ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে মার্কিন পুলিশের যেসব অস্ত্র ব্যবহার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:০৫, ৭ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৪:০৮, ৭ জুন ২০২০

পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এখনো চলছে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ। নজিরবিহীন এ বিক্ষোভ ঠেকাতে বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করছে মার্কিন পুলিশ ও দেশটির অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী। এসব অস্ত্রে যে কেউ মারাত্মক আহত ও প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা।

দাবি করা হচ্ছে, প্রধানত কেমিক্যাল ইরিট্যান্টস (পেপার স্প্রে, টিয়ারগ্যাস), কাইনেটিক ইমপ্যাক্ট প্রজেক্টাইলস (কাঠ ও রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড) ও ডিসওনিয়েন্টেশন ডিভাইস (আতশবাজি)- এ তিন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরণের অস্ত্রগুলোকে প্রায়ই ‘নন-লেথাল’ (প্রাণঘাতী নয়) বলা হচ্ছে। 

তবে অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে- কখনও কখনও এগুলো মৃত্যুও ঘটাতে পারে। নতুন করে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এমনকি সাংবাদিকদের ওপরও এসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে পুলিশ। অস্ত্রগুলো হচ্ছে-

টিয়ারগ্যাস
যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বিক্ষোভে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে টিয়ারগ্যাস। প্রধানত বিক্ষোভকারীদের তাড়াতে এর ব্যাপক ব্যবহার করছে পুলিশ। টিয়ারগ্যাস মূলত সিএস বা সিএন রাসায়নিক যৌগের পাউডার, যা ক্যানিস্টার থেকে নির্গত হয়। ছড়িয়ে পড়লে এ গ্যাস চোখে ও মুখে তীব্র জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।

পিপার স্প্রে ও পিপার বল
বিক্ষোভকারীদের প্রতি পিপার স্প্রেও ছুড়ছে পুলিশ। এটাকে অনেকেই মরিচ গুঁড়ার স্প্রে বলে থাকে। হাতে ধরা যন্ত্র থেকে ও প্রজেক্টাইল পদ্ধতি- দু’ভাবেই ছোড়া হচ্ছে এটা। রাসায়নিক দিক থেকে টিয়ারগ্যাস থেকে আলাদা হলেও পিপার স্প্রে একই কাজ করে। যেমন চোখ ও ত্বক জ্বালাপোড়া এবং চোখে পানি ঝরানো। পিপার বলও ছুড়ছে পুলিশ। এগুলোর মধ্যে থাকে টিয়ারগ্যাস বা পিপার স্প্রের মতো কেমিক্যাল ইরিট্যান্টস। বন্দুক বা যন্ত্রের সাহায্যে প্রজেক্টাইল আকারে ছোড়া হচ্ছে এগুলো।

কেমিক্যাল ইরিট্যান্টস
কেমিক্যাল ইরিট্যান্টস হচ্ছে এমন সব রাসায়নিক উপাদান যা ত্বকের জ্বালাপোড়া, ব্যথা ও শ্বাস-প্রশ্বাস তথা নাক-মুখে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর মধ্যে রয়েছে টিয়ারগ্যাস ও পেপার স্প্রে।

কাইনেটিক ইমপ্যাক্ট প্রজেক্টাইলস
এর মধ্যে রয়েছে রাবার, প্লাস্টিক, কাঠ ও স্পঞ্জার বুলেট। লঞ্চার বা বন্দুক থেকে ছোড়া হয় এগুলো। একটা একটা করেও ছোড়া যায় আবার একসঙ্গে অনেকগুলোও ছোড়া যায়। এগুলো ঠিকমতো গায়ে লাগলে ত্বকের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। এতে মৃত্যুর সম্ভাবনাও রয়েছে। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল প্রকাশিত এক রিপোর্ট মতে, বিক্ষোভে কাইনেটিক ইমপ্যাক্ট প্রজেক্টাইলসের কারণে ২.৭ শতাংশ মৃত্যু ঘটে।

রাবার ও প্লাস্টিক বুলেট
যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েকদিনে রাবার, প্লাস্টিক ও কাঠসহ নানা ধরনের বুলেটে আহত হয়েছে অসংখ্য বিক্ষোভকারী। গত সপ্তাহে মিনেপোলিসে রয়টার্সের কয়েকজন সাংবাদিকও পুলিশের ছোড়া ৪০ মিমি. ব্যাসের শক্ত প্লাস্টিক প্রজেক্টাইল বা বুলেটে আহত হয়। এ ঘটনায় বিতর্ক ও সমালোচনা জোরালো হলে লস অ্যাঞ্জেলেস মেয়র এরিক গারসেটি ঘোষণা দেন, এখন থেকে বিক্ষোভে রাবার বুলেট কম ব্যবহার করবে পুলিশ।

কাঠের বুলেট
প্লাস্টিক বুলেটের সঙ্গে কাঠের তৈরি বুলেটও ছুড়ছে পুলিশ। ওহাইওর কলম্বাস শহরে বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছে, পুলিশ তাদের ওপর কাঠের বুলেট ছুড়েছে। কাঠের বুলেটের কিছু ছবিও এখন অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরে কলম্বাস পুলিশ বিভাগ বিষয়টি স্বীকার করেছে, ৩০ মের বিক্ষোভে কাঠের বুলেট ব্যবহার করা হয়।

স্টিং-বল গ্রেনেড
বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছে, তাদের ওপর স্টিং-বল গ্রেনেড ছোড়া হচ্ছে। বিস্ফোরণের পর এগুলো থেকে চারদিকে রাবার পিলেট ছড়ায়। রাবার বলের সঙ্গে কেমিক্যাল এজেন্টও থাকতে পারে।

ডিসওরিয়েন্টেশন ডিভাইস
এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাশব্যাং বা স্টান গ্রেনেড। যাকে সাউন্ড গ্রেনেডও বলা হয়। বিস্ফোরণ হলে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানির সঙ্গে প্রচণ্ড শব্দ সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখিয়ে ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার হয়। সাধারণ গ্রেনেডের মতো এগুলো বিক্ষোভকারীদের ভিড়ের মধ্যে নিক্ষেপ করে পুলিশ। কাছাকাছি বিস্ফোরিত হলে এ অস্ত্র বিক্ষোভকারীকে পুড়িয়ে ফেলতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ হেফাজতে মারা যান জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। সেইদিনই পুলিশ তাকে আটক করেছিলো। এরপর হাঁটু দিয়ে জর্জের গলা চেপে ধরেন পুলিশ। এভাবে অন্তত আট মিনিট তাকে মাটিতে চেপে ধরে রাখা হয়।

এক প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জর্জ ফ্লয়েড নিঃশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলছেন, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’ এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় মুহূর্তেই।

প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ডেরেক চাওভিনসহ চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। পাশপাশি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়।

আরো উল্লেখ্য যে, পুলিশি নির্যাতনে গেল ৬ বছরে প্রায় ৮ হাজার মার্কিন নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ। যা সপ্তাহে হিসেব করলে প্রতি সম্পাহে দাঁড়ায় ২৫ জন করে। চলমান আন্দোলনে অংশ নিয়ে এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি