যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের আপসের সুর
প্রকাশিত : ১১:৩৪, ১১ জুলাই ২০২০
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই
চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈরিতার পারদ যখন প্রতিদিন উঠছে ঠিক তখনই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে চীনের নীতি একই রকম এবং তা বদলায়নি। বরঞ্চ চীন চায় বিশ্বের এই দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যেন সহযোগিতার সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে।
বৃহস্পতিবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া দীর্ঘ বিবৃতি বলা হয়, ১৯৭৯ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে শুরুর পর দুই দেশের সম্পর্ক এতটা খারাপ এবং বিপজ্জনক আর কখনই হয়নি। এই পরিণতির জন্য আমেরিকাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের বর্তমান প্রশাসন চীন বিষয়ে যে কৌশল নিয়েছে তা ‘একগাদা ভ্রান্ত ধারণা এবং মিথ্যার’ ওপর ভিত্তি করে।
ওয়াং ই বলেন, ‘যেটা সত্যি তা হলো চীন কখনই বিশ্ব পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে তার জায়গা নিতে আগ্রহী নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে চীনের নীতি একই রকম এবং তা বদলায়নি। বরঞ্চ চীন চায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যেন সহযোগিতার সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে।’
তিনি বলেন, ‘অমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ঠাণ্ডা মাথায় চীনের ব্যাপারে নিরপেক্ষ, বাস্তবমুখী এবং যৌক্তিক নীতি নেবে। চীন সর্বদা কথা বলতে প্রস্তুত, যদি ওয়াশিংটন সত্যিকার তা
চায়।’
ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার পশ্চিমা কিছু মিত্র দেশ যখন শি জিন পিংয়ের চীনকে ‘চরম উদ্ধত’ এবং উচ্চাভিলাষী বলে তুলে ধরার অব্যাহত চেষ্টা করে চলেছে সে সময় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের আপোষমুলক বক্তব্য কেন- তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে।
হংকং-ভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দি সাউথ চায়না মর্নিং পোষ্টে দেওয়া এক মন্তব্যে সেখানকার চীনা অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সের মার্কিন-চীন সম্পর্কের গবেষক লু শিয়াং বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব বক্তব্য দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে চীন ওয়াশিংটনকে কিছুটা শান্ত করতে চাইছে। চীনের এই বার্তার লক্ষ্য আমেরিকান ভোটার ছাড়াও আমেরিকান নীতি নির্ধারকরাও। তাদেরকে চীন বলতে চাইছে শত্রুতার পারদ না বাড়িয়ে চীনের সাথে সহযোগিতা করলে তাতে আমেরিকার লাভ হবে, আমেরিকার অর্থনৈতিক পুনরুত্থান অনেক সহজ হবে।’
কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, আমেরিকাকে সরিয়ে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হওয়ার খায়েশ চীনের নেই বলে যে বক্তব্য চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন তা মিথ্যা নয়।
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সাল থেকে চীনা নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের সবসময় এই বার্তাই দিয়েছেন। তারা বলেছেন, 'আমরা তোমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নই, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই এবং সেই সাথে সমান মর্যাদা চাই'। আর ওয়াং ই তারই পুনরাবৃত্তিই করেছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ড. আলী রীয়াজ অবশ্য বলছেন, ভোটারদের সামনে চীনকে শত্রু হিসাবে তুলে ধরার প্রয়াস যেমন রয়েছে, তেমনি চীনকে নিয়ে মি. ট্রাম্পের ভীতিও রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জিতিয়ে দিতে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে মি ট্রাম্প গোপনে দেন-দরবার করেছিলেন বলে তারই সাবেক সহযোগী জন বোল্টন তার বইতে যা লিখেছেন তা একবারে ফেলে দেওয়ার মত নয়। সাইবার হ্যাকিংয়ে চীন কতটা দক্ষতা অর্জন করেছে আমেরিকানরা এখন খুব ভালোভাবে তা জানে। নির্বাচনের সময় চীন কী করে তা নিয়ে ট্রাম্পের লোকজনের মধ্যে তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগ রয়েছে।’
ফলে অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করছেন, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তায় পরিস্থিতির কোনই পরিবর্তন হবে না, বরঞ্চ নির্বাচন যত এগুবে হোয়াইট হাউজের ঘনিষ্ঠ লোকজনের মুখ থেকে থেকে তত বেশি চীন বিরোধী যুদ্ধংদেহী কথাবার্তা শোনা যাবে।
অন্যদিকে রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, সিংহভাগ চীনা গবেষক এখন মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক এখন এতটাই জটিল হয়ে পড়েছে যে, নতুন একটি শীতল যুদ্ধ এড়ানোর সম্ভাবনা দিনকে দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তারপরই আসলো চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দীর্ঘ এই বিবৃতি।
সূত্র: বিবিসি
এএইচ/এমবি
আরও পড়ুন