ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

লাদাখ সীমানায় মুখোমুখি চীন ও ভারতের সৈন্যরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪৩, ২৬ মে ২০২০ | আপডেট: ১৯:৪৬, ২৬ মে ২০২০

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

Ekushey Television Ltd.

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই ভারতের উত্তর সীমান্তে লাদাখে চীনের অগ্রযাত্রা ও বাড়তি সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে দুদেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দুদেশের মাঝে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলএসি রয়েছে, গত কয়েকদিনে সেই এলএসি বরাবর বিভিন্ন স্থানে দুদেশের সেনারা সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

চীনা সৈন্যরা এবার ঘাঁটি তৈরি করেছে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালির মতো সম্পূর্ণ নতুন জায়গাতেও, যেখানে আগে কোনও বিরোধের ইতিহাস ছিল না। কেন আচমকা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এই ধরনের সামরিক উত্তেজনা তৈরি হল, তা পর্যবেক্ষকদেরও বেশ ধন্দে ফেলেছে।

ভারত ও চীনের মধ্যে কোনও সুনির্দিষ্ট ও সুচিহ্নিত আন্তর্জাতিক সীমানা নেই – তার বদলে আছে কয়েক হাজার কিলোমিটার লম্বা একটি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল, যা লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্ট অনুসারে, গত দু-তিনসপ্তাহের ভেতর চীনা সেনাবাহিনী এই 'এলএসি' অন্তত চার জায়গায় অতিক্রম করে অবস্থান নিয়েছে।সেই জায়গাগুলো হল লাদাখের প্যাংগং সো বা প্যাংগং লেক, গালওয়ান নালা ও ডেমচক – আর সিকিমের নাকু লা।

ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা তার ব্লগে লিখেছেন, এই প্রথম সমগ্র গালওয়ান ভ্যালিকেই চীন নিজেদের বলে দাবি করছে।

শুক্লার কথায়, "এই ইনট্রুশন-গুলো কিন্তু হয়েছে বিরাট একটা জায়গা জুড়ে। উত্তর লাদাখের গালওয়ান ভ্যালি থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ লাদাখের ডেমচক – আর সেখান থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে সিকিমের নাকু লা পাস পর্যন্ত।"

"যা থেকে বোঝা যায় এই গোটা অভিযানটার পরিকল্পনা হয়েছে রাজনৈতিকভাবে খুবই উঁচু মহলে, এমন নয় যে স্থানীয় কমান্ডাররা তাদের ইচ্ছেমতো এগুলো করছেন।"

শুধু অবস্থান নেওয়াই নয়, গত কয়েকদিনের মধ্যে চীনা সৈন্যদের সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর বেশ কয়েক দফা মুখোমুখি সংঘর্ষও হয়েছে। দুপক্ষেই বেশ কয়েক ডজন সৈন্য আহত হয়েছেন, এমন কী কয়েকজন ভারতীয় সেনাকে চীন বেশ কিছুক্ষণ আটকে রেখেছিল বলেও রিপোর্ট হয়েছে – যদিও ভারত পরে তা অস্বীকার করেছে।

গত শুক্রবার ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে লাদাখে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসেছেন, ওই সেক্টরের সেনাদের এলএসি-র দিকে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। লাদাখ সফরের আগে জেনারেল নারাভানে বলেছিলেন, "আসলে যেহেতু এলএসি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত নয়, তাই দুপক্ষই এই সীমান্তকে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে।"

"দুদেশের সেনারাও ততদূরই টহল দেয়, যতদূর পর্যন্ত তারা নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে। আর যখনই দুদেশের বাহিনী একই সময়ে একই জায়গায় গিয়ে পৌঁছয়, তখন এরকম সংঘাত প্রায়ই ঘটে থাকে।"

"লাদাখে আর সিকিমে যে একই সময়ে সংঘাত হল এটা নেহাতই সমাপতন – এটা থেকে খুব বেশি কিছু খোঁজার মানে হয় না।"

তবে এর কদিন পরেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক কড়া বিবৃতি দিয়ে জানায়, ভারতীয় সেনার স্বাভাবিক টহল বা পেট্রলিং প্যাটার্নকে বাধা দিয়ে চীনই বরং সীমান্তে নানা কর্মকান্ড চালাচ্ছে।

১৯ মে বেজিইংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ট্রেসপাসিং বা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ এনেছিল – দিল্লি সেটাও জোরালোভাবে অস্বীকার করে। আবার রবিবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি তার বার্ষিক সাংবাদিক বৈঠকে কিন্তু ভারতকে নিয়ে একটিও শব্দ বলেননি।

চীনে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অশোক কান্থা মনে করেন, প্রত্যেক গ্রীষ্মে দুদেশের সেনাদের মধ্যে যেমন হাতাহাতি বা মারামারি হয় তার চেয়ে এবারের সংঘাত কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা।

কান্থা বিবিসিকে বলছিলেন, "প্রথমত চীন এবার অনেক বেশি আগ্রাসী, দ্বিতীয়ত একসঙ্গে অনেকগুলো জায়গায় হামলা চালাচ্ছে – আর তা ছাড়া গালওয়ান ভ্যালিতে এলএসি-র নতুন ব্যাখ্যা এনে নতুন একটা ফ্রন্ট খুলতে চাইছে।"

"এর কারণ কী বলা মুশকিল, তবে হতে পারে তারা বিতর্কিত সীমানার ওপর নিজেদের দাবি জোরেশোরে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। আবার এটা তাদের প্রেসার ট্যাকটিক্সের অংশও হতে পারে, যার মাধ্যমে তারা মনে করিয়ে দিতে চায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা ইস্যুতে বা এমন কী কোভিডের প্রশ্নেও ভারত যেন চীনের সংবেদনশীলতা খেয়াল রাখে।"

বছরতিনেক আগে ডোকলাম ভ্যালিতে চীন ও ভারতের সেনারা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল দুমাসেরও বেশি সময় ধরে। লাদাখের এই সামরিক উত্তেজনা বহরে অনেক বেশি এবং এটাও খুব সহজে মিটবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না।

এসি


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি