আমেরিকার পুলিশ মানুষ হত্যা করলেও দোষী সাব্যস্ত হয় না কেন জানেন?
প্রকাশিত : ১৫:৩২, ৭ জুন ২০২০
আমেরিকার পুলিশ
আমেরিকায় প্রতি বছর পুলিশের হাতে মারা যায় ১ হাজার দুইশ’ মানুষ। কিন্তু এর ৯৯ শতাংশ ঘটনাযর পুলিশের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয় না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের আইনে পুলিশ অফিসারদের ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ আইনি সুরক্ষা রয়েছে। খবর বিবিসি’র
পুলিশের সহিংস আচরণের খতিয়ান পর্যবেক্ষণকারী একটি প্রকল্পের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আমেরিকায় পুলিশের হাতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৬৬৬। এর মধ্যে মাত্র ৯৯টি ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যা মোট হত্যা ঘটনার মাত্র ১.৩%। আবার এর মধ্যে মাত্র ২৫টি ঘটনায় পুলিশ দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।
ওয়াশিংটনে কেটো ইন্সটিটিউটের ফৌজদারি বিচার বিষয়ক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লার্ক নেইলি বলেছেন, পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কৌঁসুলিদের ফৌজদারি মামলা দায়েরের ঘটনা "খুবই বিরল"। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, পুলিশ এবং কৌঁসুলি দুজনেই আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থার অংশ। তারা পরস্পরের সহযোগিতায় কাজ করেন। অপরাধের সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এবং মামলার সময় আদালতে সেগুলো পেশ করার ব্যাপারে কৌঁসুলিরা পুলিশের ওপরই নির্ভর করেন। তাদের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এই ব্যবস্থায় ‘ফৌজদারি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে তাদের দায়বদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়।’
এছাড়া আমেরিকায় শক্তি প্রয়োগের অধিকার আইনতভাবে পুলিশকে দেয়া আছে। সেই আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষায়, অথবা অন্য কারো মৃত্যু ও গুরুতর আহত হওয়া ঠেকাতে পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার ক্ষেত্রে আইনি রক্ষাকবচ থাকায় পুলিশি বর্বরতার শিকার মানুষের জন্য একটাই পথ খোলা থাকে। তা হল দেওয়ানি আদালতে মামলা আনা। বাস্তবে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা আনার জন্য দেওয়ানি আদালতের দরজা বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। কারণ এক্ষেত্রে "বিশেষ রক্ষাকবচের" নীতি তুলে ধরার রেওয়াজ রয়েছে।
‘সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত অধিকার’ বলে আইনের নথিতে যদি কিছু লিপিবদ্ধ না থাকে, তাহলে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন একরকম অসম্ভব। তার থেকেও বেশি কঠিন এ ধরনের মামলা দায়ের করা সম্ভব হলেও, তার থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়।
ম্যাসাচুসেটসের জনপ্রতিনিধি আয়ান্না প্রেসলি এ সম্পর্কে বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে কালো ও বাদামি চামড়ার মানুষদের একটা শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে, তাদের ওপর নজরদারি চালানো হয়েছে, তাদের গণনির্যাতন করা হয়েছে, দমবন্ধ করা হয়েছে, নিষ্ঠুর অত্যাচার করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে। পুলিশি বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে এই বক্তব্য দিয়ে টুইট করেছিলেন তিনি।
আমেরিকার নাগরিক অধিকার বিষয়ক একটি সংস্থার পরিচালক উডি ওফার মনে করেন, আমেরিকান প্রশাসনকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তিনি চান পুলিশের বাজেট কমিয়ে দেয়া হোক। তিনি বলেন, কোন কোন শহরে বাজেটের ৪০ শতাংশ খরচ করা হয় পুলিশ বাহিনীর পেছনে।
মিনেসোটায় পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যে ব্যাপক প্রতিবাদ ও দাঙ্গা হয়েছে, তাতে গণচাপের মুখে এবার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা আশা করছেন, ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর আমেরিকায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ অফিসার কাউকে হত্যা করলে আইন তার ক্ষেত্রে কীভাবে প্রযোজ্য হবে তাতে একটা আমূল পরিবর্তন আসবে।
কারণ তাদের আশা ফ্লয়েডের ঘটনা খুবই ব্যতিক্রমী। আমেরিকায় বর্তমানে যে বিক্ষোভ চলছে অনেকেই তার সঙ্গে ১৯৬০-এর দশকের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের তুলনা করছেন। ফ্লয়েডের মৃত্যু প্রতিবাদের যে আগুন ছড়িয়েছে আমেরিকায়, তাতে মানবাধিকার আন্দোলনকারীরা এটাকে রাজপথ থেকে নিয়ে যেতে চাইছেন মূলধারায় পরিবর্তন আনার পথে।
এএইচ/
আরও পড়ুন