দিল্লিতে বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্র, ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর হামলা
প্রকাশিত : ০৮:২৯, ৬ জানুয়ারি ২০২০
ভারতের জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রোববার সন্ধ্যার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে ৫০ জনেরও বেশি মুখোশধারী দুষ্কৃতি।
এসময় তারা ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষের মাথা ফাটিয়ে দেয়। হামলায় আহত হন আরও অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক।
তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স বা এইমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এরইমধ্যে মিসেস ঘোষের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যাতে তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘দেখুন আমার ওপরে কীভাবে হামলা হয়েছে। ওদের সকলের মুখ ঢাকা ছিল। দেখুন কত রক্ত পড়ছে। সাংঘাতিকভাবে মেরেছে আমাকে।’
ছাত্রছাত্রীরা বেশ কয়েকমাস ধরে হোস্টেল ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছেন। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা এবং রেজিস্ট্রেশন বয়কট করেছেন।
অন্যদিকে, হিন্দু জাতীয়বাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয়া সায়ামসেভাক সাংঘ-আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি সমর্থক কিছু ছাত্র বলছেন তাদের ক্লাস করতে বা পরীক্ষা বয়কট করতে আন্দোলনকারীরা কেন বাধ্য করছে?
হামলাকারীরা সবাই এই এবিভিপি-র সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে হামলাকারীদের আনা হয়েছে বলে অভিযোগ ছাত্র ইউনিয়নের।
শুধু ছাত্রছাত্রীদের নয়, তাদের হামলায় শিক্ষকরাও আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওদিকে এবিভিপি-র পাল্টা অভিযোগ বামপন্থী ছাত্রছাত্রীরাই তাদের ওপরে প্রথমে হামলা চালায়। একটি সংবাদ বিবৃতিতে তারা বলেছে এসএফআই (সিপিআইএম দলের ছাত্র সংগঠন), এইএসএ (নকশালপন্থী সিপিআইএমএল লিবারেশনের ছাত্র সংগঠন) এই হামলার জন্য দায়ী।
সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুখোশ পড়া বেশ কিছু নারী-পুরুষ লাঠি হাতে এগিয়ে আসছেন।
এক ছাত্রী চিৎকার করে তাদের প্রশ্ন করছেন, ‘এটা কী হচ্ছে! তোমরা কারা? মেয়েদের হোস্টেলে কেন ঢুকছ! আমাদের ভয় দেখাতে এসেছ?’
ওই ভিডিওতেই শোনা যাচ্ছে কিছু ছাত্রী স্লোগান দিচ্ছেন, এবিভিপি গো ব্যাক।
এই ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে মুখোশধারী হামলাকারীদের গালিগালাজ করতে শোনা যায়।
একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মুখোমুখি দুই পক্ষ, অন্যদিকে ছাত্ররা দিল্লি পুলিশের হেডকোয়ার্টারের সামনেও জড়ো হয়েছে বড় সংখ্যায়।
দুটি জমায়েতেই ব্যাপক সংখ্যায় অন্যান্য কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন।
ছাত্রছাত্রীরা এই প্রশ্নও তুলছেন, যখন মুখোশধারী হামলাকারীরা ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালাচ্ছিল, তখন পুলিশ সেখানে হাজির ছিল। কিন্তু তারা নীরব দর্শক হয়ে ছিল বলেও অভিযোগ।
দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হামলার পরে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদেরও প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। এসবের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের।
তিনি টুইট করেছেন, ‘জেএনইউ-এর ঘটনার ছবি দেখছি। স্পষ্ট ভাষায় এই হিংসার নিন্দা করছি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে।’
জয়শঙ্কর এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর আর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন।
রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘শাসনক্ষমতায় থাকা ফ্যাসিবাদীরা ছাত্রদের সাহস দেখে ঘাবড়ে গেছে। আজকের হামলা তারাই প্রতিফলন।’
সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, যিনি নিজেও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন একসময়ে, তিনি বর্তমান ছাত্র ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষের মাথা থেকে রক্ত ঝরার ভিডিওটি রি-টুইট করে লিখেছেন, ‘এই ভিডিও দেখেই বোঝা যাচ্ছে আরএসএস, বিজেপি দেশের কী অবস্থা করতে চাইছে। কিন্তু আমরা ওদের এটা করতে দেব না।’
ছাত্রদের ওপরে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম।
ছত্তিসগড়ের রাজধানী রায়পুরে ছাত্রদের ওপরে হামলার বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
একে//
আরও পড়ুন