নাগরিকদের উপর নজরদারি বাড়াতে চীনের নয়া কৌশল
প্রকাশিত : ০৯:২৯, ২০ জুন ২০২০
করোনা মহামারী শেষ হতে না হতেই চীন তাদের নাগরিকদের উপর নতুন গবেষণা হাতে নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নাগরিকদের উপর নজরদারিতে জিনতত্ত্ব ব্যবহারে সম্মতি দিয়েছেন। সে অনুযায়ী চীনের ৭০ কোটি পুরুষের রক্তের নমুনা নেওয়া শুরু হয়েছে। এই রক্ত নমুনা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারিতে ব্যবহার করবে দেশটি।
এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে দ্য ইকনমিক টাইমসে।
রিপোর্টে জানা যায়, নাগরিকদের উপর নজরদারির জন্য রক্তের নমুনা নিয়ে DNA-ডেটাবেস তৈরির কাজ শুরু করেছে বেইজিং। এই পদ্ধতির সাহায্যে একজনের অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত একাধিক জনকে সাজা দিতে পারবে সরকার।
অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটে প্রকাশিত এক রিপোর্ট এবং দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র কোনও পুরুষের রক্তের নমুনা থেকে তার আত্মীয়ের উপরও নজরদারি চালাতে সক্ষম হবে চীনা প্রশাসন। এই বিষয়ে বেইজিংকে সাহায্য করছে মার্কিন সংস্থা থার্মো ফিশার।
চীনকে নজরদারির যন্ত্রাংশ বিক্রির জন্য ইতোমধ্যেই নিজ দেশে সমালোচিত হয়েছে ওই মার্কিন সংস্থাটি। ম্যাসাচুসেটসের এই সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চীন সফল হলে, এই নজরদারি পদ্ধতিকে ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র আশঙ্কা করছেন বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীরা।
চীনের মানবাধিকার কর্মী মায়া ওয়াং বলেছেন, 'নতুন এই পদ্ধতির সাহায্যে একজনের অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত একাধিক জনকে সাজা দিতে পারবে স্বৈরাচারী সরকার।' তিনি বলেন, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশাসন যুবক থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া কিশোরদেরও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছে।
এই সম্পর্কে মানবাধিকার কর্মীর কাছে চীনের ৩১ বছরের যুবক জিয়াং হাওলিন জানান, 'আমাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, যদি রক্ত দিতে রাজি না হই, তবে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। যার ফলে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব আমি বা আমার পরিবার।'
হঠাৎ এই জিনতত্ত্ব সংগ্রহের কারণ হিসাবে জানা যায়, চীনের অধীনস্থ মঙ্গোলিয়ার এক কুখ্যাত অপরাধীকে খুঁজতে ব্যস্ত ছিল চীনা পুলিশ। প্রায় তিন দশক ধরে ওই ব্যক্তিকে ধরতে ব্যর্থ হয় পুলিশ ও প্রশাসন। দুষ্কৃতির বিরুদ্ধে ১১ জন মহিলাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ৮ বছরের নাবালিকাকেও ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগও ছিল ওই ব্যক্তির উপর। তবে কিছুতেই পুলিশের হাতের নাগালে আসছিল না ওই অভিযুক্ত।
২০১৬ সালের এক ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করে অন্য এক যুবককে। ওই অভিযুক্ত যুবকের DNA পরীক্ষা করে নিজস্ব রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন চীনা
গোয়েন্দারা। এর পরই ২০০৫ সালে এক মহিলাকে ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত ব্যক্তির DNA-র সঙ্গে মিলে যায় ডাকাত ওই অভিযুক্ত যুবকের DNA। এই জিনপদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রায় ৩০ বছর পর নিখোঁজ থাকা অভিযুক্ত গাও চেংগংকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। জেরায় নিজের সব অপরাধ স্বীকার করে নেয় গাও চেংগং। পরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পরই চীনে জাতীয় DNA ডেটাবেস তৈরির বিষয়টি জোরদার হয়ে ওঠে। সেই মতে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ডেটাবেস তৈরিতে সম্মতি দেয় চীনের জনসুরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এএইচ/
আরও পড়ুন