যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদ যেভাবে সহিংসতায় রূপ নিলো
প্রকাশিত : ০৯:৪৩, ১ জুন ২০২০
আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলো শুরু হয়েছিল শান্তিপূর্ণভাবেই এবং কয়েকটা জায়গায় শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিক্ষোভকারীরা শেষ পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে, ভাংচুর করেছে ও দোকানপাট লুটের ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিবাদ সহিংসতায় রূপ নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে এবং বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে লস এঞ্জেলস ও মিনেয়াপোলিস রাজ্যে। সহিংসতায় বৃদ্ধি পাওয়ায় পনেরটি রাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের পাঁচ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই ঘটনার সঙ্গে ২০১১ সালে ইংল্যান্ড দাঙ্গার মিল খুঁজে পান বিশেষজ্ঞরা। যেখানে পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হবার প্রতিবাদে দাঙ্গার মধ্যে ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিলো।
কিলি ইউনিভার্সিটির ক্রাউড বিহ্যাভিয়ার অ্যান্ড পাবলিক অর্ডার পোলিশিং বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্লিফর্ড স্টট বলেছেন, মিস্টার ফ্লয়েডের মৃত্যুর মতো ঘটনা মুহূর্তটি তৈরি করেছে পুলিশ। কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে যে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সেটিই এখানে প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে। যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য আছে, সেখানে সংঘাত অনেকটাই অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশ যখনই উৎসাহী হয়ে উঠেছে বলে মনে হয়েছে, সেটি দাঙ্গাকারীদেরও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে শক্তি যুগিয়েছে। পুলিশের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে সহিংস প্রতিবাদ কমই হতো। কিন্তু প্রতিবাদের ক্ষেত্রে পুলিশ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, এখানে তা গুরুত্বপূর্ণ।
ইউসিএলএ'র ডিন ডারনেল হান্ট মনে করেন, সপ্তাহজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ তাদের আগ্রাসী ভূমিকা দেখিয়েছে। তিনি বলেন, "ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল, মরিচের গুড়া- এগুলো দিয়েই পুলিশ জবাব দিয়েছে, যেখানে আগে থেকেই পরিস্থিতি উত্তেজনাকর ছিলো"।
প্রফেসর স্টট মনে করেন, প্রতিবাদে সহিংসতাকে এড়ানোর জন্য ধৈর্য্য ধারণের প্রশিক্ষণ পুলিশকে দেয়া হয়। যেমন- ক্যামডেন, নিউ জার্সিসহ কয়েকটি জায়গায় পুলিশ নিজেও স্থানীয়দের সাথে বর্ণবাদ বিরোধী র্যালিতে অংশ নিয়েছে।
রাইস ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মারলুন মুজিমান বলছেন, নৈতিক ও মনোজাগতিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করলেই সহিংসতার কারণ উপলব্ধি করা যায়। তিনি বলেন, "কোনো কিছু যখন আমরা অনৈতিক মনে করি, তখন তা আমাদের মধ্যে একটি শক্ত অনুভূতির জন্ম দেয়। কারণ আমরা মনে করে করি আমাদের নৈতিক অবস্থান সুরক্ষিত থাকা দরকার"।
পাবলিক অর্ডার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের জন্য প্রতিবাদকারীদের সাথে আলোচনাটা গুরুত্বপূর্ণ। "ভালো পুলিশিং হলো 'আমরা ' ও 'তারা' মানসিকতা পরিহার করা," বলছিলেন প্রফেসর স্টট।
প্রফেসর হান্ট বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এবারের দাঙ্গা ১৯৬৮ সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের মৃত্যু পরবর্তী সহিংসতার চেয়ে বেশি মারাত্মক।
এএইচ/
আরও পড়ুন