বিক্ষোভকারীদের সামনে হাঁটু গেড়ে কাঁদল ৬০ মার্কিন পুলিশ
প্রকাশিত : ১৪:১১, ৩ জুন ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার জের ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি উপেক্ষা করেই চলছে বিক্ষোভ। যা থামাতে সেনাবাহিনী নামানোর হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
তারপরও কারফিউ আমলে না নিয়ে চলছে আন্দোলন। তাদের থামাতে এসে উল্টো অনুশোচনায় পড়ে হাঁটু গেড়ে সমর্থন দিয়ে কাঁদলেন মার্কিন ৬০ পুলিশ সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনায় ঘটেছে এমনই ঘটনা। এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ডেইলি মেইল বলছে, চলমান আন্দোলন ঠেকাতে প্রেসিডেন্টের নির্দেশে অনেক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। নেয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। তবে ব্যতিক্রমি চিত্রও আছে। সোমবার ফায়েটভিল অঞ্চলে আন্দোলনকারীরা পদযাত্রা শুরু করলে বাধা দেয় পুলিশ। তা আমলে না নিয়ে সামনে এগোতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। এরপরে মুর্চিন রোডে দায়িত্বে থাকা ৬০ পুলিশ সদস্য হাঁটু গেড়ে বসেন।
পরে এক টুইট বার্তায় ক্যারলিন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘ব্যাথা অনুভবের কারণে প্রদর্শনী হিসেবে আমাদের জাতীয় সমতা আর ন্যায় বিচারের দাবির প্রতি সমর্থন জানাতেই মূলত আমাদের পুলিশ সদস্যরা নতজানু হয়েছেন।’
এদিকে ডয়েস ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেনা নামানোর হুমকি, রাস্তায় প্রচুর পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডের জওয়ান, রাতে কার্ফু সত্ত্বেও অ্যামেরিকা জুড়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এখনও বিক্ষোভ চলছে। হোয়াইট হাউসের সামনেও দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
এমন অবস্থায় নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও মঙ্গলবার নগরীতে রাত্রিকালীন কারফিউ ৭ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।
তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় মঙ্গলবার রাতের বিক্ষোভের ফারাক হলো, বিক্ষোভকারীরা হিংসা ও লুঠতরাজ বন্ধ করার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনীর বাড়াবাড়িও কম হয়েছে।
বর্ণবিদ্বেষী পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর এই বিক্ষোভের ফলে ট্রাম্প আরও চাপে পড়েছেন। বিক্ষোভের মধ্যে তিনি যেভাবে চার্চে গিয়ে ফটো অপ করেছেন, তার প্রতিবাদে শুধু অ্যামেরিকা নয়, বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদীরা সোচ্চার হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে কার্ফু অগ্রাহ্য করে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। তারা দীর্ঘক্ষণ প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রা ফন নামেন ছিলেন হোয়াইট হাউসের সামনে। তিনি জানাচ্ছেন, ‘রাতের কার্ফু শুরু হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রচুর বিক্ষোভকারী এখানে আছেন। তারা গর্জন করে বলছেন, '‘আমরা কী চাই? শান্তি। কখন চাই? এখনই।’ বেশ কিছু বিক্ষোভকারীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা বলছেন, ট্রাম্প আমাদের ভয় দেখাতে চাইছেন। উস্কানি দিচ্ছেন।’
এই বিক্ষোভে রাজনীতিকরাও যোগ দিচ্ছেন। ডেমোক্র্যাট পার্টির আইনজীবী অ্যান্ড্রু উইনস্টাইন জানিয়েছেন, সেনেটর এবং প্রেসিডেন্টের পদে প্রাক্তন প্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেন বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন স্পিকার ন্যান্সি বলেছেন, ‘ট্রাম্পের উচিত আগের প্রেসিডেন্টের মতো এই ক্ষোভ দূর করার জন্য কাজ করা। তা না করে তিনি বিক্ষোভের আগুন আরও উসকে দিচ্ছেন।’
সমালোচনা থেমে থাকেনি নিজ দলের পক্ষ থেকেও। ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর মিটচ ম্যাকনেলও বলেছেন, ‘আমি এই বিক্ষোভের কারণ বুঝতে পারি। এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, অ্যামেরিকায় এখনও বর্ণবিদ্বেষ কিছুটা রয়ে গিয়েছে।’
তবে এই বিক্ষোভ, সমালোচনা সত্ত্বেও ট্রাম্প তার আগের মনোভাব থেকে সরে আসেননি।
বিক্ষোভ অন্য দেশেও ছড়াচ্ছে। বার্লিন ও লন্ডনে আগে থেকেই প্রতিবাদ চলছে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে প্যারিস। সেখানে হাজার কয়েক বিক্ষোভকারী পথে নেমেছিলেন। তাদের হঠাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। বিশ্বজুড়ে একটাই রব উঠছে, অ্যামেরিকায় বর্ণবিদ্বেষ শেষ হোক। শাস্তি পাক বর্ণবিদ্বেষী পুলিশ, যারা জর্জকে খুন করেছে।
এআই//
আরও পড়ুন