ঢাকা, বুধবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৪

জওয়ানেরা চীনাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছে : সর্বদলীয় বৈঠকে মোদি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২০, ২০ জুন ২০২০

ভারতের সীমানায় ঢুকে চীনা সেনারা কোনো ছাউনি বা পোস্ট দখল করেনি উল্লেখ করে বিরোধীদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তারা এক ইঞ্চি জমিও কবজা করতে পারেনি। বরং ভারতের জওয়ানেরা আগ্রাসী চীনাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছে।

শুক্রবার লাদাখে চীনা আগ্রাসন নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে মোদি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, চীন যা করেছে, তাতে সারা দেশ আহত, ক্ষুব্ধ। ভারতীয় সেনা জল, স্থল ও অন্তরিক্ষ সব দিক রক্ষা করতে প্রস্তুত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনকে কূটনৈতিক স্তরে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারত শান্তি চায়। কিন্তু সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো পদক্ষেপই নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না।  

তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে সরকার সীমান্তে সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। নিজেদের সব দিক থেকে প্রস্তুত রেখেছে। দেশ আমাদের কাছে সবার আগে। কোনো চাপের কাছে ভারত মাথা নোয়াবে না। যা প্রয়োজন, সব করবে। সেনারা সীমান্ত রক্ষায় পূর্ণ ক্ষমতা রাখে। তাদের সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গোটা দেশ এই সংকটে এক। এই একতা গোটা পৃথিবীর কাছে বার্তাবহ।

বৈঠকে চীনা আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করে কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দল এই সংকটে দৃঢ়ভাবে সরকারের পাশে থাকার কথা জানায়। সমর্থনের কথা জানানো সত্ত্বেও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সরকারের সমালোচনা করেন।

সোনিয়া বলেন, লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে সরকার দেশবাসীকে অন্তত এক মাস অন্ধকারে রেখেছে। এই বৈঠক গত ৫ মে ডাকা উচিত ছিল। কিন্তু বিরোধীদের প্রবল দাবি সত্ত্বেও সরকার আদৌ গা করেনি। এই জাতীয় বিপর্যয়ে দেশ সব সময় দৃঢ়ভাবে সরকারের পাশে থাকে। আছেও। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার বহু কিছু গোপন রেখেছে। বহু বিষয়ে বিরোধীরা অন্ধকারে। যেমন, কোন তারিখে চীন ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকেছে? কবে সরকার তা জানতে পারে? ৫ মে, না তারও আগে? সরকার কি সীমান্ত এলাকার উপগ্রহ চিত্র নিয়মিত পায় না? গোয়েন্দারা কি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করেনি? সরকার গোয়েন্দা ব্যর্থতা স্বীকার করে কি? তিনি আরও বলেন, ৫ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা মাস অযথা নষ্ট হয়েছে। ৬ জুনের পর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে সরাসরি চীনের সঙ্গে কথা বলা সরকারের উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে খামোখা ২০ জনের প্রাণ গেল। সোনিয়া বলেন, সরকার এই আশ্বাস দিক যে হারানো জমি পুনরুদ্ধার হবে। চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় তাদের স্বীকৃত অবস্থানে ফেরত যাবে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, চীনে গণতন্ত্র নেই, ওখানে একনায়কতন্ত্র চলে। ওরা যেটা মনে করবে, সেটাই করতে পারে। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ভারত জিতবে, চীন হারবে। আমরা সরকারের সঙ্গে রয়েছি। পাশাপাশি মমতা আরও বলেছেন, টেলিকম, রেল, বিমানের মতো প্রকল্পগুলোতে চীনদের বাদ দিন।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বলেছেন, চীনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা ভারত। আমরা সবাই একসঙ্গে রয়েছি। ভারতীয় বাজারে বহু চীনা পণ্য রয়েছে। এটা সমস্যা। চিনা পণ্য অধিকাংশই পরিবেশবান্ধব নয়। কেন্দ্রের পাশে আমরা আছি।

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বলেছেন, কোনো সীমান্ত লাগোয়া নির্মাণ কাজ বন্ধ করা যাবে না। ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন বলেছেন, দেশের জন্য আমরা সবাই একসঙ্গে রয়েছি। বিজেডি দলের পিনাকি মিশ্র বলেছেন, চীনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হোক। যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সরকারকে সমর্থন করবে বিজেডি।

এছাড়াও সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতী এবং ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনসহ অনেকে। তবে আমন্ত্রণ পাননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি, আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল এআইএমআইএম।

সম্পূর্ণ বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী মোদী ওই বক্তব্য রাখেন। পাশপাশি চীনা হামলার পর হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদী বলেছেন, বীর সেনাদের ত্যাগ ব্যর্থ হতে দেবে না দেশ। ভারত শান্তি চায়। কিন্তু উস্কানি দিলে পাল্টা জবাব দিতে পারে ভারত।

তবে বৈঠকের আগেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় তিন বাহিনীর সেনা। তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে সীমান্তে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়ত।

বৈঠকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব, তেলেঙ্গানার এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসি আমন্ত্রণ না পাওয়ায় দেশটির রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক হয়েছে।

বৈঠকের শুরুতেই রাজনাথ সিং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতি ও ভারতের প্রস্তুতির কথা জানান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় প্রস্তুত। জয়শঙ্কর কূটনৈতিক তৎপরতার কথা বলেন।

ভিডিও কনফারেন্স মারফত বৈঠক শুরু হয় বিকেল পাঁচটায়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বিজেপির পক্ষে সভাপতি জে পি নাড্ডা। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এনসিপির শরদ পাওয়ার, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতী, সিপিআইয়ের ডি রাজা, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী টিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও, ডিএমকের এম কে স্ট্যালিন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপারসন তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেডি সভাপতি ও ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ও শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জেডিইউ নেতা নীতিশ কুমার। সরকারি সূত্রে বলা হয়, ২০ দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি