পাঠাওয়ের সহ প্রতিষ্ঠাতা ফাহিমকে হত্যার রহস্য উদঘাটন!
প্রকাশিত : ২২:২৪, ১৭ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ২৩:৪৫, ১৭ জুলাই ২০২০
ফাহিম সালেহ
ফাহিম সালেহ। দেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা। জন্ম ১৯৮৬ সালে। তার পৈত্রিক বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। বাবার নাম সালেহ উদ্দিন। ফাহিমের নানার বাড়ি নোয়াখালী। তার মায়ের নাম রায়হানা। তবে ফাহিমের জন্মস্থান সৌদি আরব। বাবা-মা সৌদি আরবে থাকার সুবাদে সেখানেই জন্ম হয় ফাহিমের।
গত মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) নিউইয়র্কে নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। পুলিশ তার খণ্ডবিখণ্ড দেহ উদ্ধার করে। ইতিমধ্যে তার হত্যাকাণ্ড নিয়ে তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল। ফাহিম সালেহ হত্যার রহস্যের সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও প্রকাশ পায়নি। তবে একাধিক বিষয়, বিশেষ করে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন নাকি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র নাকি ব্যক্তিগত কারণে ফাহিমকে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে মাঠে নেমেছে মার্কিন পুলিশ।
ফাহিমকে হত্যার ধরন দেখে মনে হয় শুধু হত্যার জন্য নয়, মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছে হত্যাকারীরা। শুধু হত্যার জন্য হলে শুধু গুলি করেই মারতে পারতো। তা না করে তার লাশ ক্ষত-বিক্ষত করা হয়।
এ ঘটনায় ইতিমধ্যে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তির নাম টাইরেস ডেভন হাসপিল।
পুলিশের ধারণা, ফাহিমকে হত্যার পেছনে ডেভনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং অর্থ আত্মসাৎ করার জন্যই ফাহিমকে হত্যা করা হয়।
পুলিশের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ডেভন ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ফাহিমের কাছ থেকে কয়েক হাজার ডলার আত্মসাৎ করার পরে তাকে হত্যা করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফাহিম একটা সময় জানতে পারেন ডেভন তার কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ডেভনকে সেই অর্থ ফেরত দিতে বলেন ফাহিম। এরপরই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও ফাহিমকে হত্যার পেছনে নাইজেরিয়ার শত্রুদের সন্দেহ করা হচ্ছে। মৃত্যুর আগে ফাহিমের বিরুদ্ধে নিউ জার্সির এক কারাকর্মীর করা মামলা চলমান ছিল। ফাহিমের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে করা মামলায় ক্রিক ইডি নামে ওই ব্যক্তি প্রতারণার অভিযোগ আনেন।
ওই ব্যক্তির ভাষ্য, ফাহিমের তৈরি প্র্যাঙ্কডায়াল অ্যাপ ব্যবহারের সময় তিনি ভেবেছিলেন, তিনি যা করছেন, তা বৈধ। যদিও অ্যাপটি ব্যবহার করে ওই ব্যক্তি গোপনে অন্যদের কথা রেকর্ড করেছিলেন।
এদিকে এনওয়াইপিডি সূত্র জানিয়েছে, বড় ধরনের কোনো ব্যবসায়িক লেনদেনের জেরেই ফাহিম সালেহকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তদন্ত করে দেশটির গোয়েন্দারা জানিয়েছে, পেশাদার খুনির হাতেই খুন হন রাইড ফাহিম সালেহ।
তাদের ধারণা, খুনির পরনে ছিল কালো পোশাক, মুখে ছিল কালো মাস্কও। ফাহিম সালেহর পিছু নিয়েই তিনি লিফটে চড়ে ম্যানহাটানের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করেন।
আর তদন্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্য, ফাহিমকে হত্যার পর টুকরো টুকরো মরদেহ সুটকেসে ভরে কোথাও সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল খুনির, যাতে তাকে নিখোঁজ উল্লেখ করা যায়। তবে খুনির কাজ শেষ হওয়ার আগেই ওই অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার জন্য কেউ নিচ থেকে কলিং বেল দিয়েছিলেন; সে শব্দেই ঘাতক সবকিছু ফেলে ভবনের পেছনের দরজা ও সিঁড়ি ব্যবহার করে পালিয়ে যান।
পুরো একদিন ফাহিমের সাড়া না পেয়ে মঙ্গলবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলেন তার বোন। তিনিই প্রথম ব্যাগে ভরা ফাহিমের খণ্ডিত দেহ দেখতে পান এবং পুলিশে খবর দেন।
ফাহিম বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্ক থেকে দেড়শ’ মাইল দূরে থাকতেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় বিশ কোটি টাকা (২২ লাখ ডলার) দিয়ে কিনেন একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। নিউইয়র্কের অন্যতম অভিজাত এলাকা ম্যানহাটনে নিজের টাকা দিয়েই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সেই ফ্ল্যাটেই খুন হতে হলো ফাহিম সালেহকে।
এমবি//
আরও পড়ুন