ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী শাসক কাবুসের ইতিবৃত্ত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪২, ১১ জানুয়ারি ২০২০

কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ

কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ

আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। ১৯৭০ সালে ব্রিটিশদের সহায়তা নিয়ে তিনি তার পিতাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর দেশটির তেল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ওমানকে উন্নয়নের পথে আনেন কাবুস।

সুলতান কাবুস ওমানের জনগণের কাছে বেশ জনপ্রিয় শাসক ছিলেন এবং তার হাতেই ছিল শাসন ক্ষমতার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। যে কোনও বিরোধী মতকে তিনি কঠোরভাবে দমন করতেন।

যাদিও তার মৃত্যুর কারণ এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে এরইমধ্যে তার চাচাতো ভাই হাইথাম বিন তারিক আল সাঈদ ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। এর আগে তিনি ওমানের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

সুলতান কাবুস-এর মৃত্যুর পর রাজপরিবারে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং তারপর শপথ গ্রহণ করেন হাইথাম বিন তারিক আল সাঈদ।

ওমানে যে কোনও সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে সুলতানের সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে। ওমানের সুলতান একাধারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী, সামরিক বাহিনী সর্বাধিনায়ক, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সুলতান কাবুস-এর কোনও উত্তরাধিকারী নেই। তার উত্তরাধীকারী হিসেবে তিনি কাউকে নির্বাচনও করেননি। চিকিৎসার জন্য গত সপ্তাহে তিনি বেলজিয়াম গিয়েছিলেন। তখন খবর বেরিয়েছিল যে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত।

নিরপেক্ষ নীতি
গত প্রায় পাঁচ দশক যাবত সুলতান কাবুস ওমানের রাজনীতি একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ওমানের জনসংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ, যার মধ্যে ৪৩ শতাংশ বিদেশী নাগরিক।

২৯ বছর বয়সে তিনি তার বাবা সাঈদ বিন তৈমুরকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। তারা বাবা ছিলেন ভীষণ রক্ষণশীল। তিনি ওমানে রেডিও শোনা এবং সানগ্লাস ব্যবহারসহ অনেক বিষয় নিষিদ্ধ করেছিলেন। 

ওমানে কে বিয়ে করতে পারবে, কে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে, এমনকি কে দেশত্যাগ করবে - এসব কিছুর সিদ্ধান্ত তিনি দিতেন।

পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সুলতান কাবুস ওমানে আধুনিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন।
তখন ওমানে মাত্র ১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক এবং তিনটি স্কুল ছিল। সুলতান কাবুস তখন ঘোষণা করেন, দেশটির তেল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তিনি দেশের আধুনিকায়ন করবেন।

ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক বছরের মধ্যেই ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সাহায্য নিয়ে ওমানের দক্ষিণাঞ্চলে উপজাতিদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা দমন করেন সুলতান কাবুস।

সুলতান কাবুসকে মনে করা হতো একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তিনি নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। ২০১৩ সালে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পর্দার আড়ালে আলোচনার সূত্রপাত করাতে ভূমিকা রাখেন সুলতান কাবুস। সে ধারাবাহিকতায় ঐতিহাসিক পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি হয়েছিল।

সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদী শাসন
২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় ওমানেও কিছু অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দেশটিতে বড় ধরণের কোনও বিক্ষোভ হয়নি। কিন্তু ওমানের বিভিন্ন জায়গায় হাজার-হাজার মানুষ ভালো মজুরির দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবির মধ্যে আরও ছিল- অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতি বন্ধ করা।

নিরাপত্তা বাহিনী প্রথম দিকে সে বিক্ষোভের প্রতি কিছুটা নমনীয় ভাব দেখিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং তাজা গুলি ছুঁড়েছে। তখন দুজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়।

'বেআইনি সমাবেশ' এবং 'সুলতানকে অপমান' করার অভিযোগে শতশত মানুষকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

বিক্ষোভকারীরা বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে সক্ষম না হলেও সুলতান কাবুস পরবর্তীতে দুর্নীতিবাজ বলে মনে করা হয় এবং একই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে মন্ত্রিত্বে থাকা কিছু ব্যক্তিকে সরিয়ে দেন। তিনি সরকারি চাকরির সুযোগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন।

তখন থেকে কর্তৃপক্ষ সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোকে বন্ধ করে দেয়। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, তখন বিভিন্ন বই বাজেয়াপ্ত এবং মানবাধিকার কর্মীদের হয়রানিও করা হয়। সূত্র-বিবিসি।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি