তাইওয়ানের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে হ্যাকাররা
প্রকাশিত : ১৬:৩২, ৭ জুন ২০২০
চীনের উহানের খুব কাছাকাছি তাইওয়ান। তাই মনে করা হয়েছিল এখানের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশটিতে কোভিড-১৯তে মারা গেছে মাত্র ৭ জন। আর তারা কখনো পুরোপুরি লকডাউনেও যায়নি। এই সাফল্যের পেছনে নাকি হাত রয়েছে দেশটির হ্যাকারদের।
তবে তাইওয়ানের নেতারা মানুষের মাস্ক পরার প্রবণতাকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু মাস্কের কার্যকারিতা তারা ব্যাখ্যা করছেন একটু অন্যভাবে। তাইওয়ানের ডিজিটাল মন্ত্রী অড্রে ট্যাং বলেন, "মাস্ক প্রথমত আপনাকে হাত ধুতে অনুপ্রাণিত করবে, দ্বিতীয়ত আপনাকে মুখে হাত দেয়া থেকে থামাবে- এগুলো হচ্ছে মাস্ক পরার মূল উপকারিতা।"
১৯৫০-এর দশক থেকে তাইওয়ানের মানুষ মাস্ক পরে আসছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে মাস্কের চাহিদা। চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেড়ে যায় মাস্কের উৎপাদনও। আগে যেখানে দিনে ২০ লাখ মাস্ক তৈরি হতো, সেখানে ২ কোটি মাস্ক তৈরি হতে লাগলো।
ফার্মেসি ও অন্যান্য দোকানে মাস্ক কেনার জন্য মানুষের এমন লম্বা লাইন লেগে যায় যে লাইনের জনসমাগম থেকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা শুরু করে মানুষ। তাই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, প্রত্যেক এলাকার মাস্কের মজুদের তথ্য জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করা হবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে অড্রে ট্যাংয়ের মন্ত্রণালয় একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। যেখানে প্রত্যেক মাস্ক বিক্রেতা তার মজুদের তথ্য আপডেট করে রাখতে পারবে।
এরপর কাজ শুরু করে তাইওয়ানের হ্যাকিং কমিউনিটি, যাদের সাথে বেশ কয়েকবছর ধরে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে দেশটির সরকার। বিভিন্ন এলাকার মাস্ক বিক্রেতাদের আপডেট করা তথ্য নিয়ে তারা 'মাস্ক ম্যাপ'-এর সিরিজ তৈরি করা শুরু করে। এর ফলে নাগরিকরা জানতে পারতেন তাদের বাসা বা কর্মস্থলের কাছে কোথায় মাস্ক পাবেন তারা। কোন দোকানে কতগুলো মাস্ক আছে, পাওয়া যেতো সেই তথ্যও।
হ্যাকারদের তৈরি ম্যাপগুলো যত জনপ্রিয়তা পেতে থাকে, আরো হ্যাকারদের দল একত্রিত হয়ে সেইসব ম্যাপে আরো ফিচার যোগ করে মানুষের ব্যবহারের জন্য সেগুলো সহজ করে তুলতে থাকে। এখন পর্যন্ত এক কোটির বেশি মানুষ ম্যাপগুলো ব্যবহার করেছে।
অড্রে ট্যাংয়ের মতে, এই প্রকল্পের সাফল্য প্রতিফলিত হয় মানুষের মাস্ক ব্যবহারের মাত্রায়। তাইওয়ানের খুব কম সংখ্যক মানুষই আছে যারা মাস্ক ব্যবহার করেন না। মাস্ক ব্যবহার করার জন্য তাওয়ানের মানুষ একরকম 'সামাজিক চাপ' এর মধ্যে থাকেন।
এই প্রথমবার হ্যাকাররা নিজেদের একটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের ডিজাইনারের রূপে দেখতে পাচ্ছে। তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ তাদের জনগণকে এত বিশ্বাস করে যে, প্রতিদানে জনগণও সরকারকে কখনো কখনো বিশ্বাস করে।
গত ডিসম্বেরের শেষদিকে তাইওয়ানের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একজন 'নেটিজেন' যখন উহানে উদ্ভূত হওয়া সার্সের মত রোগ সম্পর্কে সতর্ক করে পোস্ট দেয়। তার পর তাইওয়ানের মানুষ সেটিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং সরকার মানুষের প্রতিক্রিয়ার হার দেখে বিষয়টিকে আমলে নেয়।
এর কিছুদিন পরপরই জনসংখ্যার বিশেষ বিশেষ অংশকে পরীক্ষা করা হয় এবং তাদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা হয়। এই পদ্ধতি ভাইরাসকে শুরুতেই রুখে দিতে সক্ষম হয় তাইওয়ান।
তাইওয়ান সফলভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকানোর পেছনে আরো কারণ রয়েছে। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে তাইওয়ানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রোগতত্ববিদ উল্লেখ করেন, দেশটির কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের পরিকল্পনা ও অভ্যন্তরীন চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর কোয়ারেন্টিন নীতিমালার পাশাপাশি দ্বীপ দেশটির 'অতি-গণতন্ত্র' ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ।
তিনি মন্তব্য করেন, তাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা মানুষের বিশ্বাস অর্জনে সফল হয়েছে, যার ফলে তাদের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়েছে।
তাইওয়ানে ক্ষমতাসীনরা শুধু যে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া আমলে নেন তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় নাগরিকদের শেয়ার করা 'মিম' এবং ব্যঙ্গাত্মক পোস্টের দিকেও খেয়াল রাখেন তারা। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে পারে সরকার।
এএইচ/
আরও পড়ুন