ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

আফগানিস্তানে করোনায় ভরসা ‘সিদ্দিকির অক্সিজেন’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৯, ২৫ জুলাই ২০২০

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আফগানিস্তানেও করোনার থাবা প্রবল হচ্ছে। করোনা হাসপাতালগুলোতে সঙ্কট দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের। এমনই সময় এগিয়ে এসেছেন একজন। নাম তার নজিবুল্লাহ সিদ্দিকি। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব-অসহায় রোগীদের একমাত্র ভরসা তিনি। আফগানিস্তানের ছয়টি অক্সিজেন ফ্যাক্টরির মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী মালিক এই সিদ্দিকি। 

সবাই যেখানে ব্যবসার মোহে অন্ধ, সেখানে নজিবুল্লাহ আলো ছড়াচ্ছেন মনুষ্যত্বের। প্রতিদিন বিনা মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিচ্ছেন শত শত করোনা রোগীকে। হাসপাতালেও সিলিন্ডার পাঠাচ্ছেন নামমাত্র মূল্যে। আর এই মানবতার জন্য সেখানে মুখে মুখে তার নাম। অনেকেই খুশি হয়ে বলছেন জীবনের আরেক নাম ‘সিদ্দিকির অক্সিজেন’। ছোট্ট এ কথাটিই এখন মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো কাবুলে। শুধু কাবুলই নয়, পুরো আফগানিস্তানে।

জানা গেছে, ৭ বছর আগেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছিলেন নজিবুল্লাহ। হাসপাতালগুলোর সঙ্গে চুক্তি নবায়নে সমস্যা হওয়ায় ২০১৩ সালে নিজের ফ্যাক্টরিটি বন্ধ করে দেন তিনি। কিন্তু করোনা মহামারীর মধ্যে দেশজুড়ে অক্সিজেন ঘাটতির বিষয়টি খেয়াল করেন তিনি। তার মনে হয়, পুরনো ফ্যাক্টরিটি চালু করলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। যেই কথা সেই কাজ। খুলে ফেলেন ফ্যাক্টরি। শুরু করেন উৎপাদন। চলছে পুরোদমে। নিজের কারখানায় তৈরি করা সিলিন্ডারে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করছেন রোগীদের কাছে। ফ্যাক্টরির সামনে প্রতিদিন লাইন দিচ্ছে শত শত মানুষ।

নিজের জনহিতৈষী উদ্যোগ সম্পর্কে নজিবুল্লাহ বলেন, ‘একদিন দেখলাম এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর জন্য কাঁদছে। শুধু অক্সিজেনের অভাবেই করোনায় মারা গেছে ওই ব্যক্তির স্ত্রী। তখনই ফ্যাক্টরিটি ফের চালু করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’ 

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে মেডিকেল অক্সিজেনের বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে আফগানিস্তান। অতিরিক্ত প্রয়োজনের সময় বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু সীমান্ত বন্ধ থাকায় বেশ কিছুদিন অক্সিজেন আমদানি থমকে আছে। ঘাটতির সঙ্গে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে এর দাম এখন আকাশচুম্বী। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে অক্সিজেনের একটি নতুন সিলিন্ডারের দাম এখন প্রায় ২৫০ ডলার। আর পুরনো সিলিন্ডার ভরতে খরচ হয় অন্তত ২৫ ডলার, যা আগের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ। দাম বাড়ানোর জন্য খুচরা বিক্রেতাদের দায়ী করছে বেশিরভাগ মানুষ। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা।

উৎপাদন ও সরবরাহে সহযোগিতার জন্য ১২ জন লোক নিয়োগ দিয়েছেন নজিবুল্লাহ। নিজেও অস্থায়ীভাবে এখন ফ্যাক্টরিতেই থাকছেন, যাতে মানুষের জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া দিতে পারেন। 

নজিবুল্লাহ বলেন, ‘বাড়িতে গেলেই আমি উদ্বেগ্ন হয়ে পড়ি। কেউ হয়তো খুব দরকারে গভীর রাতে অক্সিজেন নিতে এলো আর আমাকে পেল না। তখন কী অবস্থা হবে।’ 

তার ফ্যাক্টরিটি এখন প্রতিদিন গরিব রোগীদের জন্য ২০০-৩০০টি সিলিন্ডার বিনা মূল্যে ভরে দেয়। হাসপাতাল ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য ভরা হয় প্রায় ৭০০টি বড় সিলিন্ডার। সিলিন্ডারপ্রতি দাম নেয়া হয় মাত্র ৩.৮০ ডলার। এটা বর্তমান বাজারদরের কয়েকগুণ কম। তবে এতে তার উৎপাদন খরচ উঠে আসে। বিনা মূল্যে অক্সিজেন পেয়ে কাবুলবাসীও খুব খুশি। 
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি