ট্রাম্পকে অভিশংসনে ন্যান্সির তদন্ত শুরু
প্রকাশিত : ১৩:২১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের জন্য শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য বিদেশি শক্তির সাহায্য নেয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ তদন্ত করা হচ্ছে। খবর বিবিসি’র।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ‘দায়বদ্ধতা প্রদর্শনে বাধ্য।’ তবে ট্রাম্প কোনও ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সেইসঙ্গে এই প্রয়াসকে পরিহাস করেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের একটি ফোনালাপের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার পর এই বিতর্ক সামনে আসে।
ওই ফোনালাপে কী বিষয়ে কথা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে তিনি সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ তদন্ত না করলে ইউক্রেনে সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
জেলেনস্কির সঙ্গে জো বাইডেনের বিষয়ে আলোচনা করার বিষয়ে স্বীকার করেছেন ট্রাম্প, তবে তিনি বলেছেন সামরিক সহায়তা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে তিনি ইউরোপের কাছ থেকে সহায়তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলেন।
পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্প ‘আইন ভঙ্গ করেছেন’ এবং ট্রাম্পের কাজকে ‘সাংবিধানিক দায়িত্বের লঙ্ঘন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে পদক্ষেপ নিতে বলার বিষয়টি তাকে রাজনৈতিকভাবে লাভবান করবে। এর জন্য তাকে জবাবদিহিতার অধীনে আনতে হবে।
বাইডেন অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট তদন্তে সহযোগিতা না করলে নিজেও অভিশংসনের বিষয়টিকে সমর্থন করছেন। বাইডেন বলছেন, ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হবে ট্র্যাজেডি।
ধারাবাহিক কয়েকটি টুইটে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার জাতিসংঘ সফর বানচাল’ করার উদ্দেশ্যে এই ধরণের অভিযোগ ছড়াচ্ছে। এমনকি তারা ফোনালাপের ট্রানস্ক্রিপ্টও দেখেনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ যে ‘সম্পূর্ণ যথাযথ’ ছিল তা নিশ্চিত করতে বুধবার তাদের ফোনালাপের একটি লিখিত ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করবেন বলে জানান ট্রাম্প।
হাউজের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি জানান, স্পিকার পেলোসি এই হাউজের স্পিকার হলেও এই বিষয়ে কথা হলে তিনি যুক্তরাষ্টের জন্য কথা বলেন না। অভিশংসনের তদন্তের বিষয়টি তিনি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তদন্ত সংস্থার পরিচালক জোসেফ ম্যাগওয়াইর কংগ্রেসে ফোনালাপ ফাঁসকারী ব্যক্তির রিপোর্ট পেশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির শুনানিতে সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে তার।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবর অনুযায়ী, ফোনালাপ ফাঁসকারী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন এবং হোয়াইট হাউজ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ওই ব্যক্তিকে কংগ্রেসে কথা বলার সুযোগ দেয়ার চেষ্টা করছেন।
পেলোসি’র ঘোষণার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপের বিষয়ে তদন্ত করার আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটি যাচাই করতে পারবে যে এটি অভিশংসন করার মতো গুরুতর অপরাধ কি না।
পেলোসি তার ঘোষণায় জানিয়েছেন, অন্যান্য বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আরও ছয়টি কমিটির যে তদন্ত চলছে তা চলমান থাকবে।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে বা হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস পর্যন্ত গেলে এটি সহজেই পাস হয়ে যাবে যেহেতু সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ডেমোক্র্যাটদের। কিন্তু তারপর এটি সিনেটে যাবে যেখানে রিপাবলিকানরা নিয়ন্ত্রণে এবং সেখানে এটি পাস হতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে।
ব্রিটিশ একটি সংস্থা ইউগভ এর একটি জরিপে প্রকাশিত হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জো বাইডেনের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের ওপর জোর প্রয়োগ করেছিলেন। এটি যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ৫৫ শতাংশ আমেরিকান অভিশংসন সমর্থন করবেন।
আরও পড়ুন