্বতা রয়েছে। গত বছরে টাবলয়েডগুলো তার সম্পর্কে বিদ্রুপ করে লিখলেও সহানুভূতির সুরটা ধরে রাখে।

প্রথমত মেগানের বাবা বিয়েতে আসতে পারেনি, আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় তিনি অসুস্থ। তারপর মেগান বিয়েতে যে মুকুট বা টায়রা পরতে চেয়েছিলেন রানী সেটাতে রাজী হননি।

কারণ ধারণা করা হয়েছিল সেটা রাশিয়ার তৈরি। সময়টা ছিল এমন যখন সার্গেই এবং ইউলিয়া স্ক্রিপালকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে এমন একটা খবর উঠছিল। রানী চাননি কোনভাবে বিয়ের দিন রাজনৈতিক বা নেতিবাচক কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়।

চলতি বছরের বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালীন সংখ্যায় তাদের প্রথম সন্তান হওয়ার পরেও তিনি ব্রিটিশ প্রেসের অন্যতম সমালোচিত ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করলেন।

এখন তার সবকিছুতে এমনকি তার ঘর মেরামতের জন্য বড় অংকের অর্থ খরচ, সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার ব্যবহার, প্রকাশ্যে সে কীভাবে আসছে, তার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সব কিছুতেই এক রকম জ্বালাতনের শিকার হচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা-

১. নব দম্পতি তাদের ফ্রগমোর কটেজ মেরামতের জন্য ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে, যেটা ব্রিটিশ করদাতাদের পকেট থেকে গেছে।

২. মেগানের এনগেজমেন্ট রিঙ এ তিনটি ডায়মন্ড ছিল। এর দুইটি ডায়ানার। আর একটি হ্যারি বতসোয়ানাতে থেকে নিয়েছিলেন। কারণ সেখানে তারা প্রথম ছুটি কাটান। হ্যারি নিজে এই আংটি ডিজাইন করেছিলেন। বিয়ের এক বছর পর মেগান রিংটি আবারো ডিজাইন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং আরো ডায়মন্ড যুক্ত রিং দেখা গেল তার হাতে। এটা নিয়ে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন।

৩. এরপর তিনজন কর্মীকে ছাটাই করার অভিযোগ এসে পরে মেগানের উপর।

৪. আর্চির ছবি তারা ইন্সটাগ্রামে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেটা নিয়ে মিরর ব্যাপক সমালোচনা করে।

বাকিংহ্যাম প্যালেস এসব নিয়ে মন্তব্য করেনি। বিবিসির রাজপরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা জনি ডায়মন্ড বলছেন ‘রাজকীয় জীবন হল এক হাতে প্যালেস, খ্যাতি। কিন্তু তারকাদের চেয়ে এর বড় পার্থক্য হল এর একটা দায়িত্ব আছে। আপনি প্লেনে উঠলেন এবং ছুটি কাটাতে চলে গেলেন এমনটা হবে না। এই জীবনের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে’।

রাজপরিবারের কেউ সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিবাদে জড়াবে না। কিন্তু মেগান এবং প্রিন্স হ্যারিকে একবার দেখা গেছে ‘গভীর আলাপচারিতায়’। তারা অটোগ্রাফ দিতে পারবেন না কিন্তু মেগান খুশি মনেই সেটা করতে থাকেন।

মেগানকে দেখে মনে হয় সে নতুন করে নিয়মগুলো লিখতে চান কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা সেগুলো ঘৃণা করে। ডায়মন্ডের মতে ম্যাগাজিনগুলোর একটা ভূমিকা রয়েছে মেগানের পাবলিক ইমেজ তৈরির পিছনে।

তিনি বলছিলেন, গল্পের শুরুটা হয়েছে মেগান যখন এখানে এসেছে তখন থেকে। এখন তাদের এই বর্ণনা চালিয়ে যেতে হবে।

ম্যাগাজিনগুলো অনেক সময় পরিবারের এক সদস্যের বিরুদ্ধে এসব লেখে যাতে করে সংকট আরো বাড়তে পারে।

রানী এলিজাবে থকে দেখানো হয়েছে স্বচ্ছন্দে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি তার দায়িত্ব কতটা নিবিড়ভাবে পালন করে আসছেন।

একই সময়ে তার বোন প্রিন্সেস মার্গারেট ছিলেন উল্টো। তার প্রেমিক, ধুমপান করা, মদপান, পার্টি করা এমনকি গোসল করার পোশাকে দেখা গেছে।

প্রিন্সেস ডায়ানার সময় তার নম্রতার জন্য তার ব্যাপক প্রশংসা করা হত কিন্তু তার ভালো বন্ধু সারা ফারগুসন যখন ডাচেস অব ইয়র্ক হলেন তখন তারা একই রকম আচরণ করেনি।

এখন শুরু হয়েছে কেট মিডলটন এবং মেগানের মধ্যে। কেটের ইমেজ তৈরি হয়েছে নিখুঁত এবং ‘জন্মগতভাবে মা’ হিসেবে।

কিন্তু যখন মেগানের প্রসঙ্গ আসে তখন প্রিন্স ফিলিপের একটা উক্তি অনেকেই আওরায় ‘একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে বাইরে যাওয়া যায়, কিন্তু বিয়ে নয়’।

এখন দাতব্যকাজ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ফাটল ধরেছে। উইলিয়াম এবং হ্যারির করা যৌথ দাতব্য কাজ থেকে সরে এসেছেন হ্যারি।

তারা মনে করছেন হ্যারি এবং মেগান আলাদা করে এটা চালাবেন এবং ভিন্ন ভিন্ন কারণে সেটা কাজ করবে।

(বিবিসি অবলম্বনে)


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি