ব্রেক্সিট নাটকের শেষ কোথায়
প্রকাশিত : ১৮:৪১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২২:৩৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ব্রেক্সিট প্রশ্নে ব্রিটেনের রাজনীতি গত প্রায় তিন বছর ধরেই উত্তপ্ত। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যে ব্রিটেনের হাতে এখন দু'মাসেরও কম সময়। এর মধ্যেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি চুক্তি করে নাকি চুক্তি ছাড়াই ই.ইউর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটাবে।
আগামী ৩১শে অক্টোবরেই তাদের এই ইউরোপীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তো এখন আর কী কী হতে পারে? কোন ধরনের চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাবে ৩১শে অক্টোবর রাত ১১টায়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলছেন, বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি ইইউর সাথে নতুন করে চুক্তি করতে চান। তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করে দেয়েছেন যে সমঝোতা হোক কি না হোক ৩১শে অক্টোবরেই ব্রিটেন ইইউর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কোন ধরনের চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে ব্রিটেনকে সাথে সাথেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাস্টমস ইউনিয়ন এবং একক বাজার থেকে বের হয়ে যেতে হবে। এই সমঝোতার আওতাতেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকে।
অনেক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ধারণা এরকম কিছু হলে ব্রিটেন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে বাকিদের কথা এলো এসব অতিরঞ্জিত।
চুক্তি-বিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে এমপিদের চেষ্টা
কোন ধরনের চুক্তি ছাড়াই ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার (যা 'নো ডিল ব্রেক্সিট' নামে পরিচিত) প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এমপিরা একাধিকবার ভোট দিয়েছেন। বিরোধী দলগুলোর এমপিরা এখন ক্ষমতাসীন কনসারভেটিভ দলের কিছু এমপিকে সাথে নিয়ে নো-ডিল ব্রেক্সিট ঠেকাতে নতুন আইন করার চেষ্টা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ৩১শে অক্টোবরের মধ্যেই ইইউ থেকে বের হয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর। কিন্তু এজন্যে তাদের হাতে সময় আছে খুবই কম কারণ আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে পার্লামেন্টকে কিছু দিনের জন্যে স্থগিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এমপিরা সংসদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে।
এখন তারা নতুন একটি আইন পাস করানোর চেষ্টা করবেন যেখানে সরকারকে বলা হবে ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ২০২০ সালের ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে। প্রস্তাবিত এই আইনের উপর ৪ঠা সেপ্টেম্বর, বুধবার পার্লামেন্টে আলোচনা হবে। বিতর্কের পর এনিয়ে ভোটাভুটিও হবে। পরে সেটা হাউজ অব লর্ডসে পাঠানো হবে ৫ই সেপ্টেম্বর। সংসদের দুটো কক্ষে বিলটি পাস হলে সেটি রানীর কাছে পাঠানো হবে। রানী অনুমোদন দিলে সেটি ৯ই সেপ্টেম্বর, সোমবার আইনে পরিণত হবে।
আগাম নির্বাচন
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আগাম নির্বাচন ঘোষণা করতে চান। তবে তিনি চাইলেই সেটা হবে না। এজন্যে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ এমপির সম্মতি প্রয়োজন। গণমাধম জানতে, তিনি চান ১৫ই অক্টোবর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। প্রধানমন্ত্রীর যে লক্ষ্য সেটা পূরণের জন্যে তাত্ত্বিকভাবে তার সামনে আরো একটি পথ খোলা আছে।
আগাম নির্বাচন ডাকতে দুই তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন লাগলেও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট। কাজেই আগাম নির্বাচনের দিন তারিখ উল্লেখ করে তিনি নতুন একটি সংক্ষিপ্ত আইন পাস করতে পারেন। নির্বাচনের দিন তারিখ যদি ৩১শে অক্টোবরের আগে নির্ধারণ করা হয় তাহলে ব্রেক্সিটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর।
অনাস্থা ভোট
চুক্তি-বিহীন ব্রেক্সিট ঠেকানোর লক্ষ্যে আইন পাস করতে এমপিরা ব্যর্থ হলে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনারও সম্ভাবনা রয়েছে। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনও এর আগে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা বলেছিলেন।
যদি বেশিরভাগ এমপি এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় তখন ১৪ দিন সময় থাকবে বর্তমান সরকার কিম্বা নতুন কোন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিকল্প কোন সরকার আস্থা ভোটে জিততে পারবে কীনা। এই প্রক্রিয়ায় নতুন সরকার গঠিত হলে তারা ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাতে পারে। নতুন করে নির্বাচনেরও আয়োজন করতে পারে, পারে ব্রেক্সিট প্রশ্নে আরো একটি গণভোটেরও ডাক দিতে।
কিন্তু আস্থা ভোটে যদি কেউ জয়ী না হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন এবং সেটা তিনি ৩১শে অক্টোবরের পরেও করতে পারেন। এর মধ্যেই ব্রিটেনের সাথে ইইউর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। নো-ডিল ব্রেক্সিট ঠেকাতে বরিস জনসনের সরকার চাইছে পার্লামেন্টে ইইউর সাথে করা একটি সমঝোতা অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ অনুমোদন করতে।
বর্তমানের সমঝোতা হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র নেতৃত্বে যা পার্লামেন্টে কয়েকবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও বলেছেন, ওই সমঝোতা এখন মৃত। অনেকেই ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করছেন।
সরকার আশা করছে তারা ইইউর সাথে নতুন একটি সমঝোতা করতে সক্ষম হবে, অথবা যেটুকু সমঝোতা হয়েছে সেখানেও সংশোধন আনতে পারবে বিশেষ করে আইরিশ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার (ব্যাকস্টপ) ব্যাপারে। সরকার এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করছে। ব্যাকস্টপ ব্যবস্থাপনায় ব্রিটেনের সাথে ইইউর সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড সীমান্তে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বরিস জনসন এই সমঝোতার বিরোধিতা করলেও ওই সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিকল্প কোন প্রস্তাব দিতে পারেনি।
ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়া ব্রেক্সিট পিছিয়ে দিতে এমপিরা ব্যর্থ হলেও, ব্রিটেন এককভাবে এই তারিখ পেছাতে পারবে না।
এব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য দেশকেও একমত হতে হবে। তবে এর আগেও ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে এবং অন্যপক্ষের দেশগুলোও তাতে সম্মতি দিয়েছে।
ব্রেক্সিটে বাতিল করারও আইনি উপায় রয়েছে। এজন্যে শুধু সরকারকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে পাঠানো আর্টিকেল ৫০ প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তবে এটা পরিস্কার যে বর্তমান সরকার সেরকম কিছু করছে না। তবে সেরকম কিছু হওয়ার কল্পনা করা যেতে পারে শুধু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরেই।
টিআর/
আরও পড়ুন