শি জিনপিং এর সংগ্রামী জীবন
প্রকাশিত : ১৬:১৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৯
শি জিনপিং। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একজন উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বর্তমানে একাধারে চীনের রাষ্ট্রপতি, চীনের রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান, কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়নার মহাসচিব এবং কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান। আজকের এই অবস্থানে আসা এতটা সহজ ছিল না। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে।
কারাবন্দি ছিলেন বাবা জি ঝোংজান। কাঁধে একশো কেজি গম নিয়ে পাকদণ্ডি বেয়ে ওঠতে হয়েছিল তাকে। সেই ছেলেই আজ রাষ্ট্রপ্রধান।
শি জিনপিংয়ের জন্ম বেইজিংয়ে। ১৯৫৩ সালের ১৫ জুন। তার বাবা জি ঝোংজান এবং মা কি জিন, দু’জনেই ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য।
১৯৪৯ সালে মাও জে দংয়ের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। এরপর দলের তথা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন শি জিনপিংয়ের বাবা জি ঝোংজান।
তবে দল এবং সরকারের সঙ্গে বারবার মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়েছিলেন ঝোংজান। তার মাশুলও তাকে দিতে হয়। ১৯৬৩ সালে তাকে দল থেকে সরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হেনান প্রদেশে, একটি কারখানায় কাজের জন্য।
১৯৬৬ সালে গোটা চিন উত্তাল ‘গ্রেট প্রোলেটারিয়ান কালচারাল রেভোলিউশন’-এ। ব্যাহত হয় শি জিনপিংয়ের পড়াশোনা। পাশাপাশি, কয়েক বছরের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাবার সঙ্গে যোগাযোগ।
‘কালচারাল রেভোলিউশন’-এর বিরোধিতা করায় বন্দি করা হয় ঝোংজানকে। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২, এই চার বছর জি ঝোংজান ছিলেন পরিবারবিচ্ছিন্ন এবং কারাবন্দি।
ছয়ের দশকের শেষে চীনে শুরু হল মাও জে দংয়ের ‘ডাউন টু দ্য কান্ট্রিসাইড মুভমেন্ট’। তরুণ শি জিনপিংকে পাঠিয়ে দেওয়া হল শানজি প্রদেশের ইয়ানচুয়ান গ্রামে। সেখানে রোজ কাঁধে প্রায় ১০০ কেজি ওজনের গমের দানা নিয়ে পাড়ি দিতে হত পাহাড়ি পাকদণ্ডি।
গ্রামের জীবন ভাল না লাগায় শি জিনপিং পালিয়ে গেলেন বেইজিংয়ে। আবার তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গ্রামাঞ্চলেই। সে সময় ক্যাম্পে গিয়ে পরিখা কাটার কাজও করতে হয়েছে তাকে।
ঝঞ্ঝা বিধ্বস্ত শৈশব ও কৈশোর হলেও উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করেছেন শি জিনপিং। বেইজিং-এর শিঙ্ঘুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উত্তীর্ণ হন। তার পরিচয় ছিল কর্মী-কৃষক-সৈন্য-ছাত্র।
১৯৭১ সালে শি জিনপিং কমিউনিস্ট পার্টির যুবশাখায় যোগ দেন। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি চেষ্টা শুরু করেন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদানের। সাফল্য আসে দশম বারের প্রচেষ্টায়।
কয়েক বছর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরে বাড়ল দায়িত্বভার। ১৯৮২ সালে ডেপুটি পার্টি সেক্রেটারি করে তাকে পাঠানো হল হেবেই প্রদেশের ঝেংডিং গ্রামে।
১৯৯৯ সালে তার পদোন্নতি হয় ফুজিয়ান প্রদেশের ভাইস গভর্নর পদে। এক বছর পরে তিনি ওই প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পান।
এরপর তিনি ঝেঝিয়াং প্রদেশের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। পরে তিনি একই দায়িত্বে ছিলেন সাংহাই প্রদেশেও।
২০০৭ সালে সপ্তদশ পার্টি কংগ্রেসে তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হন। তার পরের বছরই তিনি চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার চার বছর পরে তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি পদের দায়িত্বে এবং ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
শি জিনপিংয়ের প্রথম স্ত্রী ছিলেন আমেরিকায় চীনের রাষ্ট্রদূত কে হুয়ার মেয়ে কে লিংলিং। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৯ সালে। তবে সেই দাম্পত্য স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। তিন বছর পরে ১৯৮২ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পাঁচ বছর পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন শি জিনপিং। তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পেং লিইউয়ান চীনের নামী লোকসঙ্গীতশিল্পী। বিয়ের পরে দু’জনেই ব্যস্ত নিজেদের কাজের জগতে। তাদের একমাত্র মেয়ে শি মিংজে ২০১৫ সালে স্নাতক হন হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
কমিউনিস্ট শি জিনপিং চীনের প্রাচীন দার্শনিক ভাবধারাতেও উদ্বুদ্ধ। কম হলেও, তার বক্তব্যে শোনা যায় প্রাচীন চীনের দার্শনিক মতবাদ।
দিনভর ব্যস্ততার মাঝে সময় পেলেই এই রাষ্ট্রপ্রধান চোখ রাখেন বইয়ের পাতায়। রুশ সাহিত্যের ভক্ত শি জিনপিংয়ের প্রিয় সাহিত্যিক নিকোলাই গোগোল। তিনি বলেন, দেশবাসী তাকে এই উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তিনি চীনের মানুষকে নিয়ে যেতে চান সবার উপরে।
২০১৭ সালে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকা তাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান মানুষের আখ্যা দেয়। ২০১৮ সালে ‘ফোর্বস’ পত্রিকার বিচারে তিনিই বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তার আগে এই তকমা টানা পাঁচ বছর ধরে পেয়ে এসেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সূত্র: আনন্দবাজার
আরও পড়ুন