কাশ্মীর নিয়ে ফের মধ্যস্থতার প্রস্তাব মার্কিন প্রেসিডেন্টের
প্রকাশিত : ১৬:৪৪, ২১ আগস্ট ২০১৯
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি এ অঞ্চলকে ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন এটি একটি জটিল জায়গা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলার একদিন পরেই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, কাশ্মীর নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার প্রচেষ্টা করতে পারায় তিনি খুশি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সহজ সম্পর্ক তৈরি না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এর জন্য দায়ী ধর্মই।
হোয়াইট হাউজে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “কাশ্মীর একটি খুবই জটিল জায়গা। হিন্দুও রয়েছে এবং মুসলিমও রয়েছে, এবং আমি বলতে পারি না যে তারা একসঙ্গে ভাল রয়েছে”। জানিয়েছে এনডিটিভি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মধ্যস্থতা করতে, আমি যতটা পারব করব’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা দুটি দেশ, দীর্ঘসময় ধরে একসঙ্গে এবং ঘনিষ্ঠভাবে থাকতে পারছেন না, এটা খুবই বিস্ফোরক পরিস্থিতি’। এর আগেও মধ্যস্থতা করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট-সপ্তাহান্ত বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথাও বলতে পারেন বলে জানান তিনি। ফ্রান্সে সাতটি দেশের শিল্প সম্মেলনে (G7) দুই রাষ্ট্রনেতার সাক্ষাৎ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায়, “আমি মনে করি, আমরা বিষয়টিকে সাহায্য করছি। যেমনটা আপনারা জানেন, দুই দেশের মধ্যে প্রচণ্ডরকম সমস্যা রয়েছে। মধ্যস্থতা করতে আমি যতটা পারি করব অর্থাৎ কিছু তো করব”। তার কথায়, “তাদের দুজনের ভাল সম্পর্ক, তবে এই মুহুর্তে তারা একে অপরের বন্ধু নয়। জটিল পরিস্থিতি, ধর্ম নিয়ে অনেক কিছু করতে হবে। ধর্ম একটা জটিল বিষয়”।
ভারত ও পাকিস্তান রাজি থাকলে, তিনি মধ্যস্থতায় রাজি বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতমাসে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বিবৃতিতে ভারতকে অবাক করে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন,কাশ্মীর নিয়ে নাকি তাঁর “মধ্যস্থতা” চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি—যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে ভারত।
সোমবার, তার “দুই ভাল বন্ধু”-প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা কমানোর জন্য দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানকে তাদের “ভারতের প্রতি বক্তব্য পরিবর্তন” করারও পরামর্শ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তার আগে সোমবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ৩০ মিনিট ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানেই তিনি বলেন, “ওই এলাকায় কিছু নেতার ভারত বিরোধী উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য, শান্তি ফেরানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে”, এমনটাই জানানো হয়েছে সরকারের তরফে। প্রধানমন্ত্রী দফতরের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাস এবং হিংসা থেকে মুক্ত, এবং সীমান্ত সন্ত্রাস মুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহারের পর সেটাই ছিল দুই নেতার প্রথম ফোনালাপ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফোনালাপের পরেই, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ফোন করেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেই কথোপকথন সম্পর্কে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, “পরিস্থিতির উত্তেজনা বাড়ানো এড়ানোর কথা বলেছেন ট্রাম্প, দুপক্ষকেই শান্তি ফেরাতে বলেছে। দুই নেতাই, আমেরিকা-পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে, একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন দুই নেতা”।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদ জানায়, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহার করা ভারতের পদক্ষপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে তারা। তার প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রসংঘে ভারতের প্রতিনিধি সইদ আকবরউদ্দিন বলেন, “সবদেশই তাদের যা করার, সবকিছু করতে পারে। যদিও পদক্ষেপ একটু অন্যরকম ছিল। অন্যমঞ্চ থেকে তারা যদি আমাদের সঙ্গে লড়তে আসে, আমরা সেখানে সেটা বলব। এটা তাদের বেছে নেওয়া জায়গা। তারা একবার চেষ্টা করেছে, তবে সফল হয়নি”।
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারস্থ হয়ে, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের পদক্ষেপকে হাতিয়ার করে আলোড়ন তৈরি করতে চেয়েছিল পাকিস্তান। তবে বেশীরভাগ দেশই একমত হয় যে, জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহার, এবং রাজ্যটিকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার বিষয়টি নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের দ্বিপাক্ষিক বিষয়।
এসি
আরও পড়ুন