ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

বিয়ের নামে চীনে পাচার হচ্ছে শ’ শ’ পাকিস্তানি তরুণী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:০২, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৯:০৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

বিয়ের নামে পাকিস্তানি নারীদের চীনে পাচার

বিয়ের নামে পাকিস্তানি নারীদের চীনে পাচার

পাকিস্তান থেকে চীনে পাচার করা হচ্ছে বহু তরুণীকে। দালালরা চীনা ‘পাত্রে’র কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার নিয়ে পাকিস্তানি কিশোরী ও তরূনীদের ‘পাত্রস্থ’ করার নামে চীনে পাঠাচ্ছে। ২০১৮ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত ৬২৯ জন পাক তরুণী ওই পাচার চক্রের শিকার হয়েছেন। 

তদন্তকারী ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে এই ঢালাও নারী পাচারের কথা দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কানে পৌঁছছে। কিন্তু চীনের সঙ্গে দহরম-মহরমে চিড় ধরার ভয়ে পাক সরকার রয়েছেন চুপটি করে ‘নিধিরাম সর্দার’ হয়ে।

কোনও তদন্ত শুরু হলে তা ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। মামলা হলে আদালতকেও প্রভাবিত করা হচ্ছে। ওই সব মামলায় অভিযুক্ত ৩১ জন চীনা নাগরিককে গত অক্টোবরেই বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে ফয়সলাবাদের একটি আদালত। তাদেরকে চীনে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে।

গত ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংবাদ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)’র একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদনে এই তথ্য মিলেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দালালরা এইভাবে ২০১৮ সালের শুরু থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৬২৯ জন পাক কিশোরী ও তরুণীকে চীনে পাচার করেছে, বিয়ে দেয়ার নামে তাদেরকে বিক্রি করেছে।

যে তালিকা তৈরি করেছে খোদ পাকিস্তানের ‘ফেডারাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ)’। সেখানে কাকে কাকে কবে বিক্রি করে চীনে পাঠানো হয়েছে, তারা চীনে গিয়ে কবে বিয়ে করেছেন, এখন কোথায় আছেন, তাদের কোন কোন পেশায় নিয়োগ করা হয়েছে, এফআইএ-র কাছে সে সবের খুঁটিনাটি সব তথ্য রয়েছে। 

তবে ‘এফআইএ-র এমন কোনও তালিকার কথা জানা নেই’ বলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দালালরা চীনা ‘পাত্র’দের কাছ থেকে একেকজন পাক তরুণীপিছু ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি পাকিস্তানি রুপি কামিয়েছে। আর ‘নির্ঝঞ্ঝাটে’ মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের মা-বাবাদের পকেটে দালালরা গুঁজে দিয়েছে বড়জোর ২ লাখ পাকিস্তানি টাকার ‘ঘুষ’। তারপর পাচার করা সেই পাক তরুণীদের চীনে নিয়ে গিয়ে নামানো হয়েছে দেহ ব্যবসায়। আর পাচারের জন্য টার্গেট করা হচ্ছে পাকিস্তানে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের তরুণীদের।

এই দালালরা রয়েছেন চীন ও পাকিস্তান দু’দেশেই। নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ রেখেই তারা নারী পাচারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পাক তদন্তকারীদের একজন এপি-কে জানিয়েছেন, ‘তদন্ত বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপরমহল থেকে চাপ আসছে। নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে, এমনকি প্রাণনাশেরও। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে দূর-দূরান্তে। তদন্তের সময় পুলিশ যাদের সঙ্গে কথা বলেছিল, সেই পাক তরুণীদের অনেকেই পরে সংশ্লিষ্ট মামলায় গরহাজির থাকছেন বা আদালতে গিয়ে উল্টো কথা বলছেন। উপরমহলের হুমকি বা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।’

পাকিস্তানে খ্রিস্টানদের মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের মুখপাত্র বলে পরিচিত সালিম ইকবাল সংবাদ সংস্থা এপি-কে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের ফেডারাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের উপর অসম্ভব চাপ সৃষ্টি করছে সরকারের উপরমহল। কর্মকর্তাদের নানাভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। বদলি করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর তদন্ত বন্ধ করার জন্য।’ সূত্র-এপি, আনন্দবাজার।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি