ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা করে দিচ্ছে চীন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৫৩, ১৪ আগস্ট ২০১৯

চীনের উইঘুর গোত্রভুক্ত মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা করে দেয়া হচ্ছে। দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে কথিত ‘রি-এডুকেশন সেন্টার’-এ আটক ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমের মধ্যে যেসব নারীবন্দী রয়েছেন তাদের সঙ্গে এমনটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়া দুই মুসলিম নারী। 

মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্ট ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। চীনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এসব মুসলিম দীর্ঘদিন ধরে জিনজিয়াংয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

জিনজিয়াংয়ের সেসব বন্দী শিবিরে একসময় বন্দি থাকা নারীদের একজন গুলবাহার জালিলোভা। চীনা সরকারের কথিত ‘পুনঃশিক্ষা’ বন্দিশিবিরে এক বছরের বেশি সময় আটক ছিলেন তিনি। পরে বুদ্ধি খাটিয়ে একসময় সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি। ফ্রেঞ্চ২৪-কে অভিযোগের সুরে গুলবাহার বলেন, ‘নিয়মিত বিরতিতে আমাদের শরীরে ইনজেকশন দেয়া হতো।’

চীনা সরকারের নির্যাতনের শিকার ৫৪ বছর বয়সী ওই উইঘুর নারী বলেন, ‘দরজার ছোট্ট একটি খোলা অংশে আমাদের হাত-পা বেঁধে রেখে ইনজেকশন দেয়া হতো। ইনজেকশন দেয়ার পর আমরা বুঝতে পারলাম কোনওভাবেই আমাদের আর পিরিয়ড (ঋতুস্রাব) হচ্ছে না।’

গুলবাহার আরও বলেন, ১০ ফুট বাই ২০ ফুট ছোট্ট একটি সেলে (কক্ষে) ৫০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে থাকতে দেয়া হতো। চলাফেরা তো দূরে থাক, কোনওরকম নড়াচড়া করতে পারতাম না। তখন নিজেকে একটা মাংসের টুকরো বলে মতে হতো।

গুলবাহারের মতো এমনই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন মেহেরগুল নামে ৩০ বছরের আরেক নারী। যিনি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত। ২০১৭ সালে যখন জিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরে ছিলেন তখনকার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘নাম জানা কত ওষুধ সেবন এবং ইনজেকশন নিতে বাধ্য করা হতো আমাদের।’

মেহেরগুল বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ অচেতন হয়ে পড়েছিলাম। সেসব দিনের কথা কিছুই মনে করতে পারি না। আমার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছিল এবং আমি সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। চার মাস পর যখন প্রমাণিত হলো আমি মানসিকভাবে অসুস্থ তখন আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।’

মেহেরগুল জানান, যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পর তাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হলে জানতে পারেন, তাকে ইনজেকশনের মাধ্যমে বন্ধ্যা বানানো হয়েছে। তিনি আর কখনও সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না। আরও লাখ লাখ নারীকে এভাবে জোরপূর্বক বন্ধ্যা করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই দুই নারী।

এদিকে চীনের কথিত রাজনৈতিক পুনঃশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে উইঘুর সম্প্রদায়ের ১০ লাখ মুসলিমকে আটক রাখা হয়েছে উল্লেখ করে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তবে বরাবর এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে চীন সরকার।

গবেষকরা বলছেন, ‘যুদ্ধের সময় বন্দি শিবিরগুলোতে যেভাবে পুনঃশিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয় ঠিক সেভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে উইঘুর মুসলিমদের। পদ্ধতিগতভাবে তাদেরকে দীক্ষায়ন করার কাজটি করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা প্রকৃতপক্ষে সাংস্কৃতিক গণহত্যা।’

মূলত স্বর্ণ, তেল ও গ্যাসসম্পদে সমৃদ্ধ জিনজিয়াং প্রদেশটি চীনের পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। অঞ্চলটির অধিবাসীদের মধ্যে মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। যারা সবাই উইঘুর মুসলমান। ভাষাগত দিক দিয়ে তারা চীনা নয়, তুর্কি গোষ্ঠীর অন্তর্গত। কথাও বলেন উইঘুর ভাষায়। স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করতে পারে ভেবে তাদের আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছে চীন সরকার। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি