ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

কাশ্মীরে কেন লাখ লাখ সেনা প্রশ্ন অরুন্ধতি রায়ের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:১৮, ২০ আগস্ট ২০১৯

কাশ্মীরে যেখানে সরকার দাবি করছে যে গুটিকয়েক জঙ্গি ছাড়া বেশিরভাগ মানুষ তাদের সমর্থন করে, সেখানে কেন লাখ লাখ সেনার উপস্থিতি এমন প্রশ্ন রেখেছেন স্বনামধন্য ভারতীয় মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায়।

তিনি বলেন, ‘কাশ্মিরের নিরাপত্তা বাহিনীর টহল ও ব্যারিকেডে ঘেরা রাস্তাগুলোতে এখন সুনসান নীরবতা, প্রায় ৭০ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ ও অপদস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। কাঁটাতারে বন্দি এসব মানুষের ওপর ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে পুরোপুরি অচলাবস্থার মধ্যে বাস করতে হচ্ছে তাদের। যদি তথ্যপ্রবাহের এ যুগে সরকার এতো সহজে গোটা জনসংখ্যাকে বাকি দুনিয়া থেকে কয়েক দিন ধরে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারে, তবে সামনের সময়গুলো কেমন হবে তা গুরুতরভাবে ভাবনার বিষয়।’

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ লেখা নিবন্ধে এভাবেই কাশ্মিরের সাম্প্রতিক সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন স্বনামধন্য এ লেখক।

সোমবার (৫ আগস্ট) ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মিরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একটি বিলও পাস করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। 

সেখানকার বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের দাবি, রাজ্য পুলিশসহ সেখানে প্রায় ৭ লাখ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। যা উপত্যকাকে বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত এলাকায় পরিণত করেছে। ৩৭০ ধারা বাতিলের আগ মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মিরে আধাসামরিক বাহিনীর ৩৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে নতুন করে সেখানে নিয়োজিত হয় আধা-সামরিক বাহিনীর আরও ৮ হাজার সদস্য। 

১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে ‘নীরবতাই সবথেকে জোরালো আওয়াজ’ (The Silence Is the Loudest Sound) শিরোনামের নিবন্ধে অরুন্ধতী রায় লিখেছেন,  "স্বাধীনতা পরবর্তী ৭২ বছরে ভারতের বিভিন্ন সরকার ‘ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন’ এর শর্ত ক্ষুণ্ণ করতে করতে একে কংকালসারে পরিণত করেছে। আর এখন তা ছুড়ে দেওয়া হয়েছে নরকের দিকে। কাশ্মিরকে বলা চলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিকায়িত অঞ্চলগুলোর একটি কিংবা শীর্ষ সামরিকায়িত অঞ্চল। ভারতীয় সেনাবাহিনী এখন নিজেরাই দাবি করে যে ওই অঞ্চলে কেবল গুটিকয়েক ‘জঙ্গি’ আছে। এ গুটিকয়েক জঙ্গিকে ঠেকাতে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে ৫ লাখেরও বেশি সেনা সদস্য।”

নিবন্ধে বলা হয়, ‘আগে যদি কারও কোনও সন্দেহ থেকেও থাকে, তবে এখন অন্তত নিশ্চিত হয়ে যাওয়া উচিত যে কাশ্মিরি জনগণই তাদের [ভারতীয় কর্তৃপক্ষের] সত্যিকারের শত্রু। গত ৩০ বছরে কাশ্মিরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যা কিছু করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। কাশ্মির সংঘাতে বেসামরিক, সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। লাখো মানুষ গুম হয়ে গেছে। নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। এর মধ্য দিয়ে এক রকম আবু গারিবে পরিণত হয়েছে উপত্যকা।’

অরুন্ধতী মনে করেন, প্রথম মেয়াদে নরেন্দ্র মোদির কঠোর অবস্থানের কারণে কাশ্মিরে সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে। এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০ জন সদস্যকে। বুকারজীয় এই লেখক তার নিবন্ধে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের দুই মাস পার হয়ে গেছে। তার সরকার সবচেয়ে বিপজ্জনক চালটি দিয়েছে। তারা আগুনে ঘি ঢেলেছে। এটি যদি যথেষ্ট খারাপ কাজ না হয়েও থাকে, তারপরও যে সস্তা ও প্রতারণাপূর্ণ উপায়ে কাজটি করা হয়েছে তা লজ্জাজনক। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে বিভিন্ন অজুহাতে কাশ্মিরে ৪৫ হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতোয়েন করা হয়েছে।’

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি