আরব আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের নেতৃত্বে যে নারী
প্রকাশিত : ১০:১৭, ১৫ জুলাই ২০২০
আমিরাতের মহাকাশ অভিযানের রূপকার সারাহ আল-আমিরি
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ আর ভারতের মতো কিছু দেশ, যারা মঙ্গলগ্রহে সফল মহাকাশ অভিযান পাঠাতে পেরেছে। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হতে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম। এ সপ্তাহে মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালাতে তাদের স্যাটেলাইট পাঠাবে। আমিরাতের এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘হোপ মিশন।’ আর এর নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির এক নারী।
মঙ্গল অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম শুনে। তারচেয়েও অবাক করা ঘটনা, আরব দেশের একজন নারী এরকম একটি অভিযানের নেতৃত্বে আছেন।
একসময় মঙ্গল গ্রহে পানি ছিল বলে ধারণা করা হয়, তা কীভাবে আজকের ধূলিধুসর নিস্প্রাণ লাল গ্রহে পরিণত হলো সেটি জানার জন্য বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো এই মিশনের লক্ষ্য। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো একটি ক্ষুদ্র উপসাগরীয় দেশের জন্য এ হবে এক অভাবনীয় সাফল্য। আর এই সাফল্যের পেছনের রূপকার এক নারী। তার নাম সারাহ আল-আমিরি।
সারাহ আল-আমিরি ‘হোপ মিশনের’ বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। একই সঙ্গে তিনি দেশটির এডভান্সড সায়েন্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। এই নবীন বিজ্ঞানী এরই মধ্যে আরব বিশ্বের নারীদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। ‘হোপ মিশন’ পৃথিবী ছেড়ে যখন রওনা হতে চলেছে মঙ্গল অভিমুখে, তখন একই সঙ্গে সবার নজর তার দিকেও।
১৯৮৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাঁর জন্ম। এখন বয়স মাত্র ৩২, কিন্তু মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন একেবারে ছোটবেলা থেকেই। সারাহ আল-আমিরি পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্সে, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব শারজাহতে। তাঁর বরাবরই আগ্রহ ছিল এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। কিন্তু তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোন মহাকাশ কর্মসূচিই ছিল না।
পড়াশোনা শেষে তিনি যোগ দেন এমিরেটস ইনস্টিটিউশন ফর এডভান্সড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে। সেখানে তিনি কাজ করেছেন দুবাইস্যাট-১ এবং দুবাইস্যাট-২ প্রকল্পে। ইউএই’র পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন এরপর। ২০১৬ সালে তাকে এমিরেটস সায়েন্স কাউন্সিলের প্রধান করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের শুরু থেকে এর সঙ্গে জড়িত তিনি। এখন এই মিশনের বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। ২০১৭ সালে তাকে একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এডভান্সড সায়েন্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশ অভিযানের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। এক্ষেত্রে তারা একেবারেই নতুন। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত দেখাতে চাইছে, তাদের দেশের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমন বড় চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা তাদের আছে।
এই প্রকল্প যখন গ্রহণ করা হয় তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার প্রকল্পের টিমকে বলেছিল যে, তারা কোন একটা বিদেশী কোম্পানি থেকে এই স্পেসক্রাফট বা মহাকাশযান কিনতে পারবে না। তাদের নিজেদেরকেই এটি তৈরি করতে হবে।
একারণে প্রজেক্ট টিমকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে যেতে হয়েছিল প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। যুক্তরাষ্ট্র এবং আমিরাতের প্রকৌশলীরা একসঙ্গে কাজ করেছেন। স্যাটেলাইটটি তৈরির বেশিরভাগ কাজ করা হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর ‘ল্যাবরেটরি ফর এটমোসফিয়ারিক এন্ড স্পেস ফিজিক্সে।’ তবে দুবাইর ‘মোহাম্মদ বিন-রশিদ স্পেস সেন্টারেও’ উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত মঙ্গলগ্রহে যে স্যাটেলাইটটি পাঠাচ্ছে, সেটির ওজন ১ দশমিক ৩ টন। জাপানের দুর্গম তানেগাশিমা মহাকাশ বন্দর থেকে রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করা হবে। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই রোবটিক মহাকাশযানটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার গন্তব্যে পৌঁছাবে। ওই একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত তার ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে বলে কথা রয়েছে।
এটি বুধবার উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় এখন উৎক্ষেপণের সময় শুক্রবার পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই অভিযানের রূপকার সারাহ আল-আমিরি এখন তার স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় ক্ষণ গুণছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি খুবই নার্ভাস বোধ করছি। এই অভিযানের জন্য আমরা সাড়ে ছয় বছর ধরে কাজ করেছি। মহাকাশের যে বিশালত্ব, এটিকে জানা এবং বোঝা যেরকম জটিল, সেটা আমাকে মোহিত করেছিল। এই মহাকাশযান নিয়ে আমরা পরীক্ষার পর পরীক্ষা চালিয়েছি, যাতে সব ধরনের পরিস্থিতিতে এটা টিকে থাকে। এখন আমাদের এসব কাজের ফসল এখন একটি লঞ্চপ্যাডে একটি রকেটের ওপর বসে আছে। এটি যাবে এমন এক গ্রহে, যে গ্রহটি আমাদের কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে।”
সূত্র : বিবিসি
এএইচ/এসএ/
আরও পড়ুন