বুলেটের আঘাতে অন্ধ হলেন সাংবাদিক
প্রকাশিত : ১৭:৩৩, ৩ অক্টোবর ২০১৯
হংকংয়ে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ চলছেই। এ বিক্ষোভ চলাকালে দেশটিতে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটের আঘাতে স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়ার এক সাংবাদিকের ডান চোখ। আহত ওই সাংবাদিকের নাম ভেবি মেগা ইন্দাহ। বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
তার আইনজীবী মাইকেল ভিডলার জানান, গত রোববার মেগা এই সিটিতে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের কাজ করছিলেন মেগা ইন্দাহ। এক পর্যায়ে পুলিশের রাবার বুলেট তার সুরক্ষিত চশমা ভেদ করে ডান চোখে আঘাত হানে। যাতে অন্ধ হয়ে যান তিনি।
এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে গত মঙ্গলবার পুলিশের ছোড়া গুলিতে এক তরুণ গুরুত্বর আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে হংকং। চীনে এদিনটি ছিল কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তির দিন। আর এমন দিনেই ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়েছে বৃহত্তম এ দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে।
শহরটিতে এদিন ছাতা নিয়ে, মুখোশ পরে দলে দলে জড়ো হতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। আর তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাসের শেল ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা প্রজেক্টাইল ও পেট্রলবোমা ছুড়েছে বিক্ষোভকারীরা।
মেগাসিটি বিশিষ্ট দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় তিনশ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে। এছাড়া বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ত্রিশ জন পুলিশ সদস্য।
প্রকাশিত সিসিটিভির একটি ফুটেজে দেখা গেছে, শহরটির ওয়ান চাই এলাকার পথচারী পারাপারের ব্রিজের ওপর একদল বিক্ষোভকারী এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুড়ছে পুলিশ।
আইনজীবী মাইকেল ভিডলার বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, পুলিশের ছোড়া ওই বুলেটগুলোর মধ্যে একটি গুলি মাত্র ১২ মিটার দূরত্ব থেকে আঘাত হানে সাংবাদিক মেগা ইন্দাহর চশমায়। এতে তার দুটি চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তৎক্ষণাৎই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা 'মেগার ডান চোখ চিরতরে অন্ধ হয়ে যাবে' বলেই নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, ইন্দোনেশীয় সংবাদপত্র সুয়ারার হয়ে কাজ করেন অন্ধত্ব বরণ করা সাংবাদিক মেগা ইন্দাহ। ওই দিন আহত হওয়ার সময় তার পরনে দূর থেকে দৃশ্যমান সুরক্ষা ভেস্ট এবং মাথায় ‘প্রেস’ লেখা হেলমেটও ছিল।
এ বিষয়ে মেগার এক সহকর্মী জানান, গুলি করার আগমুহূর্তেও ‘গুলি করবেন না, আমরা সাংবাদিক’ বলে চিৎকার করেছিলেন তারা। কিন্তু পুলিশ তাদের কোন কথাতেই কর্ণপাত করেনি।
এদিকে, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হংকংস্থ ইন্দোনেশিয় কনস্যুলেট জেনারেল। একইসঙ্গে তার দেশের নাগরিকদের ওয়ান চাইসহ অন্যান্য বিক্ষোভমুখর এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ‘এই ঘটনার দায় হংকং সরকারের নেয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি সংস্থা মাইগ্র্যান্ট কেয়ারের পরিচালক আনিস হিদায়াহ। জাকার্তা পোস্টকে তিনি জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ান সরকারের উচিত হংকংয়ের কনস্যুলেট জেনারেলের মাধ্যমে এ ঘটনার তদন্ত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
হংকংয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে‘আসামি প্রত্যর্পণ বিল’নামক একটি বিল উত্থাপিত হয়। ওই বিল অনুসারে, বিচারের জন্য সন্দেহভাজন আসামিকে চীনের মূল ভূখণ্ডে পাঠাতে হবে। তখন বিলটি পাস হলে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব হবে বলে মত প্রকাশ করে হংকংয়ের জনগণ। একইসঙ্গে বিলটি বাতিলের দাবিতে শহরটিতে ব্যাপক আকারে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয় গত মার্চ থেকে।
এনএস/
আরও পড়ুন