সৌদিকে পাল্টাতে চান যে নারী
প্রকাশিত : ২২:২২, ৩০ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ২৩:৫৮, ৩০ আগস্ট ২০১৯
পুরুষদের তুলনায় নারীদের চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তুলনামূলকভাবে অনেক কম দেখা যায়। বিশেষ করে সে সমস্ত দেশে, যেখানে নারীরা সমানাধিকার ভোগ করতে পারছেন না। অবশ্য সৌদি আরবের হাইফা আল-মনসুর পেরিয়ে এসেছেন অনেক বাধা-বিপত্তি।
এখানে রয়েছে পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য। কোন নারীর এই জগতে সাফল্য-পরিচিতি-জনপ্রিয়তা পাওয়া কঠিন। আর যদি তিনি হন সৌদি আরবের - তাহলে তো কথাই নেই।
এদিকে গত ২৮ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শীত হয়েছে হাইফার নির্মিত ‘দ্য পারফেক্ট ক্যানডিডেট’ ছবি। ছবিটি তুমুল প্রশংসা পেয়েছে।
জেন্ডার পলিটিকস নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি ফিল্ম ফেস্টিভালের প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়ছে বিভিন্ন দেশের ছবির সঙ্গে।
এর আগে তার ডকুমেন্টারি ‘ছায়াবিহীন নারী' নির্মাতা হিসেবে তাকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তবে খ্যাতির বিড়ম্বনাও তাকে সহ্য করতে হয়েছে।
তার মতে, ‘কর্পোরেট দুনিয়া হোক কিংবা রাজনীতি বা ছবি নির্মাণ, সব যায়গাতেই নারীকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। অনেক প্রতিবন্ধকতা আসে যা পুরুষের সামলাতে হয় না। এমনকি কেমন পোশাক পরা হচ্ছে বা কী কথা বলা হচ্ছে, সেটাও বিচার করা হয়।’
হাইফা আল-মনসুর একটি শিক্ষিত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন, বড় হয়েছেন৷ তার বাবা ছিলেন কবি এবং তিনি সবসময় চেয়েছেন মেয়ে ক্যারিয়ার গড়ুক৷
সে কারণেই তিনি হাইফাকে কায়রোর অ্যামেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঠান। মেয়েকে সাহিত্য পড়াতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু হাইফার ঝোঁক এবং মনোযোগ ছিল চলচ্চিত্রে, সিনেমায়। তার প্রথম ডকুমেন্টারি তৈরি সাধারণ সৌদি নারীদের জীবনকে ঘিরে।
তিনি বলেন, আমি এমন একটি বিষয় নিয়েছি যা আমাকে ব্যাক্তিগতভাবে ভীষণ নাড়া দেয়। সৌদি নারীদের জীবনকে সহজ করা বা বোঝা সত্যিই কঠিন কাজ। যারা সাহায্য করেছেন তারা সবাই বাইরে থেকে এসেছেন।
যেমন একটি টেলিভিশন চ্যানেল একজন পরিচালক পাঠালেন যার সৌদি নারী, সমাজ, সংস্কৃতি সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। তিনি বাইরে থেকে আমাদের জীবনের আবরণ দেখেছেন এবং তার ওপর ভিত্তি করেই ছবি তৈরি করেছেন। একারণেই আমি অন্য একটি চিত্র তুলে ধরতে চাই৷ যেখানে সৌদি নারীদের সত্যিকার জীবন, গোপন জীবন স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠবে।
হাইফা জানান, সৌদি আরবে নারীদের সবচেয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়েছে। কেউই তাদের কথা শুনতে রাজি নন বা করোরই সময় হচ্ছে না। এমনকি নিজ বাড়িতেও নয়।’
তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র পরিচালনা এমন একটি কাজ যেখানে সাধারণত পুরুষদের পদধ্বনিই বেশি শোনা যায়। খুব কম সংখ্যক নারী এই পেশায় সাফল্য অর্জন করেছেন। হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন জিতেছেন অস্কার অথবা গোল্ডেন বেয়ার।’
প্রচার মাধ্যমগুলো শুধু সাফল্য এবং ইতিবাচক খবরের পেছনে দৌড়াচ্ছে। বেশ গলা উঁচিয়ে প্রথম নারী সৌদি পরিচালকের কথা বলছে তারা।
কিন্তু, তাদের কাছে কখনোই সাধারণ-দুঃখী এসব নারীর কথা শোনা যাবে না। যারা কখনোই পড়াশোনার সুযোগ পায়নি, শিক্ষার আলো থেকে যারা বঞ্চিত। সৌদি সমাজে এসব মহিলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আমি তাদের একটি সুযোগ দিতে চাই৷ তাদের কথা শুনতে চাই, শোনাতে চাই৷
এ বিষয়ে হাইফা জানান, এখানে কোন অভিনেত্রী নেই। সৌদি সমাজে কোনো নারী পরিচালক ছবি তৈরি করছে - তাতে কেউই অভ্যস্ত নয়। তাই আমাকে একাই সব কাজ করতে হয়েছে।
পরিচালক হিসেবে আমাকে অনেক পুরুষের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। কাজ করতে হয়েছে বিভিন্ন অভিনেতা এবং ক্যামেরাম্যানদের সঙ্গেও। আর তাও সহজে মেনে নেওয়া হয়নি। সব জায়গায় যাওয়ার স্বাধীনতা বা অনুমতি আমার ছিল না।
তবে আমি বিশ্বাস করি, সৌদি সমাজের দৃষ্টিকোণ পাল্টাচ্ছে। অনেক সমস্যা এখনো রয়েছে। তবে আশা করছি সবকিছুরই সমাধান হয়ে যাবে।
তথ্যসূত্র: ভ্যারাইটি, ডয়েচে ভেলে
এমএইচ/
আরও পড়ুন