ভারতে আট পুলিশ হত্যার মূলহোতা বিকাশ নিহত
প্রকাশিত : ১৩:৫০, ১০ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৪:০২, ১০ জুলাই ২০২০
ভারতে আট পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় মূলহোতা ও ৬০ মামলার আসামি বিকাশে দুবে নিহত হয়েছে। পুলিশের হাতে আটকের পর পালানোর চেষ্টাকালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় উত্তর প্রদেশের এই শীর্ষ সন্ত্রাসী।
কানপুর পুলিশের বরাত দিয়ে আজ শুক্রবার এনডিটিভি ও জি নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নের একটি মন্দির থেকে গ্রেফতার করে কানপুরে নিয়ে আসা হচ্ছিল বিকাশকে। এ সময় অতি বৃষ্টিতে রাস্তা অনেকটা পিচ্ছিল হয়ে পড়ায় পুলিশের একটি গাড়ি উল্টে যায়। এই সুযোগে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ওই সন্ত্রাসী। পরে পুলিশ তাকে ঘিরে ফেলে আত্মসমর্পণ করতে বলে।
তবে, পুলিশের আহ্বানকে পাত্তা না দিয়ে গুলি করতে থাকে বিকাশ। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে গুরুতর আহত হয় সে। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে জানায় কানপুর পুলিশ।
অন্যদিকে, গাড়ি উল্টে গিয়ে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, বিকাশ দুবের মৃত্যুর বর্ণনায় পুলিশের দেয়া বক্তব্য নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। প্রত্যক্ষদর্শী একজনের বক্তব্য প্রকাশের পর থেকে মূলত এ সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে, আদৌ কি গাড়ি দুর্ঘটনা হয়েছিল?
জি নিউজে দেওয়া সাক্ষাতে আজ শুক্রবার সকালে কানপুরের কাছে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘এদিন সকালে গুলির শব্দই শুনতে পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গাড়ি দুর্ঘটনার কোনও কথা তিনি বলেননি।’
সকালেই দুর্ঘটনার পর সমাজবাদি পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব প্রশ্ন তোলেন বিকাশ দুবের ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে। তিনি বলেন, ‘গাড়ি টপকে যায়নি, গাড়ি দুর্ঘটনার বিষয়টি উত্তর প্রদেশ সরকার অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দেখিয়েছে।’
বিকাশ দুবেকে আদৌ গ্রেফতার করা হয়েছিল, নাকি সে আত্মসমর্পণ করে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
গত শুক্রবার (৩ জুলাই) খুন ও অপহরণসহ ৬০টি মামলায় অভিযুক্ত বিকাশ দুবেকে গ্রেফতার করতে কানপুরের চৌবেপুর এলাকার বিকরু গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। সেই সময়েই পাল্টা আক্রমণে করে ওই মাফিয়া। তার চালানো গুলিতে মৃত্যু হয় এক পুলিশ সুপারসহ ৮ পুলিশ সদস্যের। এরপর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি।
পুলিশ কর্মীদের হত্যার পর থেকে গা ঢাকা দিলেও তার খোঁজে চিরুণি অভিযানে নামে পুলিশ। এমনকি বিকাশের মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৫ লাখ টাকা।
এরপর গত মঙ্গলবার পুলিশ খবর পায়, দিল্লি-মথুরা হাইওয়ের উপর ফরিদাবাদের বাধকাল এলাকার একটি হোটেলে লুকিয়ে আছে বিকাশ দুবে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওইদিন রাতেই সেই হোটেলে হানা দেয় স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) একটি দল। উত্তর প্রদেশ পুলিশের প্রায় ৩০-৩৫ জন অফিসার সাধারণ পোশাকে এই রেড চালায়।
তবে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই সেখান থেকে গা ঢাকা দেয় ওই কুখ্যাত অপরাধী। শেষ পর্যন্ত গতকাল উজ্জয়নের মহাকাল মন্দিরে প্রার্থনা করার জন্যে ওই কুখ্যাত মাফিয়া সেখানে আসলে তখনই পুলিশের জালে ধরা পড়ে সে। তবে পাঁচ দিনের মধ্যে কিভাবে পুলিশকে এড়িয়ে বিকাশ হরিয়ানা থেকে রাজস্থান হয়ে মধ্যপ্রদেশে যেতে পেরেছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
এরপর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়, আদৌ বিকাশকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে নাকি সে নিজেই আত্মসমর্পণ করেছিল।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তা মোহিত আগরওয়াল অবশ্য তার আত্মসমর্পণের জল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমরা তার বেশ কয়েকজন সহযোগীকেই ধরে ফেলেছিলাম এবং কয়েকজনকে গুলি করে মারাও হয়েছিল। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, বিকাশ দুবেও নিজের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল।
তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বিকাশের ৫ সহযোগী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়।
এআই/এমবি
আরও পড়ুন